X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক হারুনর রশীদ খান

উর্বরতা হারিয়েছে ঢাকা শহরের মাটি

আবিদ হাসান
০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:২৬আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ২৩:০২

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘মাটি: খাদ্যের সূচনা যেখানে।’ এ থেকেই বোঝা যায়—ফসল উৎপাদনে মাটির ভূমিকা কী! তবে যেকোনও মাটিতে তো আর ফসল ফলে না। ফসল উৎপাদনে মাটির বিশেষ গুণ থাকা দরকার। এগুলো হারালে সেখানে আর ফসল ফলে না। বাংলাদেশের মাটির অবস্থা নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. হারুনর রশীদ খান।

তিনি জানান, বাংলাদেশে ফসল উৎপাদনযোগ্য মোট মাটির পরিমাণ বর্তমানে ১৪ মিলিয়ন হেক্টরেরও বেশি। তবে এরমধ্যে ঢাকা সিটির মাটি আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। তবে তার আশপাশে সাভার, মধুপুর, কালীগঞ্জ—এসব স্থানের মাটি কিছুটা উর্বর রয়েছে এখনও। ৭০-এর দশকে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা যা ছিল, ২০০০-এ তার কিছুটা কমে যায়। ২০২০-এ তুলনামূলক মাটির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে, আবার কিছু কিছু জায়গায় সেটা কমেও গেছে। ঢাকার ৬০ ফিট এলাকার সড়ক বিভাজকে দেশি শাক-সবজির চাষ। ছবি: নাসিরুল ইসলাম

শিল্প-কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য প্রধানত দায়ী

এই মৃত্তিকা বিজ্ঞানী জানান, বিভিন্ন কারণে মাটির দূষণ বাড়ছে। এরমধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে তিনি শিল্প-কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্যকে দায়ী করেন। একই সঙ্গে তিনি তরল বর্জ্য পরিশোধনাগারের (ইটিপি প্ল্যান্ট) মাধ্যমে এই বর্জ্য নিঃসরণের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, মাটি দূষণ সম্পর্কে সচেতন করে তোলার জন্য এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশনের কিছু কার্যক্রম রয়েছে। এগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছানোর কথা। জেলা, উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্লক সুপারভাইজার বলে কিছু পোস্ট রয়েছে। সেখানে ফসল উৎপাদনে যেসব সমস্যা হয় সেগুলোর সমাধান তারা দিয়ে থাকেন। তবে বিশেষ করে মাটির এই দূষণের সমস্যাটা গ্রামীণ এলাকায় তেমন একটা হয় না। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সড়কের পাশের চিত্র

‘এই মাটি দূষণ প্রধানত শহর এলাকায় হয়। ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম এলাকায় শিল্প-কারখানার বর্জ্য পানিতে মিশে, সেখান থেকে দূষিত পদার্থ গিয়ে মাটিকে দূষিত করে। এছাড়াও মাটিতে পানির স্তর যখন নেমে যায় তখন সমুদ্রের পানি বা জলোচ্ছ্বাসের কারণে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ভিতরে ঢুকে এবং অতিরিক্ত লবণাক্ততা মাটিকে দূষিত করে। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি, টেনারি ইন্ডাস্ট্রিসহ বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির বর্জ্য মাটি দূষণের জন্য বেশি দায়ী। এসব ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করা দরকার। এবং ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে বলা উচিত আপনারা যে বর্জ্য ডিসচার্জ করেন সেগুলো ট্রিটমেন্ট করেন। যাকে আমরা ইটিপি ট্রিটমেন্ট বলি। সরকার সাভারে একটি ইটিপি প্ল্যান্টের নির্মাণকাজ করছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় খুলনা, চট্টগ্রামে পরিশোধনের ব্যবস্থা করা দরকার।

‘এখনই সচেতন না হলে আমরা বিপদে পড়বো’ আগারগাঁওয়ে রাস্তার পাশে লাগানো কলা গাছ

ঢাবির এই অধ্যাপক আরও জানান, মাটি ও পানি দূষণে এখনই সবাইকে সচেতন হতে হবে। অন্যথায় খাদ্য উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে মাটি এবং আমরা বিপদে পড়বো। তিনি বলেন, মাটি সময়ের  সঙ্গে সঙ্গে ফিল্টারের মতো ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। আর যখন মাটি এই ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখনই সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে আমরা বিপদে পড়বো। আগে গ্রামের মানুষ মাটির উপরের পানি খেতো। এখন টেপের তথা টিউবওয়েলের পানি খেতে মানুষ ভয় পায়। পানিদূষণ কোন পর্যায়ে গেছে—এ থেকেই বোঝা যায়। আর খাদ্য উৎপাদনে মাটির পাশাপাশি অন্যতম প্রধান উপাদান হচ্ছে পানি। এভাবে দূষণ বাড়তে থাকলে একপর্যায়ে মাটি উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে এবং আমরা বিপদে পড়বো। অন্যান্য দেশের তুলনায় দূষণ এখানে কিছুটা কম থাকলেও আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে।

ভবিষ্যতে মাটির উৎপাদনশীলতা আরও কমবে ঢাকার সড়কের পাশে লাউগাছ। ছবিটি আগারগাঁও এলাকা থেকে তোলা

ভবিষ্যতে ফসল উৎপাদনের উপযোগী মাটির পরিমাণ আরও কমবে সতর্ক করে অধ্যাপক হারুনর রশীদ খান বলেন, স্বাধীনতার সময় সাত কোটি বাঙালির জন্য যে পরিমাণ জমি ছিল, বর্তমানে ১৬ কোটি মানুষের জন্য সেই একই পরিমাণ জমি। আমাদের মানুষ বেড়েছে, ফসল উৎপাদনের মতো উর্বর মাটির পরিমাণ কমেছে। ভবিষ্যতে ব্যবহারযোগ্য জায়গার পরিমাণ আরও কমবে। সেজন্য এখন থেকে সচেতন হতে হবে। আর তা না হলে খাদ্যের জন্য আমাদের খুব বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। এ বিষয়ে মানুষদের সচেতন করতে সরকার, প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে ভূমিকা রাখতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়ে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করতে হবে। মাটি, পানি, বায়ু, পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন অবস্থা দেখলে সেগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে নিয়ে আসা এবং নীতিনির্ধারণী মহলের মাধ্যমে সেগুলোর সমাধান করতে হবে।

/এমএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সাক্ষীতেই আটকে আছে বর্ষবরণে যৌন হয়রানি মামলার বিচার
মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৫ মিনিট পেছালো
বর্ষবরণে চারুকলায় শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা
সর্বশেষ খবর
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া