X
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

লঞ্চের কেবিনে সাবেক স্ত্রীর হাতে ‘জিনের বাদশাহ’ খুন

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৩ আগস্ট ২০২২, ১৬:৫৬আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২২, ১৯:২৫

‘জিনের বাদশাহ’ পরিচয়ে ফোন দিয়ে করা হয় প্রতারণা, কিন্তু জাকির হোসেন বাচ্চু (৩৮) ও আরজু আক্তারের (২৩) মধ্যে হয়েছিল প্রেম। এরপর বিয়ে। কিছু দিন পর ভেঙেও যায় সংসার। তবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। সেই সাবেক স্ত্রীকে লঞ্চের কেবিনে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তার হাতেই খুন হন জাকির। জাকিরের একাধিক বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ও প্রতারণার প্রতিশোধ নিতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন আরজু। আসামি আরজু মঙ্গলবার (২ আগস্ট) হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মিশকাত শুকরানার কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত ২৯ জুলাই ঢাকা থেকে ভোলাগামী গ্রীনলাইন-৩ লঞ্চে খুন হয় জাকির। এ ঘটনায় তার প্রথম স্ত্রী সুরমা আক্তার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করনে।

এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে তার স্বামী জাকির দ্বিতীয় বিয়ে করে। দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম আরজু আক্তার। গত এপ্রিলে আরজুকে তালাক দেয় সে। জাকির ঢাকায় তার বড় ভাইয়ের বাসায় থাকতো। ২৯ জুলাই জাকির ফোন করে জানায়, লঞ্চে ভোলায় গ্রামের বাড়িতে যাবে। পরে ওই দিন সুরমা আক্তার একাধিকবার ফোন দিলেও জাকিরের নাম্বার বন্ধ পান। বিষয়টি আত্মীয়-স্বজনদের জানান। তারা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেন। তবে কোথাও তার সন্ধান পান না।

ওই দিন রাত ৮টার দিকে সদরঘাট নৌ-থানার মাধ্যমে তারা জানতে পারেন, এমভি গ্রীন লাইন-৩ লঞ্চের তৃতীয় তলার মাস্টার ব্রিজের সঙ্গে মাস্টার কেবিনের ভেতর খাটের নিচে জাকিরের লাশ পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানতে পারেন, কেবিনে স্ত্রী পরিচয়ে বোরকা পরা একজন নারী তার সঙ্গে ছিল। যাকে পরে আর দেখা যায়নি।

পিবিআই মামলাটির তদন্ত শুরু করে। পিবিআই ঢাকা জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম জানান, লঞ্চের কেবিনে স্ত্রী পরিচয়ে যে ছিল সে জাকিরের প্রাক্তন দ্বিতীয় স্ত্রী। তালাক দেওয়ার পরও তার সঙ্গে জাকিরের সম্পর্ক ছিল। তারা স্বামী-স্ত্রীর মতোই চলাফেরা করতো। আরজুকে গ্রেফতারের পর সে সবকিছু স্বীকার করেছে।

যেভাবে প্রেম ও বিয়ে

জাকির হোসেন বাচ্চু দুই বছর আগে জিনের বাদশাহ পরিচয়ে আরজু আক্তারকে ফোন দেয়। তারপর তাদের পরিচয়, প্রেম ও বিয়ে হয়। সে জাকিরের দ্বিতীয় স্ত্রী। জাকির জিনের বাদশাহ প্রতারণা কাজে তাকে ব্যবহার করে। পরে জাকির একাধিক নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। জিনের বাদশাহ পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে যে অর্থ উপার্জন করতো তা অনৈতিক কাজে খরচ করে। এসব বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হলে একপর্যায়ে আরজুকে তালাক দেয়। এরপরও আরজু তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে।

প্রাক্তন স্ত্রীর হাতে যেভাবে খুন হন জিনের বাদশাহ জাকির

তালাক, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ও প্রতারণা নিয়ে আরজু ক্ষিপ্ত ছিল। জাকিরকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে সে। জাকির ২৯ জুলাই সকালে লঞ্চে ভোলায় গ্রামের বাড়িতে যাবে জানতে পারে সে। লঞ্চের একটি কেবিন ভাড়া করে তাকেও বাড়ি নিয়ে যেতে বলে। তাদের বাড়ি একই এলাকায় পাশাপাশি গ্রামে হওয়ায় ঢাকা থেকে ভোলাগামী এমভি গ্রীন লাইন-৩ লঞ্চের একটি স্টাফ কেবিন ভাড়া করে। ভাড়া নেওয়ার সময় তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে লঞ্চে ওঠে। কেবিন ভাড়া নেওয়ার সময় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে কোনও তথ্য রাখেনি। লঞ্চে ওঠা থেকে নামা পর্যন্ত আরজু বোরকা পরা ছিল।

জিজ্ঞাসাবাদে আরজু জানায়, সকাল ৮টার দিকে তারা সদরঘাট থেকে ভোলার ইলিশা যাওয়ার জন্য লঞ্চে ওঠে। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুধের সঙ্গে পাঁচটি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে লঞ্চে ওঠে। জাকির এক বাটি রসমালাই কিনে আনে। আরজু কৌশলে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত দুধ জাকির হোসেনকে খাইয়ে দেয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে জাকির অচেতন হয়ে গেলে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে। পরে অন্য একটি ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ কেবিনের স্টিলের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে। লঞ্চটি ভোলার ইলিশা ঘাটে পৌঁছালে আরজু নেমে যায়।

যেভাবে লাশ উদ্ধার হয়

ওই দিন দুপুর আড়াইটার দিকে লঞ্চটি ইলিশা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। লঞ্চের স্টাফরা কেবিনটি তিন শিশুসহ দুই জন নারীকে ভাড়া দেন। লঞ্চটি ঘাট ছেড়ে আসার প্রায় দুই ঘণ্টা পর নারীর সঙ্গে থাকা একটি শিশু খাটের নিচে ঢোকে। এক নারী শিশুটিকে আনতে গিয়ে লাশ দেখতে পায়। তার চিৎকারে বিষয়টি লঞ্চের স্টাফদের নজরে আসে।

লঞ্চ কর্তৃপক্ষ সদরঘাটে এসে বিষয়টি ঢাকা সদরঘাট নৌ-থানা পুলিশকে জানালে তারা অজ্ঞাত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তে পিবিআইকে অনুরোধ করে।

 

 

 

/এআরআর/আরকে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
কোরআন পোড়ানোর অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
ঈদের ছুটিতে ভ্রমণের আড়ালে ইয়াবা পাচার, গ্রেফতার ২
অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে নৃত্যশিল্পীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেফতার ৫
সর্বশেষ খবর
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ
অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের সংশোধনের উপায় কী
অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের সংশোধনের উপায় কী
লেবাননে এক হিজবুল্লাহ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
লেবাননে এক হিজবুল্লাহ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন