পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সংসদীয় কমিটি। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই প্রশ্ন তোলা হয়।
কমিটির সভাপতি ফারুক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশিদের পার্সপোর্ট ইস্যু করতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে আমরা পাসপোর্ট অধিদফতরগুলোকে ডেকেছিলাম। তারা দেরির বিষয়গুলি ব্যাখ্যা করেছে। আমরা প্রবাসীদের ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট ইস্যু করতে বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাসপোর্ট ইস্যুতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়টিও এসেছিল। এ বিষয়ে আমি বলেছি- জাতীয় পরিচয়পত্রে কোনও ব্যক্তির নাম ঠিকানাসহ সব ধরনের তথ্যই থাকে। তাহলে এখনও পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজনীতা কী?’
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বৈঠকে পাসপোর্ট ইস্যুতে বিলম্বের কারণ নিয়ে আলোচনা করা এবং ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট ইস্যু করতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও যথাসময়ে পাসপোর্ট ইস্যু করতে সক্ষম না হলে তার যথাযথ কারণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে।
২০১২ সালে জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম) পাসপোর্ট ইস্যুতে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল চেয়ে একটি নোটিশ দেন।
এর আগে ২০১১ সালে পাসপোর্ট অধিদফতরও পুলিশ ভেরিভিকেশন বাতিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়।
তবে, পুলিশের সংশ্লিষ্ট শাখা তাতে আপত্তি তোলে।
গত আগস্ট মাসে পাসপোর্ট প্রদানে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও দুর্নীতি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেছে। সেখানেও তারা পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের সুপারিশ করেছে।
এ ব্যাপারে ফারুক খান জানান, পাসপোর্ট অধিদফতর তাদের জানিয়েছে- প্রধানমন্ত্রী আগামী ডিসেম্বরে ইপাসপোর্ট কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। জানুয়ারি থেকেই ইপাসপোর্ট দেওয়া শুরু হবে। প্রথম পর্যায়ে প্রধান কার্যালয়সহ ঢাকার তিনটি আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে ইপাসপোর্ট প্রদান করা হবে। এরপর সারাদেশে ও পরে বিদেশ থেকেও ইপাসপোর্ট দেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, পাসপোর্ট প্রদানের জন্য আমরা একটি অ্যাপস চালুর পরামর্শ দিয়েছি। এখানে পাসপোর্টের সর্বশেষ স্ট্যাটাস থাকবে। কোন পাসপোর্ট প্রদানে কেন দেরি হচ্ছে, কতটা সময় লাগবে, তা সেখানে উল্লেখ থাকবে।
চার আসিয়ান দেশ সফরে যাচ্ছে সংসদীয় কমিটি
প্রত্যাবাসনসহ রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমর্থন আদায়ে চার আসিয়ান দেশ সফরে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। এই মাসের শেষ দিকে সিঙ্গাপুর যাওয়ার মাধ্যমে এ সফর শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে তারা কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড যাবে।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি ফারুক খান জানান, আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি যেসব দেশের সফটকর্নার রয়েছে আমরা সেই দেশগুলো সফরে যাচ্ছি। আমার তাদের বাস্তবতা বুঝিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবো।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদান এবং ভারত সফরের ওপর প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান নিয়ে আলোচনা করা হয়। ব্যবসাক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যবসায়ীদের সক্ষমতা অর্জনের জন্য সরকারি পর্যায় থেকে সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে তাদের সক্ষম করে গড়ে তুলকে মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
বৈঠকে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা ও সফলতা নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয় এবং সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক কূটনীতি আরও জোরদার করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে কী পরিমাণ পন্য রফতানি করা হয়েছে বিভিন্ন মিশন থেকে সে বিষয়ে প্রতিবেদন সংগ্রহ করে পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করার জন্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, নাহিম রাজ্জাক এবং কাজী নাবিল আহমেদ অংশগ্রহণ করেন।