X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফরহাদ হত্যার পরিকল্পনাকারী রমজান ‘আশিক-মেহেদী কোম্পানি’র ম্যানেজার

শেখ জাহাঙ্গীর আলম
১৫ জুলাই ২০১৮, ০১:১১আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৮, ০১:২৫

নিহত ফরহাদ আলী রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত সন্ত্রাসী রমজান। তার এসব অপকর্মে বাধা ছিল বাড্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ আলী। এলাকায় ডিস ব্যবসা ও অটোরিকশা স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে তাদের পথের কাঁটা ফরহাদকে হত্যার পরিকল্পনা করে সন্ত্রাসী রমজান। পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, এই রজমান হলো— বিদেশে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘আশিক-মেহেদী কোম্পানি’র ম্যানেজার।

নিহতের পরিবার বলছে, ছয়-সাত বছর আগে থেকে রমজান এলাকায় চাঁদাবাজি শুরু করে। ফরহাদ তাকে এসব ছেড়ে দিতে বলতেন। এরপরও রমজান ও তার সহযোগিরা চাঁদাবাজি চালিয়ে যেতে থাকলে ফরহাদ এর  প্রতিবাদ করতে থাকেন। ফলে ফরহাদ এবং রমজানের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়। 

পুলিশের সূত্র মতে, রমজান মূলত সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘আশিক-মেহেদী কোম্পানি’র ম্যানেজার। দেশের বাইরেও এ গ্রুপের সন্ত্রাসী রয়েছে। এই গ্রুপের ‘বাংলাদেশে সামরিক কমান্ডার’ ছিল অমিত। তার নিয়ন্ত্রণে ছিল বেশকিছু ভাড়াটে খুনি ও শ্যুটার। এসব শ্যুটারদের প্রতিমাসে একেক জনকে ১৫ থেকে ২০ জাহার টাকা করে বেতন দেওয়া হতো।

পুলিশ জানায়, বিদেশে বসে শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদী ওরফে কলিন্স ও আশিক বাংলাদেশে তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য বড় বড় ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি করে থাকে। এসব কাজে কেউ যদি তাদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়, তবে নিজেদের বেতনভুক্ত কিলারদের দিয়ে তাকে হত্যা করে। বিদেশে থাকা আশিক-মেহেদী কোম্পানি গ্রুপের নির্দেশনায় আওয়ামী লীগ নেতা ফরহার আলীকে হত্যার পরিকল্পনা করে সন্ত্রাসী রমজান।

গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগের (উত্তর) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাজাহান সাজু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই গ্রুপে বাংলাদেশে সামরিক কমান্ডারের দায়িত্বে ছিল সন্ত্রাসী অমিত। সে প্রতিমাসে ১৫/২০ হাজার টাকা করে বেতন দিয়ে  কিলারদের নিয়ন্ত্রণে রাখতো। নির্দেশনা অনুযায়ী এই কিলাররা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে।     

গোয়েন্দা হেফাজতে ফরহাদ হত্যা মামলার পাঁচ আসামি প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুন উত্তর বাড্ডার আলীর মোড় এলাকায় বায়তুস সালাম জামে মসজিদের সামনে বাড্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলীকে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা হত্যা করে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দয়ের করে তার পরিবার। গত ৪ জুলাই রাতে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ফরহাদ হত্যার সঙ্গে জড়িত নূর ইসলাম ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিত নিহত হয়।

এরপর ১০ জুলাই এই হত্যা মামলার আসামি জহিরুল ইসলাম ওরফে সুজনকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে তার দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১৩ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান ও মিরপুরের শাহআলী থানা এলাকা থেকে এই মামলার  আরও  পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি-উত্তর)। তারা হলো— মো. জাকির হোসেন, মো. আরিফ মিয়া, মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে অনির, মো. বদরুল হুদা ওরফে সৌরভ ও মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে রনি। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি পিস্তল, চারটি ম্যাগাজিন ও ১২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ফরহাদ আলীর বড় ছেলে আবিদ হাসান বাপ্পি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হত্যাকারী এই রমজান ও সুজন ছোটবেলা থেকে আমার বাবারটা খেয়ে বড় হয়েছে। এলাকায় ওদের চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণেই আমার বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করে সন্ত্রাসী রমজান।’

তিনি বলেন, ‘রমজান ও সুজনের পরিবার আমাদের পাশের বাড়িতে ভাড়া থাকতো। হঠাৎ একদিন ওদের বাড়িতে আগুন লেগে যায়, পুরো বাড়ি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তখন রমজানের বয়স ১৩ আর সুজনের বয়স সাত বছর। এই ঘটনার পর থেকে রমজানের পরিবারকে নানাভাবে সাহায্য-সহগযোগিতা করতো আমার বাবা। ’

বাপ্পি আরও বলেন, ‘আমার বাবা ডিসের ব্যবসা করতো। রমজানরা বাবার কাছ থেকেও চাঁদা নিতে চাইতো। কিন্তু বাবা দিতেন না এবং অন্যদেরও দিতে না করতেন। হয়তো এই কারণে ক্ষেপে গিয়ে রমজান আমার বাবাকে হত্যা করেছে। আমি খুনিদের কঠোর শাস্তি চাই।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আশিক ও মেহেদী কোম্পানির নির্দেশেই ফরহাদ আলী হত্যার পরিকল্পনা করে সন্ত্রাসী রমজান। এরপর সে হত্যার দায়িত্ব দেয় তার আপন ছোট ভাই সুজন এবং তার সহযোগী জাকির ও আরিফকে। ঘটনার কয়েকদিন আগে রমজান ভারতে চলে যায়। এই কিলিং মিশনে ছয় ভাড়াটে কিলারসহ অংশ নেয় ১০ জন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে গুলি করে তিন ভাড়াটে কিলার। দু’জনকে রাখা হয় ব্যাকআপ হিসেবে। বাকিদের দায়িত্ব ছিল ফরহাদকে নজরদারিতে রেখে ভাড়াটে কিলারদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছে, রাজধানীর অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করছে বিদেশে থাকা ‘আশিক-মেহেদী কোম্পানি’ নামে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। বিদেশে বসে রীতিমতো ‘কোম্পানি’ খুলে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও চুক্তিতে মানুষ হত্যা করছে তারা।  

গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘দেশের ভেতরে অস্থিরতা তৈরি করতেই এই গ্যাং-টি রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। বিদেশে বসে তারা রাজধানীর  শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও ইন্ডাস্ট্রির মালিকদের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করছে। তারা শিগগিরই দেশে আসছে বলেও হুমকি দিচ্ছে।’

তিনি বলেন,‘আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, এই গ্রুপটি ইতোমধ্যে একজন ব্যবসায়ীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তারা গ্রেফতার হওয়ার কারণে সেটি আর সম্ভব হয়নি।’ সন্ত্রাসী রমজান বর্তমানে ভারতে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন  বলেন, ‘বিদেশে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা কঠিন হলেও, তাদের নেটওয়ার্কের যারা দেশে রয়েছে, আমরা তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।’

 

 

/এসজেএ/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েলের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেবে হামাস, আশা যুক্তরাষ্ট্রের
ইসরায়েলের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেবে হামাস, আশা যুক্তরাষ্ট্রের
রাজশাহীতে তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে খামারিরা
রাজশাহীতে তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে খামারিরা
সিগারেট বাকি না দেওয়ায় দোকানিকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ
সিগারেট বাকি না দেওয়ায় দোকানিকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চার কর্মকর্তা নিহত
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চার কর্মকর্তা নিহত
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে