X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ পেছালো আরও এক বছর

শফিকুল ইসলাম
০২ আগস্ট ২০২৩, ২৩:৫৯আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৬:৩৩

সারা দেশে ৪৭০টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণকাজ চলতি বছরেও শেষ হচ্ছে না। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া পিছিয়েছে আরও এক বছর। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটি শতভাগ আলোর মুখ দেখতে পারে। এর আগে ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ৪৭০ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, মূলত কয়েকটি কারণেই সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের ৪৭০টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার সম্ভব হয়নি। এসব কারণে মধ্যে রয়েছে—প্রয়োজনীয় জমি প্রাপ্যতার অভাব, স্থান নির্বাচনের জটিলতা, জমি-সংক্রান্ত মামলার কারণে নির্মাণকাজে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। বর্তমানে ৪৭০টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের মধ্যে ৪২৯টির কাজ শেষ হয়েছে। ১৭টির কাজ চলমান রয়েছে। ১৩টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। একটির জমি-সংক্রান্ত মামলা আদালতে চলমান রয়েছে আর ১০টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের জন্য অদ্যাবধি কোনও স্থানই নির্বাচন করা হয়নি।

জানা গেছে, ২০১২ সালে সরকারের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এক হাজার ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে ২০১৫ সালের জুন নাগাদ দেশের আট বিভাগের ৬৩টি জেলার ৪৭০টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে ‘উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শীর্ষক’ একটি প্রকল্প গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরকে।

দেশের সর্বত্র সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও স্বদেশপ্রেম উদ্বুদ্ধকরণ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা বাড়ানো, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দাফতরিক কার্যক্রম অধিকতর সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সম্পন্ন করা এবং তহবিল গঠনের মাধ্যমে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাই ছিল প্রকল্পটি গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেটি সফলভাবে সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে প্রকল্পটি গ্রহণের পর ২০১৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে তিনবার সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে একনেকে প্রকল্পটি সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। একনেক প্রস্তাবটি তিনবারই অনুমোদন করে। সর্বশেষ প্রকল্পটি শেষ করার জন্য ২০২৩ সালের ৩০ জুন সময় নির্ধারণ করে দেয় একনেক। তাতেও ব্যর্থ হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। তবে এরই মধ্যে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ২২৩ কোটি ৫৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় চলমান কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সমাপ্ত করার লক্ষ্যে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো প্রয়োজন বলে অভিমত দেয় পরিকল্পনা কমিশন। পরে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জন পর্যন্ত নির্ধারণীসহ প্রকল্প সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করলে গত ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদন করা হয়।

জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৬৩ জেলার ৪৭০টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হবে এরং এর জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। প্রকল্পটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৩৫ কোটি কোটি টাকা বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ১৩.২.২ অনুচ্ছেদে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন, স্মৃতিসৌধ, গণকবর প্রভৃতি সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করার করার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। সে বিবেচনায় প্রকল্পটি সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

এসব কারণেই একনেকের অনুমোদন চেয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৪৭০টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটির কার্যক্রম শেষ হলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা বাড়বে। পাশাপাশি তহবিল গঠনের মাধ্যমে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

সার্বিক বিবেচনায় প্রকল্পটির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সমাপ্ত করে কাঙ্ক্ষিত প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর অর্থাৎ জুন ২০২৪ পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। পরিকল্পনা বিভাগ থেকে জুন ২০২২ সালে জারি করা সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি সংক্রান্ত নির্দেশিকা ৫.২.৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত নির্দেশনা মোতাবেক প্রকল্পের চতুর্থবার মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব একনেক কর্তৃক অনুমোদনযোগ্য বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন।

এমন পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক মোট এক হাজার ২২৩ কোটি ৫৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন ‘উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ চতুর্থবার জুলাই ২০১২ থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত নির্ধারণের প্রস্তাব একনেকের অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যাচ্ছে না। কারণ এর জন্য প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কোথাও জমি নিয়ে মামলা আছে। বেশির ভাগই বাস্তবায়িত হয়েছে। মাত্র ১০টি উপজেলায় আমরা এই কমপ্লেক্স নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করতে পারিনি। তবে এখন এর কাজ এগোচ্ছে। আশা করছি সর্বশেষ একনেকে পাস হওয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সফলতায় কিছুটা দায়মুক্ত হয়েছি: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
সর্বশেষ খবর
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে স্কটল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে স্কটল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা
ভারতের উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস অফিসে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর
ভারতের উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস অফিসে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর
এই ৫ কথা প্রকাশ্যে না আনাই ভালো
এই ৫ কথা প্রকাশ্যে না আনাই ভালো
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি মামলার প্রতিবেদন ৯ জুলাই
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি মামলার প্রতিবেদন ৯ জুলাই
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?