পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ বন্ধ, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ হারানোর পর হিলারি ক্লিনটনকে প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করতে প্ররোচিত করা, গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, আয়কর না দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তোলা অভিযোগের জবাব দিয়েছে ইউনূস সেন্টার। সুইডেনের স্টকহোম সিটি কনফারেন্স সেন্টারে গত ১৫ জুন প্রবাসীদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার ইউনূস সেন্টার প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ওই বক্তব্যকে ‘অসত্য’ দাবি করে সাতটি অভিযোগের জবাব দিয়েছে।
অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘অসত্য অভিযোগগুলো এর আগেও তোলা হয়েছে এবং এগুলোর জবাবও প্রতিবারই দেওয়া হয়েছে। আমরা আবারও এগুলোর জবাব দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রীর তোলা করা ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগের জবাবে ইউনূস সেন্টার জানায়, অধ্যাপক ইউনূসের নিকট কর বিভাগের কোনও বকেয়া করও নেই। ড. ইউনূস বরাবরই তার কর পুরোপুরি ও সময়মতো পরিশোধ করেন। তার আয় ও কর সংক্রান্ত সব তথ্য কর কর্তৃপক্ষের নিকট রয়েছে।
অতিরিক্ত আয়কর দেওয়ার একটি বিষয় আদালতে বিচারাধীন জানিয়ে সেন্টারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ‘এ বিষয়ে কোনও তথ্য প্রচার আইনের দৃষ্টিতে দণ্ডনীয়। সরকার যে কেবল এ সম্পর্কিত তথ্য পত্র-পত্রিকায় প্রচারই করছে না, বেশ অবমাননাকরভাবে কাজটি করা হচ্ছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, সরকার প্রধান নিজেই এই অসত্য তথ্যগুলো ছড়াচ্ছেন। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ পুরোপুরি অসত্য।’
ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে থেকে গরীবের টাকা সরিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর এমন অভিযোগকে ‘অত্যন্ত ভয়ঙ্কর’ উল্লেখ করে ইউনূস সেন্টার বলে, ‘অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাৎসরিক পরিদর্শন, নিরীক্ষা ও বিভিন্ন ধরনের পরিবীক্ষণে এর কিছুই ধরা পড়লো না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের অসমর্থিত ও অবমাননাকর দাবি দেশের একজন নাগরিকের সম্মানহানির নামান্তর।’
গ্রামীণ ফোনের ব্যবসা ও লাভের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্ক্তব্যকে ‘প্রমাণ ছাড়া কথা’ জানিয়ে ইউনূস সেন্টার বলে, ‘ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে তহবিল তছরূপের জন্য কখনও কোনও মামলারও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কিন্তু অভিযোগগুলো বারবারই করা হচ্ছে। প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ফোনের শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ পুরোপুরি বানোয়াট। বাস্তবের সঙ্গে এই কাহিনীর কোনও সম্পর্ক নেই।’
আইন ভঙ্গ করে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে থাকার অভিযোগ বিষয়ে ইউনূস সেন্টার জানায়, ‘প্রফেসর ইউনূস কখনোই গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ ধরে রাখার জন্য উৎসুক ছিলেন না। তিনি যতোবারই এই পদ ছেড়ে দিতে চাইছিলেন, প্রতিবারই পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা তাকে ব্যাংক ছেড়ে চলে না যেতে অনুরোধ করছিলেন। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক অবসরে যাবার বয়সের প্রশ্ন তুলে প্রফেসর ইউনূসকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেয়। তখন প্রফেসর ইউনূস হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। পরে তিনি আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে অবিলম্বে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। প্রফেসর ইউনূস কখনোই গ্রামীণ ব্যাংকের কোনও নিয়ম ভঙ্গ করেননি।’
হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করানোর বিষয়ে সেন্টারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘প্রফেসর ইউনূস কখনোই হিলারী ক্লিনটনকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট টেলিফোন করাননি। হিলারী ক্লিনটন প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে থাকলে তা তিনি নিজে থেকেই করেছেন।’
বিদেশে টাকা পাঠানো, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে টাকা দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘প্রফেসর ইউনূস কখনোই দেশের বাইরে বিনিয়োগ করতে টাকা পাঠান না। বরং তিনি টেলিনর, ইন্টেল করপোরেশন, ড্যানোন, ভেওলিয়া, ইউনিক্লো, বিএএসএফ, ইউগ্লেনার মতো বিশ্বখ্যাত কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে এনেছেন।’
পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণ বন্ধ, দুর্নীতির অভিযোগ আনার পেছনেও ইউনূসের হাত থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউনূস সেন্টার বলে, ‘ড. ইউনূস পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির সম্ভাবনা বিষয়ে প্রকাশ্যে বা ব্যক্তিগতভাবে কখনও কারও কাছে কোনও বিবৃতি দেননি। সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তৈরিতে তিনি কখনোই যুক্ত ছিলেন না। এই কল্পিত কাহিনীগুলো বিশ্বাসযোগ্য করতে বারবার বলা হচ্ছে।’
এছাড়া, কোনও কোনও পত্রিকায় ‘সিনেটর গ্র্যাসলি কর্তৃক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারনসকে লেখা সাম্প্রতিক একটি চিঠিতে প্রফেসর ইউনূস কর্তৃক ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে দেওয়া অনুদান নিয়ে প্রশ্ন উঠার’ সংবাদ বিষয়ে ইউনূস সেন্টার জানায়, এ তথ্য সঠিক নয়। মার্কিন সিনেটের জুডিশিয়ারি কমিটি এ বিষয়ে কোনও তদন্তের সিদ্ধান্ত নিলে ইউনূস সেন্টার তাকে স্বাগত জানাবে।
/এমও/