‘শরৎ এলো শরৎ এলো/বাজলো পূজার ঢাক।
কাশফুলেরা বললো এসে/জাগরে তোরা জাগ।
সাদা মেঘের ভেলায় করে মা এলেন ঘরে/
আমরা তাকে ভক্তি করি হৃদয় উজার করে।’
এভাবেই স্বরচিত কবিতার মাধ্যমে পূজা নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করছিলেন ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আসা চৌতালী চক্রবর্তী।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। করোনার প্রভাব কাটিয়ে আবারও অনুসারীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে রাজধানীর বিভিন্ন মন্দিরে আয়োজিত দুর্গোৎসব।
সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বেশ কয়েকটি মন্দির ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টি থাকায় পূজামণ্ডপগুলোতে সকালের দিকে ভক্তকূলের আনাগোনা ছিল কম। তবে বিকাল হওয়ার পরপরই মণ্ডপে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। এবারের পূজাকে ঘিরে রয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। তাই মন্দিরে আসা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নির্বিঘ্নেই তাদের দেবীকে শ্রদ্ধা জানাতে পারছেন বলে জানান তারা। এবারের পূজায় প্রত্যেক ভক্তের প্রার্থনা— সারা বিশ্বের চলমান সংকট দূর করে দুর্গা শান্তি বয়ে আনবে।
প্রত্যাশার কথা জানাতে গিয়ে চৌতালী চক্রবর্তী বলেন, ‘ভাব যেখানে গভীর, ভাষা সেখানে অচল। আমরা প্রতি বছর অপেক্ষা করে থাকি, মা দুর্গা কখন আসবে। মা দুর্গা এবার এসেছে গজে (হাতি), যাবে নৌকায়। এবার আমাদের বিশ্বাস, বিশ্বে যে অস্থিরতা সেটা দূর হয়ে যাবে।’
দুর্গোৎসবে আসা আরেক ভক্ত সুদিপ্ত সাহা বলেন, ‘দেবী মা হচ্ছেন শক্তির দেবী। সারা বছর ধরেই অপেক্ষা করি এই দিনটার জন্য। এই দিনে দেবী মার কাছে একটাই প্রার্থনা করি— দেশ, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষকে তিনি সুখে রাখেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি বিশ্বে কী রকম পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এগুলো যেন নির্মূল হয়। এবং নির্মূল করার জন্য আমাদের ভেতরে সহনশীলতার শক্তিটা যেন দেবী মা আমাদের সকলের মাঝে দেন।’
শুধু আনন্দ নয় অনেক ভক্তই এসেছেন দুর্গার কাছে ক্ষমা এবং ধৈর্য্যের আবেদন নিয়ে। রমনা কালী মন্দিরে আসা বয়োজ্যেষ্ঠ ভক্ত নিত্তানন্দ হালদার বলেন, ‘মৃত্যুর আগে মা আমাদের সব পাপ ক্ষমা করে নিষ্পাপ করে দিক, এইটা চাই। মার কাছে আর কিছু চাওয়ার নাই। আর মা যেন আমাদের সবাইকে আরও ধৈর্য্য দেন।’
তবে শিশু-কিশোরদের মাঝে দুর্গোৎসব যেন এক আনন্দ মেলা। তাদের মাঝে এক মণ্ডপ থেকে আরেক মণ্ডপে যাওয়ার খুব তাড়া দেখা গেছে। দুর্গোৎসবকে ঘিরে গড়ে ওঠা অস্থায়ী মেলাগুলোতে মূল দর্শনার্থী ছিল তারা।
রমনা কালী মন্দিরে দুই সন্তানকে নিয়ে আসা প্রদীপ চন্দ্র দাস বলেন, ‘দুর্গোৎসব ঘিরে অবশ্যই আমাদের মাঝে আনন্দ কাজ করে। অনেক প্রত্যাশাও থাকে। সন্তানদের মাঝেও ধর্মীয় মূল্যবোধের সৃষ্টি হবে।’
তিনি বলেন, ‘শিশুরা তো ওরকম উৎসবমুখর পরিবেশ সব সময় পায় না, তাই এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আমরা চাই, এই দিনে তাদের নিজেদের চাওয়াগুলো পূরণ হোক।’
সোমবার বিকাল থেকেই দুর্গোৎসবে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন ও শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান এবং রাজনৈতিক নেতারা।
সোমবার শারদীয় দুর্গাপূজার তৃতীয় দিন ‘মহাঅষ্টমী’ চলছে। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, বিশ্বাস করা হয় যে, দেবী দুর্গা মহাঅষ্টমীতে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। এই দিন ভক্তরা পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে দেবীকে আরাধানা করেন। মহাঅষ্টমীর বিশেষ আকর্ষণ ‘কুমারী পূজা’। এছাড়া অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে পালন করা হয় ‘সন্ধি পূজা’।
মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে গত শনিবার থেকে শুরু হয় পাঁচ দিনব্যাপী সর্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব। বিজয়া দশমীতে দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আগামী ৫ অক্টোবর শেষ হবে এই উৎসব।
ছবি: জুবায়ের আহমেদ