প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে জাতীয় পদক নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজের সই করা অফিস আদেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে সাময়িক বরখাস্তের আগে দেওয়া হয়নি কারণ দর্শানোর নোটিশ।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশনাটি সেরকমই ছিল। সে কারণে কারণ না দর্শিয়ে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর মোহাম্মদপুর থানার মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি ২০২৩ সালের ১১ মার্চ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩ এবং প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০১৯ ও ২০২২ প্রদানের মহড়া অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী অন্যদের সাক্ষাৎকার প্রদানে উৎসাহিত করায় অনুষ্ঠানের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়। এটা সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আচরণ পরিপন্থি। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ১২(১) ধারা মোতাবেক তাকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি পদক তো নিয়েছি। মহড়ার দিন আমরা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পদক নেওয়ার কথা বলেছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক চাওয়া অপরাধ নয়। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক পাওয়া আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। আর সে কারণেই আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নিতে চেয়েছিলাম। এই অপরাধে আমাকে সরাসরি সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী পদক প্রদান করবেন, সে কারণে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩ ও শিক্ষা পদক ২০১৯ ও ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানের মহড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় গত ১১ মার্চ। ওসমানী মিলনায়তনে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মূল অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন পদক প্রদান করবেন বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক পাওয়ার দাবি জানান। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হয়।
এ ঘটনায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) এস এম আনছারুজ্জামান তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পলিসি ও অপারেশন উইংয়ের পরিচালক বরাবর ভিডিও ক্লিপসহ অভিযোগ করেন।
এতে বলা হয়, উপস্থিত শিশুদের অভিভাবক ও কতিপয় শিক্ষক প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ না করে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণের দাবি জানান। একপর্যায়ে কতিপয় শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের নিকট থেকে পদক গ্রহণে অস্বীকৃতি এবং প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে পদক গ্রহণের দাবি জানান। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন মন্তব্যপূর্বক মোবাইলে অভিভাবক এবং কতিপয় শিক্ষক সাক্ষাৎকার প্রদান করেন এবং অন্যদের সাক্ষাৎকার প্রদানে সহায়তা করেন। এ সংক্রান্ত ভিডিও ক্লিপ পাওয়া গেছে। ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি, রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম, জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মাহবুবর রহমান এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ফলে সামগ্রিকভাবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের গত মার্চ মাসের সমন্বয় সভায় মহাপরিচালক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এমতাবস্থায়, প্রাপ্ত ভিডিও ক্লিপ অনুযায়ী বর্ণিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।