X
বুধবার, ০১ মে ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পরীক্ষা দিতে না দেওয়ায় ভিকারুননিসা শিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ২৩:০২আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ২৩:৩৯


অরিত্রি অধিকারী। ভিকারুননেসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী আজ অভিমানে আত্মহত্যা করেছেন। (ছবি: ফোকাস বাংলা) ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে না দেওয়ায় নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত ওই শিক্ষার্থীর নাম অরিত্রি অধিকারী (১৫)। সে পরীক্ষার সময় মোবাইল ব্যবহার করে অসদুপায় অবলম্বন করেছিল বলে প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল জানিয়েছেন।

সোমবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শান্তি নগরের ২৩/২৪ বাসার একটি কক্ষ থেকে ওই শিক্ষিার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর মৃতের পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। ভিকারুননেসা নূন স্কুলের বেইলি রোড শাখার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল অরিত্রি অধিকারী।

অরিত্রির বাবা দিলীপ অধিকারী জানান, বড় মেয়ে অরিত্রি অধিকারী, ছোট মেয়ে ঐন্দ্রীলা অধিকারী ও স্ত্রী বিউটি অধিকারীকে নিয়ে ২৩/২৪ শান্তিনগর থাকেন তিনি। তাদের গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদর। তিনি কাস্টমসের সি অ্যান্ড এফ এর ব্যবসা করেন। ছোট মেয়ে ঐন্দ্রীলা অধিকারীও ভিকারুননেসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থী।

দিলীপ অধিকারী জানান, অরিত্রির বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রবিবার (২ ডিসেম্বর) সকালে পরীক্ষার বিষয় ছিল ইতিহাস। শিক্ষার্থীদের স্কুলে মোবাইল নেওয়া নিষেধ। তবে ওইদিন সকালে পরীক্ষা দিতে অরিত্রি মোবাইল ফোন নিয়ে স্কুলে যায়। শিক্ষকরা সেটি দেখে ফেলেন। এরপর কর্তব্যরত শিক্ষক তাকে পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করেন। সে পরীক্ষা দিতে চাইলে শিক্ষকরা তাকে তার অভিভাবককে ডেকে নিয়ে আসতে বলেন। অরিত্রি তখন বিষয়টি তার বাবা–মাকে জানায়।

সোমবার অরিত্রির বাবা ও মা স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, পরীক্ষার হলে মোবাইল ব্যবহার করায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না। সে নকল করেছে। এমনকি তাকে স্কুল থেকেও টিসি দেওয়া হবে বলে জানায় শিক্ষকরা। এ সময় প্রিন্সিপালকে তারা টিসি না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের কোনও কথা না শুনে অরিত্রিকে স্কুলে রাখা যাবে না বলে জানিয়ে দেয় প্রিন্সিপাল।

দিলীপ অধিকারী আরও জানান, স্কুল থেকে বের হয়ে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্ত্রী ও মেয়েকে বাসায় নামিয়ে দেই। তাদের বাসায় রেখে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে তদবির শুরু করি। হঠাৎ বাসা থেকে ফোন আসে অরিত্রি রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে। তখনই বাসায় গিয়ে দরজা ভাঙলে অরিত্রিকে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে ইসলামী হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় ঢামেক মর্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তার স্ত্রী ও ছোট মেয়েও কাদছিলো। খবর পেয়ে মর্গে ছুটে আসেন স্বজনরা।

ঢামেক মর্গে অরিত্রির এক স্বজন জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অরিত্রির বাবা-মা অনেক অনুরোধ করিছিলেন। কিন্তু প্রিন্সিপাল কোনও কথাই শোনেননি। তিনি মৌখিকভাবে অরিত্রির টিসির কথা জানিয়ে দেন। আর আজ আনুষ্ঠানিকভাবে টিসি দেওয়ার কথা বলেন।

ওই স্বজন আরও বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক অরিত্রির বাবার অনুরোধ তো রাখেনইনি বরং তাকে অনেক অপমান করেছেন। অপমান সইতে না পেরে বাবা দিলীপ অধিকারী সেখানে কান্না করে দেন। অরিত্রি এটি দেখে ফেলে। আর এসবের কারণে রাগ-ক্ষোভে সে আত্মহত্যা করেছে।’

কাঁদতে কাঁদতে দীলিপ অধিকারী বলেন, ‘অরিত্রিকে টিসি না দিতে আমি এবং তার মা স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। অরিত্রিকে আরেকবার সুযোগ দিলে হয়তো আমার মেয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেত না!’

এদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় প্রিন্সিপাল (ভারপ্রাপ্ত) নাজনীন ফেরদাউস ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে অরিত্রির পরিবারকে শান্তনা দিতে যান। সেখানে অরিত্রির উত্তেজিত স্বজনরা চড়াও হন। এসময় টিসি দেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

ঘটনার বিষয়ে নাজনীন ফেরদাউসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা নিষেধ। ওই শিক্ষার্থী মোবাইলে পুরো বইয়ের ছবি তুলে নিয়ে এসেছে। এরপর পরীক্ষার হলে দেখে দেখে লেখা শুরু করেছিল। আমাদের কর্তব্যরত শিক্ষক তা দেখে ধরেছেন। কেউ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করলে তাকে বহিষ্কার করা সরকারি নিয়ম। শিক্ষক তাই করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘অরিত্রিকে ওই দিন (রবিবার) পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করে বলা হয়েছে, তার অভিভাবকদের নিয়ে আসতে। এরপর সোমবার শিক্ষার্থী তার অভিভাবকদের নিয়ে আসে। আমি তাদের বিষয়টি বলি। পরীক্ষা থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়ে দেই। পরবর্তীতে কী করা যায়, তা দেখবো। এরপর বিকালে শুনলাম মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে।’

টিসি দেওয়ার বিষয় তিনি বলেন, ‘টিসি দেওয়া হয়নি। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া থেকে তাকে মৌখিকভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কোনও টিসি দেওয়া হয়নি।’

প্রিন্সিপাল বলেন, ‘আমি ঢামেক হাসপাতালের মর্গে গিয়েছিলাম শিক্ষার্থীর পরিবারকে শান্তনা দিতে, কিন্তু সেখানে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। আমি নাকি হত্যা করেছি? আমি গাড়ি থেকে নামতেই পারিনি। পরবর্তীতে আমি চলে এসেছি।’

 

 

/এআরআর/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মন্ত্রী-এমপি’র আত্মীয়দের নিয়ে আ.লীগ কী ‘ইউটার্ন’ নিচ্ছে!
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপি’র আত্মীয়দের নিয়ে আ.লীগ কী ‘ইউটার্ন’ নিচ্ছে!
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
বরগুনায় দুই সাংবাদিকসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা
বরগুনায় দুই সাংবাদিকসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা
ভিনিসিয়ুসের জোড়ায় প্রথম লেগে বায়ার্নকে জিততে দেয়নি রিয়াল
চ্যাম্পিয়নস লিগ, সেমিফাইনালভিনিসিয়ুসের জোড়ায় প্রথম লেগে বায়ার্নকে জিততে দেয়নি রিয়াল
সর্বাধিক পঠিত
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস