X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার জঙ্গিদের কাউন্সেলিং ও পুনর্বাসনে নামছে পুলিশ

জামাল উদ্দিন
১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১০:০২আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৪৪

পুলিশের হাতে গ্রেফতার পাঁচ জেএমবি সদস্য

জঙ্গিদের কাউন্সেলিং ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। সহিংস কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ও বিভিন্ন ঘটনায় আটক এবং সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গিদের কাউন্সেলিং করা হবে। কাউন্সেলিং ও সাজাভোগ শেষে তাদের পুনর্বাসনেরও উদ্যোগ রয়েছে পুলিশের। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন করে চরমপন্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। না হয় তারা আবারও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

যে কারণে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনের কাজ ত্বরান্বিত করতে একটি ‘প্রতিরোধ কেন্দ্র’ স্থাপন করে সেখানে জঙ্গিদের মানসিকতা পরিবর্তনে কাজ করবে তারা।

জঙ্গি দমনে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় জঙ্গিদের কাউন্সেলিং করলে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কার্যকর ফলাফল আসতে পারে। তাছাড়া, সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গিদের সাজা ভোগের পর উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে তাদেরকে সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনারও প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, শুধুমাত্র অভিযান চালিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূল সম্ভব নয়। তারা বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল। মধ্যপন্থী ইসলামী সংস্কৃতির দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সহনশীলতা ও সকল ধর্মের সহাবস্থানের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র নজির স্থাপন করেছে। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়া এই স্বাতন্ত্র্যবোধ এ অঞ্চলের জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু তথাকথিত কিছু চরমপন্থী জঙ্গি সংগঠনের সহিংসতা ও হানাহানির ফলে সেই স্বাতন্ত্র্যবোধ এখন হুমকির সম্মুখীন। বিভিন্ন সময়ে দেশে জঙ্গি হামলা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংগঠিত হয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা সমাজের তরুণ সমাজকে সহিংস কার্যকলাপে উত্তেজিত করার জন্য ধর্মের অসম্পূর্ণ ও অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়। যে কারণে সরকার সন্ত্রাসবাদ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধের জন্য একটি বিশেষ ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছে। এই ইউনিট সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধে প্রচুর কাজ করছে। পুলিশের এ ইউনিট শক্তিশালী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়তে সরকার সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় জঙ্গিদের ডি-র‌্যাডিকালাইজেশনের (চরমপন্থা থেকে ফিরিয়ে আনা) কার্যক্রমের মধ্যে সামাজিকভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম অন্যতম। প্রতিরোধ কেন্দ্রের জন্য রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ১৩ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। যেখান থেকে এসব কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পুনর্বাসনের জন্য ট্রেনিং ওয়ার্কশপ ও সেমিনার করা হবে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন তদন্তকেন্দ্রের জন্য বিভিন্ন ধরণের ২৭ সেট যন্ত্রপাতি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনা হবে। এছাড়াও এই কেন্দ্রের জন্য প্রিজন ভ্যান, এক্সপ্লোসিভ অর্ডানেন্স ডিসপোজাল ভ্যান ও আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ারসহ (এপিসি) বেশ কিছু যানবাহনসহ ও আনুসাঙ্গিক সরঞ্জাম কেনা হবে।

পুলিশ সদর দফতরের ইন্টেলিজেন্স উইং ল’ফুল ইন্টারসেপশন সেলের (এলআইসি) প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম চলমান প্রক্রিয়া। পাশাপাশি জঙ্গিদের চরমপন্থা থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য কাউন্সিলিংয়ের কাজও করা হবে। এটাতে অনেকগুলো পেইজ আছে। তবে যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে সেটা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কাজ শুরু করতে আরও অনেকগুলো ধাপ পার হতে হবে।

পুলিশের উদ্যোগে কাউন্সেলিং ও পুনর্বাসন জঙ্গি দমনে কোনও ধরনের সুফল পাওয়া যাবে কিনা জানতে চাইলে রিজিওনাল অ্যান্টি টেররিস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  কাউন্সেলিং বা মোটিভেশনতো জাতিগতভাবেই দরকার। সকল মানুষের জন্য দরকার। বিশেষ করে ধর্মান্ধতা, উগ্রবাদিতায় যারা জড়িত তারাতো অন্ধত্বের মধ্যে আছে। না বুঝে করছে এসব। সুতরাং তাদেরকে বোঝাবার জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দায়িত্ব অনেক রকম। তারমধ্যে কাউন্সেলিং বা মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম, এটা ঠিক আছে। কিন্তু শুধু মোটিভেশন দিয়ে কাজ হবে না। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে শক্তভাবে আইনগত ব্যবস্থাও নিতে হবে। আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অনেক জঙ্গি আছে যারা জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। একাধিকবার ধরা পড়েছে। জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও একই কাজে জড়িয়ে পড়েছে। তারা যাতে ছাড়া না পায় সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তারা এতই অন্ধ যে তারা আদালত ও পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে বলছে, তারা যা করেছে ঠিক করেছে। তারা অস্বীকার করেনি যে আমরা এটা করিনি। তারা বলেছে এটাই তাদের কাজ। এটা আল্লাহর হুকুম। যারা তাদের এ পথে নিয়ে এসেছে তারা দীর্ঘ মোটিভেশনের মাধ্যমেই করেছে। সুসংগঠিত একটি রাজনৈতিক শক্তি এর পেছনে রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। তাই মোটিভেশন দরকার। দ্বিমত করছি না। কিন্তু মোটিভেশনের পাশাপাশি তাদের কঠোর শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। না হয় এটা লোক দেখানো হবে। সরকারের অর্থের শ্রাদ্ধ হবে। কোনও কাজে আসবে না। শুধু পুলিশ কিংবা সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে মোটিভেশন হবে না।

 

/টিএন/ আপ-এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে খামারিরা
রাজশাহীতে তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে খামারিরা
বাকি না দেওয়ায় দোকানিকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ
বাকি না দেওয়ায় দোকানিকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চার কর্মকর্তা নিহত
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চার কর্মকর্তা নিহত
ঢাকা কর কমিশনারের কার্যালয়ে চাকরির সুযোগ
ঢাকা কর কমিশনারের কার্যালয়ে চাকরির সুযোগ
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে