রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ‘অগ্নিসন্ত্রাস’ করা বিএনপির নেতাকর্মী এবং ১৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিমান ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ‘হত্যা’র অভিযোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
রবিবার (১০ ডিসেম্বর) বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এমন দাবি করেন তারা। দুই ঘটনায় সহিংসতার শিকার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ‘মায়ের কান্না ও অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ’ শিরোনামে এই সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ‘নিহত’ বিমান ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের পরিবারের সদস্য, ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সহিংসতার শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবার, ২০১৩-১৪-১৫ বিএনপির আন্দোলনের সময়ে ‘অগ্নিসন্ত্রাসের’ শিকার ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা এসব ঘটনার বিচার করে অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান। যাতে এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আর কেউ ঘটাতে সাহস না করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জিয়াউর রহমানের সামরিক ট্রাইব্যুনালে সশস্ত্র বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের বিচার, ২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, ২০১৩, ১৪,১৫ সালের অগ্নিসন্ত্রাসের ওপর তথ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। আহত ব্যক্তি ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা নিজেদের কষ্টের কথা তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এতে অত্যন্ত আবেগ ঘন পরিবেশ তৈরি হয়। প্রত্যেকেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে দেওয়া বক্তব্যে আর্তনাদ করেন। আহতরা বেঁচে থাকার যন্ত্রণা ও কষ্টের কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের দিন রাজধানীর ফকিরাপুলে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজের শিশু মেয়ে তানহা বক্তব্য রাখে। সে বলে, আমি টাকা জমা করছি আল্লাহর কাছ থেকে আমার বাবাকে কিনে আনবো। আমি বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হবো।
আলোচনা সভার শুরুতে পারভেজের স্ত্রী রুমা আক্তার বলেন, আমিরুলকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমরা তার মুখটাও দেখতে পারিনি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই— আমিরুলকে যেভাবে মারা হয়েছে, তার চেয়েও যেন কঠিন শাস্তি দেওয়া হয় ওই হত্যাকারীদের। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার এই একটাই দাবি।
সম্প্রতি রাজধানী যাত্রাবাড়ীতে আছিম পরিবহনের বাসে আগুন দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পুড়ে মারা যান ঘুমিয়ে থাকা বাসের হেলপার আবু নাঈম। উপার্জনক্ষম একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা নাঈমের মা-বাবা। অনুষ্ঠানে কথা বলেন তারা মা। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলাম-বিএনপি মানুষ পুড়িয়ে মারছে। আমার ছেলেকে পুড়িয়ে মেরেছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর কঠিন বিচার চাই। জামায়াত-বিএনপি আমার ছেলেকে পুড়িয়ে মেরেছে, তারা যাতে বুঝতে পারে মায়ের কষ্ট কী, সেই জন্য তাদের কঠিন বিচার চাই।
গাইবান্ধায় শিবিরের সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত জাহিদুল ইলাম জাহিদের বাবা আবুল হোসেন বলেন, জামায়াত-শিবিরের লোকেরা আমার ছেলেকে কুপিয়ে কুপিয়ে, পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে। আমার ছেলের অপরাধ সে আওয়ামী লীগ করতো— এই জন্যই তাকে হত্যা করে তারা। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই আবেদন জানাই, এদের বিচার যেন নিশ্চিত হয়।
মায়ের কান্না সভাপতি কামরুজ্জামান লেলিন তার বক্তব্যে বলেন, জিয়াউর রহমানের সামরিক ট্রাইব্যুনালে হত্যার শিকার বাবার কবর কোথায় সেটাও আমরা অনেক খুঁজেছি। আজিমপুর কবরস্থানে খুঁজতে গিয়ে সেখানকার লোকদের কাছে জানতে পেরেছি— অনেক লাশ নিয়ে আসা হতো তখন, যাদের গোংড়ানোর শব্দ শোনা যেতো। ওইভাবে তাদের কবর দিতে নির্দেশ দেওয়া হতো। এখনই জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করছি আমি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভা শেষ হওয়ার আগেই ওবায়দুল কাদের চলে যান। এরপর আওয়ামী লীগের কোনও নেতাই বক্তব্য রাখেননি।