আন্দোলনের নামে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার চায়ের বাজারকে ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে টি অ্যাসোসিয়েশন। সংস্থাটি বলছে, শ্রমিক কল্যাণমুখী বাংলাদেশের চা শিল্প বিশ্ববাজারে প্রভাব বিস্তার করছে। চা বাগানে শ্রমের দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবি করা হলেও একজন শ্রমিক দৈনিক প্রায় ৪০০ টাকা সমপরিমাণ সুবিধা পেয়ে থাকেন। বুধবার (১৭ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন। আন্দোলনের কারণে সিলেট ও চট্টগ্রামের ১৬৮ চা বাগানে দৈনিক ২০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যমানের চা পাতা নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি বাগান মালিকদের।
বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষ সুবিধার মধ্যে দৈনিক নগদ মজুরি ছাড়াও ওভারটাইম, বার্ষিক ছুটি ভাতা, উৎসব ছুটি ভাতা, অসুস্থতাজনিত ছুটি ভাতা, ভবিষ্যৎ তহবিল ভাতা, কাজে উপস্থিতি ভাতা, ভবিষ্যৎ তহবিলের ওপর প্রশাসনিক ভাতার মাধ্যমে সর্বমোট গড়ে দৈনিক মজুরির প্রায় দ্বিগুণ নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।উদ্যোক্তারা বলছেন, শ্রমিকদের সামাজিক উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য দৈনিক ১৭৫ টাকার বিভিন্ন রকম সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৬৮টি বাণিজ্যিক চা উৎপাদনের বাগান কাজ করছে, যেখানে দেড় লাখেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের ৩ শতাংশ চা উৎপাদন করে। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি চায়ের বাজার মূল্য প্রায় ৩,৫০০ কোটি টাকা। জিডিপিতে এই শিল্পের অবদান প্রায় ১ শতাংশ।
খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভর্তুকির মাধ্যমে ২ টাকা কেজি দরে মাসপ্রতি শ্রমিককে ৪২.৪৬ কেজি চাল অথবা গম রেশন প্রদান করা হয়। তাছাড়া শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রায় ৯৪,২০০ বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য বণ্টন করা হয়েছে। ১৯০ বছরের পুরনো শিল্প হিসেবে বাংলাদেশের অন্যান্য যেকোনও শিল্পের তুলনায় অনেক আগে থেকেই শ্রমিক আইন অনুসরণ করা হচ্ছে প্রতিটি চা বাগানে। মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য নিশ্চিতে ১৬ সপ্তাহের মজুরিসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির পাচ্ছেন নারী শ্রমিকরা। একজন শ্রমিকের জন্য পরিবারপ্রতি ১ হাজার ৫৫১ স্কয়ার ফিট বাড়ি দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের সর্বমোট ৫,৮০০ বিঘা জায়গা প্রদান করা হয়েছে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দুটি বড় গ্রুপের ও ৮৪টি বাগানের হাসপাতালে ৭২১ শয্যার ব্যবস্থা, ১৫৫টি ডিসপেনসারিসহ সর্বমোট ৮৯১ জন মেডিক্যাল স্টাফ নিয়োজিত আছেন। শ্রমিকদের সন্তানদের সুশিক্ষা নিশ্চিতে প্রাথমিক, জুনিয়র ও উচ্চ বিদ্যালয়সহ মোট ৭৬৮টি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে ১ হাজার ২৩২ শিক্ষক দ্বারা বর্তমানে ৪৪,১৭১ জন শিক্ষার্থী বিনামূল্যে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকের ভাতা, বিভিন্ন রকম শ্রমিক কল্যাণসূচি, যেমন- বিশুদ্ধ খাবার পানি, ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, পূজা, বিনোদন প্রভৃতি কর্মকাণ্ডে সামগ্রিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। তাছাড়াও, চা শ্রমিকের অবসরের পর তার পরিবারের সদস্যরা চাকরিতে নিয়োগ পেয়ে থাকে, যা একজন চা শ্রমিকের চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকে। ২০১২ সাল থেকে ১০ বছরে চায়ের নিলাম মূল্যের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে শূন্য দশমিক ১৬ হারে বৃদ্ধি পেলেও চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয় ৯৪.২০ শতাংশ।
