X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

টান পড়েছে মেসের হিসাবের খাতায়

আতিক হাসান শুভ
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:০০আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৩:১০

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রতি বছর উচ্চ শিক্ষা নিতে ঢাকায় আসেন। তাদের মধ্যে যারা আবাসিক প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন, তাদের ঠাঁই হয় হোস্টেলে। কিন্তু যারা এর বাইরে, তাদের বেশিরভাগই ঢাকায় বসবাস করেন বিভিন্ন বাসা বাড়িতে মেস করে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই টিউশন, না হয় অন্য কোনও খণ্ডকালীন কাজ করেই চালান মেসের খরচ। তবে সম্প্রতি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে টান পড়েছে ‘মেস জীবনে’। অনেকের ঢাকায় টিকে থেকে পড়াশোনা করাটাই যেন একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম। পড়াশোনা শেষ করেছেন বছর খানেক হলো। দীর্ঘ আট বছর ঢাকায় মেসে থাকছেন। পারিবারিকভাবে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে টিউশন করে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই চালান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগের তুলনায় মেসের খরচ এখন দ্বিগুণ হয়েছে। আগে সিট ভাড়া দিতাম ১৬০০ টাকা, এখন সব মিলিয়ে ২৬০০ টাকার বেশি খরচ হয়। আগে ২ হাজার টাকার মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া হয়ে যেতো। এখন ৩ হাজার টাকা দিয়েও হয় না। আর সরকারি চাকরিতো এখন সোনার হরিণ। অপেক্ষায় আছি দেখা যাক, আল্লাহ আর কতদিন এভাবে চালায়।’

কবি নজরুল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সজিব বলেন, করোনাকালে মাঝেমধ্যে টিসিবির লাইন থেকে কম দামে মেসের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা হতো। কিন্তু এখনতো সেই সুযোগও নেই। এখন টিসিবির পণ্য ট্রাকে করে বিক্রি করা হয় না। তাই সবকিছু দোকান থেকে কেনা লাগে। সবকিছুর দাম নাগালের বাইরে। কীভাবে যে সামনের দিনগুলো কাটবে, সেই চিন্তায় ঘুম রাতে ঘুম আসে না।’

ছোট্ট একটা পার্ট টাইম জব করতেন সজিব। কিন্তু পরীক্ষা আসন্ন হওয়ায়, সেটাও ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, ‘নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য যেন কিছুটা হলেও কমানো হয়। নয়তো আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের মেসে থাকা আরও কষ্টসাধ্য হবে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ব্যাচের তাহামিনা আক্তার নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আগে ৩০ টাকার বেশি মিল (এক বেলার খাবার) খরচ পড়তো না। এখন অনায়াসে ৫০ টাকার মতো পড়ে। কাঁচা সবজি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছুর দাম অনেক বেশি। মেসে খাবার সুবিধা না হলে আগে ডিম ভাজি করে ভাত খেতাম। এখন ডিমের দামও বেড়েছে। মেসে এখন আর গরুর মাংস রান্না হয় না। শেষ কবে রান্না হয়েছে তাও কেউ বলতে পারবে না। তাছাড়া সব মিলিয়ে কষ্টেই জীবন কাটছে। বাবা নেই, বাড়িতে মা অসুস্থ। গত ছয় বছর ধরে ঢাকায় নিজের থাকা খাওয়ারও খরচ নিজেই চালাই, বাড়িতেও টাকা পাঠাতে হয়।’

মেসে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পারিবারিক অবস্থা খুব একটা সুবিধার নয় বলে জানান সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী রায়হান তালুকদার। তিনি বলেন, ‘প্রায় সবাই পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটখাটো কিছু একটা করে মেসে থাকে। যার কারণে চাইলেও সবসময় ভালো খাবার খাওয়া যায় না। সবচেয়ে বাজে অবস্থা আমার মতো মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের যারা আছে তাদের। বাড়ি থেকে যা টাকা দেয় আর নিজের টিউশনি করে যা পায় তা দিয়ে কোনোমতে দিন যায়।’

তিনি বলেন, ‘মা কল করলে ভালো খাবার না খেলেও মায়ের কাছে মিথ্যা বলতে হয়। আমাদের কলেজে কোনও আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় মেসেই থাকি। খরচ কমাতে এক রুমে চার পাঁচ জন গাদাগাদি করে থাকি। দ্রব্যমূল্য না কমলে সামনে আমাদের মতো মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের অবস্থা আরও করুণ হবে।’

/ইউএস/
সম্পর্কিত
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
লিটারে ১০ টাকা বাড়লো সয়াবিন তেলের দাম
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী