X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে: জরিপ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৭ নভেম্বর ২০২২, ১৭:৩২আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২২, ১৭:৩২

একশনএইড বাংলাদেশের ২০২২ সালে করা এক সমীক্ষা অনুসারে, ৬৩ দশমিক ৫১ শতাংশ নারী উত্তরদাতারা বলেছেন, তারা অনলাইন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। গত বছরে যা ছিল ৫০ দশমিক ১৯ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় অনলাইনে সহিংসতা বেড়েছে। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৬৪ জন নারীকে অনলাইন হয়রানি ও সহিংসতার সম্মুখীন হতে হয়।

১৬ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উদযাপন উপলক্ষে রবিবার (২৭ নভেম্বর) ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা: বাধা এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে অনলাইন সহিংসতার হার জানার জন্য একশনএইড বাংলাদেশ এই সমীক্ষাটি পরিচালনা করে। এই সমীক্ষাটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীদের দ্বারা অনুভূত বিভিন্ন ধরণের সহিংসতা এবং হয়রানি চিহ্নিত করার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এবং এর পেছনের মূল কারণ এবং অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়ে সচেতনতার জন্য বিভিন্ন পন্থা উপস্থাপন করে।

সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, পটুয়াখালী, বান্দরবান, কুড়িগ্রাম এবং লালমনিরহাট– এই ছয়টি জেলায় একটি অনলাইন জরিপের মাধ্যমে এই সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়, যেখানে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩৫৯ জন নারী অংশ নেন।

সমীক্ষায় বলা হয়, ২০২২ সালে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নারীরা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন ফেসবুকে, যা ৪৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। এরপর ম্যাসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইউটিউবে অনলাইন সহিংসতার সম্মুখীন হন। ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী বলেছেন, তারা ভিডিও কল, মোবাইল ফোন এবং এসএমএস’র মাধ্যমে হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।

এ বছরের সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ নারী অনলাইন সহিংসতার মধ্যে ঘৃণ্য ও আপত্তিকর যৌনতাপূর্ণ মন্তব্য; ৫৩ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী ইনবক্সে যৌনতাপূর্ণ ছবি গ্রহণ এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব; ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ নারী বৈষম্যমূলক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন। ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ উত্তরদাতারা বলেছেন, তাদের নামে অন্য কেউ অনলাইনে নকল আইডি তৈরির ফলে হয়রানির শিকার হয়েছেন। ১৬.১৬ শতাংশ বলেছেন, তাদের কার্যকলাপ সবসময় সাইবার স্পেসে অনুসরণ করা হয়। ১৩.১০ শতাংশ সমকামীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হয়েছেন। ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ বলেছেন, তাদের ব্যক্তিগত ছবি অনুমতি ছাড়াই সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা হয়েছে এবং ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ যৌন নিপীড়নের হুমকি পেয়েছেন।

সমীক্ষা মতে, অনলাইন সহিংসতার কারণে নারীদের জীবনে সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব হলো, মানসিক আঘাত, হতাশা ও উদ্বেগ; দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রভাব হলো, সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা বা মতামত প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আস্থা হারানো। ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ ট্রমার শিকার হয়েছেন এবং ২৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ আত্মমর্যাদা হারিয়েছেন। সমীক্ষায় আরও প্রকাশ করা হয়েছে, অনলাইন সহিংসতা এবং হয়রানির কারণে সৃষ্ট মানসিক যন্ত্রণা নারীর আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে সংকুচিত করছে।

