কোনও বিধিনিষেধ ছাড়াই জাতীয় ঈদগাহে দেশের প্রধান ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনা মহামারির কবলে পড়ে গেলো দু’বছর শূন্য পড়েছিল জাতীয় ঈদগাহ। মঙ্গলবার (৩ মে) আবারও ঢাকাবাসীর পদ চারণায় মুখর হয়ে উঠে জাতীয় ঈদগাহ মাঠ। হাজারও মানুষ অংশ নিয়েছেন দেশের প্রধান জামাতে।
জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ঈদের প্রধান জামাত মঙ্গলবার (৩ মে) সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয়। যদিও তারও ঘণ্টা দুই আগে থেকে মুসল্লিরা ঈদগাহে আসতে শুরু করেন। নতুন পাঞ্জাবি পরে নামাজ আদায় করতে জাতীয় ঈদগাহে এসেছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। নিরাপত্তার জন্য জাতীয় ঈদগাহে ছিল কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসল্লিরা সারিবদ্ধভাবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে প্রবেশ করছেন ঈদগাহে। উত্তর দিকে মৎস্য ভবন, পূর্ব দিকে প্রেস ক্লাবসহ আশেপাশের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
ঈদগাহের প্রবেশমুখগুলোতে বসানো হয়েছে মেটাল ডিটেক্টর আর্চওয়ে। নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে ঈদগাহের ভেতরে প্রবেশ করছেন মুসল্লিরা। ঈদগাহের পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরায় নজরদারির করা হয়েছে।
২ লাখ ৫৪ হাজার বর্গফুটের জাতীয় ঈদগাহ মাঠে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি ঈদের জামাতে অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। তবে অনেকেই ময়দানের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ না পেয়ে বাইরে রাস্তায় নামাজ আদায় করেছেন।
পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও ঈদের জামাতে অংশ নিতে পৃথক ব্যবস্থা ছিল, যেখানে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারতেন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নারী। ঈদগাহের প্যান্ডেলে ভিআইপিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ২৫০ জন পুরুষ ও ৮০ জন নারীর সেখানে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ছিল।
সাধারণত জাতীয় ঈদগাহে জনসাধারণের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন রাষ্ট্রপতি। বিগত দুই বছরের মতো এবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বঙ্গভবনের দরবার হলে পরিবারের সদস্য ও কিছু কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের পর সারাদিন পরিবারের সঙ্গে দিন কাটাবেন তিনি।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে দেশের প্রধান ঈদ জামাতের ইমামতি করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমীন। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণে মুনাজাত করা হয়।
ঈদগাঁহে ঈদ জামাতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মধ্য সম্প্রতি, সৌহার্দ্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কিন্তু ঈদগাহে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় করেছেন। নামাজ শেষে কোলাকুলির দৃশ্য প্রকাশ করে ভ্রাতৃত্ববোধের। করোনার চোখ রাঙানিতে গেলো ২ বছর ঈদ ছিল প্রচলিত আয়োজনহীন। এবার স্বস্তি ফিরেছে জনজীবনে। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় সারাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে।
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে গেলো দুই বছর ঈদের নামাজে জনসমাগম রোধের পাশাপাশি কোলাকুলি-করমর্দন না করার নির্দেশনা দিয়েছিল সরকার। সম্প্রতি দীর্ঘ বিধিনিষেধ ও বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার মধ্য দিয়ে ক্ষীণ হয়েছে করোনা সংক্রমণের হার। ঈদের আগ দিন পর্যন্ত টানা ১১ দিন করোনায় কারও মৃত্যু হয়নি সারা দেশে। এবার আর কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করেনি সরকার। ফলে স্বরূপে ফিরেছে ঈদের আনন্দ আয়োজন।
জাতীয় ঈদগাহে জামাত শেষে চেনা-অচেনা সবাই শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন কোলাকুলি করে। সৌহার্দ্যের চিত্র দেখা মিলেছে ঈদগাহ ময়দানে। ঈদের নামাজ আদায়ের পর মুসল্লিদের মধ্যে পারস্পারিক কোলাকুলি-করমর্দনের ধুম পড়ে যায়।