চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম দিনে আদালতে আসেননি চিত্রনায়ক শাকিব খান।
বুধবার (৯ আগস্ট) ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়েদা হাফসা ঝুমার আদালতে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। তবে এদিন ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে আদালতে সাক্ষী দিতে আসেননি শাকিব খান। আদালতে দেওয়া সময়ের আবেদনে আইনজীবীর মাধ্যমে এ কারণ উল্লেখ করেন তিনি। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ৫ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।
শাকিব খানের আইনজীবী খায়রুল হাসান বিষয়টি জানিয়েছেন।
এর আগে, গত ৫ জুলাই ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়েদা হাফসা ঝুমা আসামি রহমত উল্ল্যাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। একইসঙ্গে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ৯ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
ওই দিন অভিযোগ গঠনের সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেন রহমত উল্ল্যাহ। এছাড়া আদালতের অনুমতি ছাড়া রহমত উল্ল্যাহর বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন শাকিবের আইনজীবী। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন। এর ফলে আদালতের অনুমতি ছাড়া রহমত উল্ল্যাহ বিদেশ যেতে পারবেন না।
এর আগে ২৩ মার্চ দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে শাকিব খান বাদী হয়ে রহমত উল্ল্যাহ নামে এই প্রযোজকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আসামিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন আদালত।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, চার বছর আগে ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামে ছবিতে অভিনয় করতে চুক্তিবদ্ধ হন শাকিব খান। এ সিনেমায় নায়িকা হিসেবে শিবা আলী খানকে মনোনীত করা হয়। ছবির শুটিংয়ের জন্য ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট অস্ট্রেলিয়া যান শাকিব খান। শিবা আলী খান ভিসা জটিলতার জন্য শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়া যেতে পারেননি। তার জায়গায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান রেনেসা সাবরিনের সঙ্গে শাকিবকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন রহমত উল্ল্যাহ। ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে বিষয়টি নাকচ করে দেন শাকিব।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, শুটিং শেষে শাকিবকে রিফ্রেশমেন্টের জন্য ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রেনেসা সাবরিনসহ আরও দুই থেকে তিন জন অপরিচিত লোক দেখতে পান শাকিব। মামলার আসামি রহমত উল্ল্যাহসহ অন্যদের সঙ্গে ক্লাবে খাওয়া-দাওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পানীয় পান করেন। এক পর্যায়ে শাকিব অসুস্থবোধ করেন। হোটেলে ফিরে আসার সময় রহমত উল্ল্যাহ এবং অন্যদের খোঁজ করেন সাকিব। তবে তাদের না পেয়ে রেনেসা সাবরিনের কাছে বিদায় নিয়ে গভীর রাতে হোটেলে ফিরতে চান। তখন রেনেসা সাবরিন বলেন, ‘আপনি যেহেতু অসুস্থবোধ করছেন, তাহলে আমি আপনাকে হোটেল রুমে পৌঁছে দিয়ে আসি।’ শাকিব অনেকটা নিরুপায় হয়ে তার প্রস্তাবে রাজি হন এবং হোটেল রুমের যেতে ক্লাব থেকে বের হন। হোটেলে ফেরার সময় বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে অজ্ঞান হয়ে যান শাকিব।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, পরদিন সকালে আসামি রহমত উল্ল্যাহ শাকিবকে ফোনে বলেন, ‘তুমি রাতে ওই নারীর সঙ্গে কী করেছো সবকিছুর ভিডিও ক্লিপ আমার হাতে। তুমি যদি আমাকে এক লাখ ডলার চাঁদা না দাও তাহলে সব ভিডিও ক্লিপ এবং রেনেসা সাবরিনকে নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে তোমার নামে অভিযোগ করবো। তাহলে তুমি বাংলাদেশে যেতে পারবে না।’ এ রকম বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হলে এক পর্যায়ে শাকিব ভয় পেয়ে যান। ভয়ে এবং ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক সমস্যার কথা চিন্তা করে আসামি রহমত উল্ল্যাহকে পাঁচ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার দেন। পরে রহমত উল্ল্যাহ তাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে মোট ৪০ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন। এরপর আর চাঁদা দিতে না পারায় শাকিবকে জানানো হয়, ‘তোমার নামে অস্ট্রেলিয়ায় অভিযোগ করা হয়েছে।’ চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দিলে রহমত উল্ল্যাহ বিভিন্ন জায়গায় যেমন-ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং শাকিবের পরিবারের সদস্যদের কাছে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটাতে থাকেন। এরপর ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ রহমত উল্ল্যাহ শাকিব খানের কাছে এক লাখ ডলার চাঁদা দাবি করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন বলেও অভিযোগ করা হয়।