X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পকলায় ‘রাজনৈতিক হত্যা’

মাহফুজ সাদি
২৯ নভেম্বর ২০২২, ২২:১২আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২২, ২২:২৯

হেমন্তের বিকালে উত্তরের শীতের আগমনী বার্তা চারদিকে। পোড়া মাটির এই শহরে অগ্রহায়ণের আধেক পেরিও ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তবে বিকালের নরম রোদ্দুর আর ত্বকের শুষ্কতা জানান দিচ্ছে প্রকৃতিবদলের অস্তিত্ব। এই হালকা শীতলতা যেন সংস্কৃতিপ্রেমীদের মাদকতার মতো টেনে এনেছে সংস্কৃতিচর্চার তীর্থ স্থানখ্যাত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) নানা আয়োজন ছিল একাডেমির বিভিন্ন দলে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর (উদীচী) ‘রাজনৈতিক হত্যা’ এবং গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন দিবসের আলোচনা সভায় নাট্যকর্মীদের উচ্ছ্বাস। নাটকটিতে একটি হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে একটি দেশের রাজনৈতিক অংশীজনদের ভূমিকা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আর দিবসটির আয়োজনে বিনে পয়সার থিয়েটারে দেশের নাটক পেশাদার হলেও নাট্যচর্চার এই পথ সুগম করতে ১৩ দফা দাবি সামনে আনা হয়।

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর (উদীচী) ১৬তম প্রযোজনা ‘রাজনৈতিক হত্যা’র মঞ্চায়ন হয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নাটকটি দর্শকদের সামনে আনা হয়। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে বিন্যস্ত নাটকটির পুরো কাহিনি।

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর চিত্রায়ণ করা ‘রাজনৈতিক হত্যা’ নাটকটির মূল লেখক হলেন ফরাসি দার্শনিক জাঁ পল সার্ত্রে। এটির অনুবাদ করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বাংলাভাষী অর্পিতা ঘোষ। রতন দেবের নির্দেশনায় নাটকটি মঞ্চস্থ করা হয়। নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন উদীচীর নাটক বিভাগের শিল্পীরা।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, মধ্য ইউরোপের একটি কাল্পনিক দেশ ইলিথিয়াকে নিয়ে ‘রাজনৈতিক হত্যা’ কাহিনি সাজানো হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তিলগ্নে দেশটির ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা দেয় জাতীয়তাবাদী শক্তি ও কমিউনিস্ট পার্টির। এমন প্রেক্ষাপট দিয়ে শুরু হয়েছে নাটকটি। নাটকের বিভিন্ন বাঁকে কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীণ নানা সংকটও চিত্রিত হয়েছে।

নাটকে দেখানো হয়, ক্ষমতায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে কোন্দলের জেরে কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রধান নেতাকে পার্টির অন্য অংশ হত্যার পরিকল্পনা করে। তাকে হত্যা করতে গিয়ে উল্টো ওই নেতার প্রতি মুগ্ধ হয়ে আনুগত্য গ্রহণ করেন আদিষ্ট তরুণ হন্তারক। শেষ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ড ঘটলেও তার পেছনে ব্যক্তিগত কারণ দানা বেঁধেছিল।

হত্যার অপরাধে দুই বছর জেল খেটে পার্টির কর্মী বুঝতে পারেন যাকে হত্যা করা হয়েছে, তার দেখানো পথেই চলছে কমিউনিস্ট পার্টি। রাজনৈতিক এই হত্যার নানা দিক, রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশ এবং রাজনৈতিক বার্তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নাটকজুড়ে। তার সঙ্গে ইলিথিয়ার ফ্যাসিস্ট সরকারের চরিত্র এবং কর্মকাণ্ডও উঠে এসেছে নাটকটিতে। ফলে দর্শকরা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি রাজনীতির নানা কৌশলের সঙ্গে পরিচিত হন।

শিল্পকলায় ‘রাজনৈতিক হত্যা’

নাটকটি দেখতে আসা একজন বাম ধারার রাজনৈতিক কর্মী আনিসুর রহমান বলছিলেন, ‌‘রাজনৈতিক হত্যা নাকটটি দেখে মনে হলো এ যেন এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক আখ্যান। আমরা এই অঞ্চলের কমিউনিস্ট রাজনীতিতে হত্যা দেখেছি। রাজনৈতিক নানা বাঁকবদল দেখেছি। আবার ফ্যাসিস্ট সরকারের ভূমিকা কেমন হয়, তা-ও দেখেছি। সব মিলিয়ে নাটকটির মধ্যে আমি হারিয়ে গিয়েছি; এ যেন এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা!’

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান দিবস উদযাপন করতে মঙ্গলবার বিকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মিলিত হন নাট্যকর্মীরা। এখানে ‘বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার চর্চা: পেশার তাড়না, পৃষ্ঠপোষকতা ও বিকল্প থিয়েটার বিষয়ক ভাবনা বিনিময়’ শীর্ষক আলোচনায় দেশের গ্রুপ থিয়েটারের নানা সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনার বিষয়টি উঠে আসে।

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন দিবসের আয়োজন উদ্বোধন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। বিকালে অনলাইনে যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা সমাজের আদর্শিক, সাংস্কৃতিক ও দেশপ্রেমিক মানুষ। তারা সমাজ-সংস্কৃতির শিকড়ের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকেন।’

আরও বক্তব্য দেন নাট্যাভিনেতা ও নির্দেশক আতাউর রহমান, ফেডারেশনের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল দেবপ্রসাদ কে দেবনাথ, ঝুনা চৌধুরী প্রমুখ।

এই আয়োজনে নাট্যপ্রেমীদের ভিড় দেখা গেছে। তারা অগ্রজদের মুখের কথা শুনেছেন শুনসান নীরবতায়। নাট্যকর্মী নাহিদা নদী বলছিলেন, এখানে এসে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছি। অগ্রজদের প্রতি এ জন্য শ্রদ্ধা জানাতে চাই। 

তারা বলেছেন, বিনে পয়সার থিয়েটার করছেন তারা। তারপরও দেশের নাটক আধা পেশাদার নয়, পুরোপুরি পেশাদার। নাটকের মাধ্যমে মানুষ আরও বেশি মানুষের কাছে আসার সুযোগ পান।

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন দিবসে পেশাদার নাট্যচর্চার পথ আগামী আরও সুগম করতে সরকারের কাছে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশের সব শতবর্ষী নাট্যমঞ্চ সংস্কার ও মেরামত করে নিয়মিত নাট্য মঞ্চায়নের সুযোগ প্রদান; দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিল্পচর্চার মহড়া বাড়ানো, ঢাকায় গ্রুপ থিয়েটার কমপ্লেক্সের জন্য জমি বরাদ্দ করা; সব সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্য অনুদান বাড়ানো; সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য রেয়াতি হারে বরাদ্দ বাড়ানো ও নাটকের পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি ইত্যাদি।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে গান ও কবিতা আবৃত্তি করলেন বিদেশিরা
অনুবাদক সম্মেলন ও অনুবাদ সাহিত্য পুরস্কার অনুষ্ঠিত
ফের দেখা যাবে রাজ-পরীর রসায়ন!
সর্বশেষ খবর
শিশুশিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারপিট, মাদ্রাসাশিক্ষক আটক
শিশুশিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারপিট, মাদ্রাসাশিক্ষক আটক
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা