রাজধানীর জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে আইনজীবী ও জনতার সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় যে যতটুকু অপরাধ করেছে, তার বিচার হবে বলে মন্তব্য করেছেন আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট মুরাদ রেজা, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার অনিক আর হক প্রমুখ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী ও শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
শুনানিকালে আদালত বলেন, ‘জুরাইনের ঘটনায় পুলিশ যদি অপরাধ করে তার বিচার হবে, আইনজীবী অপরাধ করলে তারও বিচার হবে। যে যতটুকু অপরাধ করেছে তার বিচার হবে।’
রিটকারী আইনজীবীদের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনারা বিচারিক আদালতে দুই আইনজীবীর জামিন আবেদন করুন। তারা জামিন না দিলে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করুন। হাইকোর্টে জামিন না দিলে তারপর আমরা দেখবো।’
পরে আদালত আগামী ১৯ জুনের মধ্যে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে নির্দেশ দেন এবং মামলাটির শুনানি মুলতবির আদেশ দেন।
এর আগে গত ৭ জুন সকালে আদালতে আসার পথে আইনজীবী দম্পতি, ঢাকা আইনজীবী সমিতির দুই সদস্য সোহাবুল ইসলাম রনি ও তার স্ত্রী ইয়াসিন জাহান নিশানের সঙ্গে জুরাইন পুলিশ বক্সের সামনে এক ট্রাফিক সার্জেন্টের বাগবিতণ্ডা হয়। ওই ঘটনায় ওই আইনজীবী দম্পতিসহ অপর এক আইনজীবী ইয়াছিন আরাফাত ভূঁইয়াকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়।
পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে এবং অজ্ঞাতনামা ৩৫০ থেকে ৪০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে শ্যামপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গত ৮ জুন তিন আইনজীবীকে আদালতে তোলা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজতে তাদের মধ্যে বিশেষ করে সোহাবুল ইসলাম রনিকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। ওইদিন অপর দুই আইনজীবীর জামিন আবেদন নাকচ করে পুলিশি আবেদনে তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন।
পরে আইনজীবীদের প্রতিবাদের মুখে সেই রিমান্ড আদেশ মৌখিকভাবে ১২ জুন পর্যন্ত পেন্ডিং রাখার আদেশ দেন বিচারক।
এদিকে রাজধানীর জুরাইনে ঘটনায় দুই আইনজীবীকে রিমাণ্ডে নেওয়ায় ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ ফজলে ইলাহী। গত ৯ জুন দায়ের করা রিটটির শুনানির নিয়ে জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে আইনজীবী ও জনতার সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলার নথি তলব করেন হাইকোর্ট।
রবিবারের (১২ জুন) মধ্যে নিম্ন আদালতকে এসব নথি উচ্চ আদালতে পাঠাতে বলা হয়। একইসঙ্গে ওই মামলায় দুই আইনজীবীকে রিমান্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব আদেশ দেন।
সেদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী, অ্যাডভোকেট আজহার উল্লাহ ভুঁইয়া, অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জরুল হক, ব্যারিস্টার অনিক আর হক সহ শতাধিক আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী ও শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
পরে গত ১৩ জুন ওই ঘটনায় করা মামলায় হাইকোর্টের নথি তলবের আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার জজ আদালত। একইসঙ্গে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য মামলাটি প্রেরণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মামলাটি আপিল বিভাগের শুনানিতে আসে।