ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর ভাস্কর্য নকল করে মৌলিক শিল্পকর্ম হিসেবে প্রদর্শনীতে উপস্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। আখতার আহমেদ রাশা নামে এক নিউইয়র্ক প্রবাসীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জাগরণ সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর সন্তান ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী বলেন, ‘আমার মা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর ভাস্কর্যশিল্প সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। মূলত কুড়িয়ে পাওয়া ও পরিত্যক্ত গাছের গুঁড়ি, শুকনো ডাল, বাঁশ, পানিতে ভেসে আসা কাঠের খণ্ড, গাছে জন্ম নেওয়া ছত্রাক ইত্যাদি ছিল তার ভাস্কর্য তৈরির উপকরণ ও মাধ্যম। দেশ-বিদেশে শিল্পানুরাগীদের কাছে সমাদৃত এ ভাস্কর্যগুলো কেবল দৃষ্টিনন্দনই নয়, এই শিল্পকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার এবং যুদ্ধপরবর্তী সময়ে পরিবার ও সমাজে নিগৃহীত একজন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা নারীর আগুনপাখি ফিনিক্স হয়ে ওঠার গল্প। মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদান এবং শিল্পকর্মের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার তাকে ২০১০ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পদক দেন।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি নিউইয়র্ক, ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর বিভিন্ন সময়ের ভাস্কর্য নকল করে মৌলিক শিল্পকর্ম হিসেবে প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করছেন নিউইয়র্ক প্রবাসী আখতার আহমেদ রাশা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি, আরও কেউ কেউ ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর শিল্পকর্ম সামান্য পরিবর্তন বা বিকৃত করে নিজেদের নামে চালিয়ে দিচ্ছেন।’
শিল্পকর্ম নকল করে প্রকৃত শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পরিবর্তে বরং তার সমগ্র জীবনের সাধনাকে অসম্মান করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একজন অগ্রজ শিল্পীর শিল্পকর্ম, মাধ্যম, দর্শন বা জীবনবোধ দ্বারা যে কোনও ব্যক্তি বা শিল্পী অনুপ্রাণিত হতে পারেন। কিন্তু অনুসরণ আর অনুকরণের মধ্যে যে পার্থক্য তা অনুধাবন করা জরুরি। অনুকরণ, নকল বা কপি করা কাজ কখনও মৌলিক শিল্পকর্ম হিসেবে প্রদর্শিত হতে পারে না। এটি নন্দনতত্ত্বের নৈতিকতার পরিপন্থি। এই অশিল্পীসুলভ আচরণের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন ‘মৌখিকভাবে বহুবার অনুরোধের পরও আখতার আহমেদ রাশার এ চৌর্যবৃত্তিকে নিবৃত্ত করা সম্ভব হয়নি, তাই আইনি প্রক্রিয়া নিতে বাধ্য হচ্ছি।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর শিল্পকর্ম সংরক্ষণ না হওয়ায় তা হারিয়ে যেতে বসেছে। তার শিল্পকর্মের চৌর্যবৃত্তি হচ্ছে। এসব শিল্পকর্ম সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ করা দরকার। তবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকর্মগুলো কপিরাইট করা ঠিক নয়। সবার জন্য উন্মুক্ত থাকতে হবে।’
শিল্পকর্ম নকল করা, কপি করাকে শিল্পসন্ত্রাস বলে অভিযোগ করেন অভিনেত্রী শম্পা রেজা। তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে সরকারের চোখ বন্ধ কেন? ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন কপি হয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।’ তিনি এ সময় চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান।
জাগরণ সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের নির্বাহী সভাপতি ও আবৃত্তিশিল্পী শওকত আলী বলেন, ‘সরকার উদ্যোগ নিলে জাতীয় জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর শিল্পকর্ম সংরক্ষণ করা সম্ভব।’ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সেম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন– মানবাধিকারকর্মী শারমিন শামস মুনমুন, লেখক শাশ্বতী দীপ্ত এবং তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহাদাত রাসেল প্রমুখ।