সমীক্ষায় আরও বলা হয়, ১৪.৯১ শতাংশ নারী অনলাইন সহিংসতার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছেন এবং ৮৫ শতাংশেরও বেশি ভুক্তভোগী কোনও অভিযোগ জমা না দিয়ে নীরব ছিলেন, যদিও তারা বিভিন্ন উপায়ে অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েছেন। অভিযোগকারীদের মধ্যে, ৪৪.১২ শতাংশ সোশ্যাল মিডিয়া রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে, ২০.৫৯ শতাংশ পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে, ১১.৭৬ শতাংশ জাতীয় জরুরি পরিষেবা (999)-এর মাধ্যমে, ১১.৭৬ শতাংশ নিকটস্থ থানায়, ৫.৮৮ শতাংশ সাইবার ক্রাইমের ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, সিটিটিসি ও ডিএমপি’র মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সমীক্ষায় উত্তরদাতারা অনলাইন হয়রানি, অপব্যবহার এবং ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং দ্রুত শাস্তির পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়াও অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা, প্রশিক্ষণ এবং নিরাপদ ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা এবং রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রতি অভিমত দিয়েছেন সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা।

সমীক্ষায় বলা হয়, নারীরা অনলাইন ব্যবহার এবং সুরক্ষা প্রোটোকল সম্পর্কে সচেতন নয়, যদিও তারা অনলাইন সহিংসতার সম্মুখীন হচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীরা মোবাইল ফোনের মালিক নয়। তারা তাদের বাবা-মা বা বড় ভাই-বোনের ফোন ব্যবহার করতে অভ্যস্ত, যা তাদের হয়রানি নিয়ে কারও কাছে মুখ খুলতে না পারার একটি প্রধান কারণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রামীণ নারীরা ডিজিটাল সাক্ষরতায় পারদর্শী নয়, এমনকি তারা জানেন না, কোথায় অভিযোগ জমা দিতে হবে এবং অনলাইন হয়রানি এবং সহিংসতা সংক্রান্ত কোনও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রযুক্তিগতভাবে কী করতে হবে।

একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা নতুন কিছু নয় এবং এটি এখনও বিভিন্ন মাধ্যমে বিদ্যমান রয়েছে। পরিবার, সামজ, রাষ্ট্র– প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী নির্যাতন হচ্ছে এবং এর নানা রকম বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে। এর নতুন এক মাধ্যম হলো অনলাইন। এই প্রযুক্তির যুগে অনলাইনে নারীদের প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে কিশোরী ও ১৮ বছরের নিচের কন্যা শিশুরা এর শিকার হচ্ছে বেশি। সবাই একত্রিত হয়ে কাজ করলে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।’

অনলাইন সহিংসতা নিরসনে আইনী প্রক্রিয়ার জোরদারের পাশাপশি প্রযুক্তিগত সহায়তা বেশি দরকার বলে অভিমত প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন।

আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং সাইবার টিনস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সাদাত রহমান উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশে অনলাইন হয়রানির কারণে গত ২ বছরে ১১ জন তরুণী আত্মহত্যা করেছে। কিশোর-কিশোরীরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে সচেতন, কিন্তু তারা জানে না কীভাবে সহায়তা পেতে হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সহায়তা ব্যবস্থাকে আরও সহজলভ্য করতে হবে।’

আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন– মেয়ে নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ও সংগঠক তৃষিতা নাশতারান; লিড কনসালটেন্ট সাইকিয়াট্রিস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশিক সেলিম; দৈনিক কালের কণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার ফাতিমা তুজ জোহারা।

সেশনে ডিজিটাল সাক্ষরতা, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উপযুক্ত নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারীদের নিরাপদ প্রবেশ নিশ্চিত করার বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়। বক্তারা প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু এবং কার্যক্রমে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিও আহ্বান জানান।

 

 

/এসও/আরকে/
সম্পর্কিত
আইসিটি খাতে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি অপরিহার্য: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী
নারী উদ্যোক্তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবহার বিষয়ক প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠিত
ঘরে নারীদের কাজের আর্থিক মূল্য নির্ধারণে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ
সর্বশেষ খবর
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৮ বিজিপি সদস্যকে
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৮ বিজিপি সদস্যকে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে বাইডেনের সই
ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে বাইডেনের সই
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা