X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

টিপু হত্যাকাণ্ড: মুসাকে ওমান থেকে ফিরিয়ে আনছে পুলিশ

নুরুজ্জামান লাবু
০৯ জুন ২০২২, ০৪:২৩আপডেট : ০৯ জুন ২০২২, ১০:২০

রাজধানীর মতিঝিলের আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুসহ জোড়া খুনের ঘটনায় অন্যতম ‘পরিকল্পনাকারী’ সুমন শিকদার ওরফে মুসাকে ওমান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওমানের রাজধানী মাসকাট থেকে মুসাকে নিয়ে পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। গত সোমবার (৬ জুন) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহিদুর রহমান রিপন, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দীন ওমানের রাজধানী মাসকাটে যান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টিপু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার পর মোল্লা শামীমকে দায়িত্ব দিয়ে গত ১২ মার্চ দুবাই চলে যান মুসা। হত্যাকাণ্ডের পর তদন্তে মুসার নাম আসলে দুবাই থেকে সে পালিয়ে ওমান চলে যায়। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মুসার পাসপোর্ট সংগ্রহ করে পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি শাখার মাধ্যমে রয়েল পুলিশ অব ওমানের এনসিবি শাখাকে চিঠির মাধ্যমে মুসাকে গ্রেফতারে সহযোগিতা চায়। বাংলাদেশ পুলিশের অনুরোধে গত ১৭ মে ওমানের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের শহর সালালাহ-তে আইয়ুব (আ.) নবীর সমাধি জিয়ারত করে ফেরার সময় রয়েল পুলিশ অব ওমান মুসাকে আটক করে। পরে ওমানের পুলিশ বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশকে জানালে সংস্থাটির পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি টিম মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ওমান যায়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঢাকার আন্ডার ওয়ার্ল্ডের এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশের সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। পরবর্তী সময়ে সে মতিঝিল এলাকার আরেক সন্ত্রাসী ফ্রিডম মানিকের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। দুবাইয়ে অবস্থানরত আরেক পলাতক সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে তার।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সুমন শিকদার ওরফে মুসার বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্লবী থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে দশটি ও মতিঝিল থানায় একটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০০১ সালে পাঁচটি, ২০০৩ সালে দুটি, ২০০৪ সালে তিনটি ও ২০১৬ সালে একটি মামলা রয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সে বৃহত্তর মিরপুর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। মিরপুরের পল্লবী থানায় একাধিক মামলা দায়ের হওয়ার পর সে ফ্রিডম মানিকের সহায়তায় মতিঝিল এলাকায় বসবাস শুরু করে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সুমন শিকদারের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানাধীন এলাকায়। তার বাবার নাম আবু সাঈদ শিকদার। মায়ের নাম জরিনা বেগম। স্ত্রীর নাম নাসিমা আক্তার। এত মামলা থাকার পরও সে ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আগের পাসপোর্টের ( নং ভ ০০৭৪৯১৮) বিপরীতে নতুন একটি পাসপোর্ট (নং এ ০০৪৪৩৩৪৩) সংগ্রহ করে।

গত ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা শাহজাহানপুর আমতলা এলাকায় নিজ গাড়িতে বাসায় ফেরার সময় এলোপাথাড়ি গুলি করে হত্যা করা হয় জাহিদুল ইসলাম টিপুকে। এসময় যানজটে রিকশায় থাকা সামিয়া আফনান নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। আলোচিত এই জোড়া খুনের ঘটনার দুই দিনের মাথায় গোয়েন্দা পুলিশের খিলগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল শুটার মাসুমকে গ্রেফতার করে। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে মাসুম। মাসুমের স্বীকারোক্তিতে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় আরফান, শামীম, মানিক ও মুসার নাম ওঠে আসে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া মোল্লা শামীম ঘটনার পর পালিয়ে ভুটান গিয়েছে বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। তারা ভুটানের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে শামীমকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছেন। শামীমকে গ্রেফতার করতে পারলে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা যাবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তারা তথ্য-প্রযুক্তি ও প্রথাগত সোর্স ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই শুটার মাসুম ওরফে আকাশকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু মাসুমকে গ্রেফতারের সঙ্গে সঙ্গেই তার অন্যতম সহযোগী শামীম ওরফে মোল্লা শামীম আত্মগোপনে চলে যায়। আর চতুর মুসা ঘটনার আগেই দেশ ছাড়ে, যাতে তাকে কেউ সন্দেহ না করে। মুসাকে ওমান থেকে ফিরিয়ে আনার কারণে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের মোটিভ ও নেপথ্য মদতদাতাদের বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, আলোচিত এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলো- শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ, আবু হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল, নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির, ওমর ফারুক, মোরশেদুল ইসলাম ওরফে কাইল্যা পলাশ, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালে, নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক, মোহাম্মদ মারুফ খান, মশিউর রহমান ওরফে ইকরাম, ইয়াসির আরাফাত ওরফে সৈকত, সেকান্দার শিকদার ওরফে আকাশ ও হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজ। এদের মধ্যে আকাশ ও মানিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

/এমএস/ইউএস/
সম্পর্কিত
প্রতারণার অভিযোগে সাবেক স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা
ভাড়াটিয়ার খাটের নিচ থেকে ইমামের স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার
তালাবদ্ধ ঘরে নারীর গলাকাটা লাশ, পাশে পড়ে ছিল রক্তমাখা বঁটি
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী