পৃথিবীর অনেক দেশেই এমআইসিএস (মিনিমালি ইনভাসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি) করা হয়। কাটাছেঁড়া ছাড়া হার্টের এই অস্ত্রোপচার দেশের সরকারি হাসপাতালে করার স্বপ্ন দেখতেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও আবাসিক সার্জন ডা. আশ্রাফুল হক সিয়াম। অবশেষে তার সেই স্বপ্ন বাস্তব হলো। গতকাল রবিবার (২৫ আগস্ট) দেশে প্রথমবারের মতো সরকারি এই হাসপাতালে এমআইসিএস সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এর আগে দেশে বেসরকারি হাসপাতালে এ ধরনের কয়েকটি অস্ত্রোপচার হয়েছে।
এমআইসিএস-এ পুরো বুক না ফাঁকা করে, পাঁজরের হাড় না কেটে মাত্র দুই ইঞ্চি ছিদ্র করা হয়।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে হওয়া এমআইসিএস-এর নেতৃত্ব দেন ডা. সিয়াম। এতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো টিমকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
সোমবার (২৬ আগস্ট) ডা. সিয়াম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু থেকেই এই অস্ত্রোপচারের সবটা জানতেন। অস্ত্রোপচারের সময় তিনি বারবার খোঁজ নিয়েছেন। পরে রোগীর অবস্থা সর্ম্পকে জেনেছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন চিকিৎসক দলকে।
পাবনার ১২ বছরের নূপুরের হার্টের অস্ত্রোপচার এই এমআইসিএস পদ্ধতিতে হয়েছে। গত ১৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হয় নূপুর।
সব নিয়ম মেনে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) গিয়ে দেখা যায় নূপুর শুয়ে আছে। কেমন আছো জানতে চাইতেই মিষ্টি হেসে বলে, ‘আমি ভালো আছি, কোনও সমস্যা নেই। ডাক্তার আংকেল বলেছে, কাল অথবা পরশু বাড়ি যেতে পারবো।’
ডা. সিয়াম বলেন, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইউরোপের অনেক দেশে হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার নিয়ে আয়োজিত বিভিন্ন কনফারেন্সে এমআইসিএস-এর কথা শোনেন তিনি। কাটাছেঁড়া না হওয়া রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। অস্ত্রোপচারের তিন-চার দিনের মাথায় রোগী বাড়ি চলে যেতে পারে। ট্রাডিশনাল অস্ত্রোপচার থেকে এমআইসিএসে খরচ অনেক কম বলেও জানান তিনি।
তবে এর শুরুটা সহজ ছিল না বলে জানান ডা. সিয়াম। যথাযথ প্রকিউরমেন্ট, বাজেট, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা, নিজেদের প্রশিক্ষিত করা, অপারেশন থিয়েটারের স্টাফদের প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষিত অ্যানেস্থেটিক্সসহ আনুষঙ্গিক সবকিছুর ব্যবস্থা করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।
তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া শুরুর একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি নিজে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. আফজালুর রহমানকে যন্ত্রপাতি কেনার নির্দেশ দেন।
ডা. সিয়াম জানান, অস্ত্রোপচারের বিষয়ে জানতে তিনিসহ তিন জন গত মাসে ভারতের আহমেদাবাদে ইউএন মেহতা হাসপাতালে যান। সেখানে পাঁচ দিন পুরো বিষয়টি দেখেন তারা। দেশে ফিরে আলোচনা করেন হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্ডিয়াক সার্জন ও কার্ডিয়াক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদের সঙ্গে। তিনি এ ব্যাপারে সাহস দেন। এর আগের সবক'টি এমআইসিএস হয়েছে হার্ট ফাউন্ডেশনে। গতকাল অস্ত্রোপচারের সময়ও সেখানকার চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্ডিয়াক সার্জন অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ, ডা. প্রশান্ত কুমার চন্দ, ডা. রামপদ সরকার, ডা. কাজী আবুল আজাদ প্রমুখ।
ডা. সিয়াম বলেন, হাসপাতালের ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল এ অস্ত্রোপচারে অংশ নিয়েছে। এতে ছিলেন ডা. আসিফ, ডা. শাহরিয়ার, ডা. গফুর, ডা. রুমু, ডা. মন্জুর, ডা. ওয়াহিদা, ডা. আহসানারা প্রমুখ। অ্যানেস্থেসিস্ট ছিলেন অধ্যাপক ডা. শাহনাজ ফেরদৌস, ডা. আমীরুস সালাম, কার্ডিওলজিস্ট ছিলেন ডা. শফিকুর রহমান পাটোয়ারি ও ডা. সাহানা।