ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশের পর রিভিশনাল (আপিল ফোরাম) ফোরামের সুযোগ থাকলে সে আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা যাবে না মর্মে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
শনিবার (৬ আগস্ট) এ সংক্রান্ত মামলার আপিল বিভাগের প্রকাশিত রায়ে ওই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর জুরাইনে পুলিশের উপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলায় দুই আইনজীবীর রিমান্ড মঞ্জুরের বৈধতা নিয়ে করা রিটের রায়ে এ পর্যবেক্ষণ এসেছে।
আপিল বিভাগ রায়ে বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির অধীনে ম্যাজিস্ট্রেট এই আদেশ (রিমান্ড) দিয়েছেন। জনস্বার্থে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই আদেশ চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ দায়রা আদালতে রিভিশনাল বিচারে সংশোধনযোগ্য। কেউ যদি ম্যাজিস্ট্রেটের রিমান্ড আদেশে সংক্ষুব্ধ হন তাহলে তারা রিভিশন চেয়ে দায়রা আদালতে আবেদন করতে পারেন। তৃতীয় পক্ষ এ রিমান্ড আদেশ চ্যালেঞ্জ করে ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্টে রিট করার এখতিয়ার নেই।
আদালত আরও বলেন, আইনের ভেতরে থেকে যখন কোনও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা আদেশ দেন তখন ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে সেই আদেশে হস্তক্ষেপ করা যায় না। এ রিটে হাইকোর্টের আদেশে মনে হচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেটের রিমান্ড আদেশ বিচারিক আদেশ নয় এবং রিমান্ড আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন করার কোনও ফোরাম নেই। কিন্তু রিভিশন করলে রিমান্ড আদেশ স্থগিত করার এখতিয়ার দায়রা আদালতের আছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ জুন সকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আদালতে আসার পথে আইনজীবী দম্পতি, ঢাকা আইনজীবী সমিতির দুই জন সদস্য সোহাবুল ইসলাম রনি ও তার স্ত্রী ইয়াসিন জাহান নিশানের সঙ্গে জুরাইন পুলিশ বক্সের সন্নিকটে একজন ট্রাফিক সার্জেন্টের বাগবিতণ্ডা ও নারী আইনজীবীকে হেনস্তার ঘটনার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় দুইজন আইনজীবীসহ অপর বিজ্ঞ আইনজীবী ইয়াছিন আরাফাত ভূঁইয়াকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে এবং অজ্ঞাতনামা ৩৫০/৪০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে শ্যামপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গত ৮ জুন তিনজন আইনজীবীকে আদালতে তোলা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজতে তাদের মধ্যে বিশেষ করে সোহাবুল ইসলাম রনিকে নির্যাতনের বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। পাশাপাশি অপর দুই আইনজীবীর জামিন আবেদন নাকচ করে পুলিশি আবেদনে তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন।
পরে আইনজীবীদের রিমান্ডের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফজলে এলাহী। সেই রিটের শুনানি নিয়ে গত ৯ জুন মামলার নথি তলব করে রিমান্ডের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এরপর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদনের পর চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৪ জুন আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আসে।
আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলে ১৯ জুন পর্যন্ত মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করেন। একই সঙ্গে রিট আবেদনকারীর আইনজীবীদের অধস্তন আদালতে জামিনের জন্য আবেদন উপস্থাপন করতে বলেন। এরপর ওইদিন আইনজীবী ইয়াসিন আরাফাতকে জামিন দেন অধস্তন আদালত।
পরে গত ১৯ জুন শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টের রুল খারিজ করে করে দেন আপিল বিভাগ।