X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১
নিয়ম ভেঙে চলছে এসটিএস

লেকের পাড়ে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর-শিশুপার্ক, পাশেই ময়লার ডিপো!

আবির হাকিম
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:০৯আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:০৭

রাজধানীর পশ্চিম পান্থপথের রাসেল স্কয়ার, যা বত্রিশের মোড় নামে পরিচিত। ব্যস্ততম মিরপুর রোডের এই মোড়টির এক পাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’, তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর। সামনে ধানমন্ডি লেক, আরেক পাশে শেখ রাসেল শিশুপার্ক। ব্যস্ততম এলাকার এসব জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ঠিক মাঝখানেই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে একটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার সেন্টার (এসটিএস)। এসটিএসে বর্জ্য আনা এবং সরিয়ে নেওয়ার কাজ রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে শেষ করার নিয়ম থাকলেও এখানে সারা দিন ধরেই চলে বর্জ্য আনা নেওয়ার কাজ। এতে করে দূষণের পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে শিশুপার্ক, ধানমন্ডি লেক ও বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের নান্দনিক পরিবেশও।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের পর থেকে রাসেল স্কয়ার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাসা-বাড়ি থেকে ভ্যানে করে ময়লা নিয়ে আসছে স্থানীয় বর্জ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা। সংগৃহীত আবর্জনা আবার সিটি করপোরেশনের গাড়িতে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে করে সামনের ফুটপাত ব্যবহারকারীদের জন্য এ রাস্তা দিয়ে হাঁটাই কষ্টকর হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে রুমাল বা হাত দিয়ে নাক চেপে রাস্তা পার হন তারা।

শিশু পার্কের পাশেই রাখা হয়েছে ময়লার গাড়ি, জমছে ময়লার বস্তা (ছবি: প্রতিবেদক)

ময়লা সংগ্রহের কাজে থাকা ভ্যানগাড়ির জটলাও সারা দিন লেগেই থাকে এই মোড়ে। দিনের ব্যস্ত সময়ে ভ্যানগাড়ির জটলা এলাকা ছাড়িয়ে প্রায় কয়েকশো মিটার দূরের রাফা প্লাজা পর্যন্তও চলে যায়। এসটিএসের ভেতরে যতটা না বর্জ্য থাকে তার চাইতে ঢের বেশি থাকে রাস্তার ওপর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভ্যানগুলোতে। ভ্যানের ওপরে ঢাকনা দেওয়া না থাকায় সেখানে জড়ো হয়ে ময়লা নিয়ে টানাটানি করে কাক। আবার বর্জ্যের জলীয় অংশ এসটিএস থেকে বের হয়ে সামনের রাস্তা ও ফুটপাতে জমতে থাকে। এসবের দুর্গন্ধে ট্রাফিক সিগনালে দাঁড়ানো যাত্রীদেরও নাক চাপা দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

শেখ রাসেল শিশুপার্কের ভেতরের কয়েকটি রাইড একদম এসটিএসের সঙ্গে লাগোয়া। শিশুরা নাক চেপে ধরেই এসব রাইড ব্যবহার করেন। এসটিএসের পেছনের অংশে থাকা ধানমন্ডি লেক এবং বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের দর্শনার্থীরাও এ স্থানটি পার হন নাক ঢেকে।

ময়লার ভ্যানে বসেছে কাক (ছবি: প্রতিবেদক)

এসটিএসে কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ময়লা সরানোর নির্দিষ্ট সময় থাকলেও নানা কারণে ওই সময়ে তা সরানো যায় না। অনেক সময় পুরো এলাকা থেকে ময়লা আসতেই দুপুর হয়ে যায়। আবার মাঝেমধ্যে ময়লা নেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশনের যে ট্রাকগুলো আসে সেগুলোর শিডিউলের কারণেও এখানে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি ময়লা জমে যায়।

এসটিএসের সামনের ফুটপাত ধরে নাক-মুখ ঢেকে হেঁটে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে দুর্গন্ধের কারণে সেখানে কথা বলেননি তারা।

শামীম হোসেন নামে এক পথচারী এসটিএস এলাকা পার হয়ে তারপর মুখ থেকে হাত নামিয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, এই মোড়ে সব সময়ই ট্রাফিক সিগনাল থাকে। গণপরিবহন ও ময়লার ভ্যানগুলো তখন পাশাপাশি যানজটে দাঁড়ায়। হেঁটে পার হতে হলে দুর্গন্ধের কারণে দম বন্ধ করে পার হতে হয়।

হাত দিয়ে নাক ঢেকে রাস্তা পার হচ্ছেন তারা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা গেছে, কলাবাগান মোড়ের এ এসটিএসে এক ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা থাকলেও এখানে করপোরেশনের ১৫ নম্বর ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্জ্য জমা করা হচ্ছে। এতে করে এসটিএসের অভ্যন্তরে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে রাতের মধ্যেই তা স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ সফিউল্লাহ সিদ্দিক ভুঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই জায়গায় ময়লা স্তূপ করে ফেলা হতো। এসটিএস নির্মাণের পর খোলা জায়গায় ময়লা ফেলা বন্ধ করা গেছে। তবে দুইটি ওয়ার্ডের ময়লা এই এসটিএসে প্রক্রিয়াজাত করার কারণে সামনে ময়লার ভ্যানের দীর্ঘ সারি হয়ে যায়।’

তবে ড. সফিউল্লাহ জানান, ইতোমধ্যে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে আরেকটি নতুন এসটিএস স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। আগামী ডিসেম্বরের আগেই তা চালু করা যাবে এবং এতে করে কলাবাগান মোড়ের এসটিএস থেকে সৃষ্ট ভোগান্তি আর থাকবে না।

চারিদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ময়লা

এদিকে কলাবাগান মোড় ও আশপাশের নান্দনিক স্থাপনাগুলোর মাঝখানে এ এসটিএস নির্মাণের প্রক্রিয়াকেই ত্রুটিপূর্ণ বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদেরা।

ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাসা-বাড়ি বা যেখানে ময়লা উৎপাদন হয় সেখান থেকে শুরু করে ট্রান্সফার ও ডিসপোজাল পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হতে হবে। এমন একটা জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসটিএস নির্মাণের আগেই পার্শ্ববর্তী পরিবেশের ওপর এর প্রভাব কেমন হবে তা আমলে নেওয়ার দরকার ছিল।’

এ সমস্যার সমাধান প্রসঙ্গে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘মানুষের ভোগান্তি কমিয়ে এ সমাধান করতে হলে প্রথমেই উপযুক্ত স্থানে বেশি ধারণক্ষমতার এসটিএস নির্মাণ করে এর ওপর চাপ কমাতে হবে। পাশাপাশি যদি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পুরো প্রক্রিয়াটি যদি মাটির নিচে নেওয়া যায় তাতেও দূষণ কমে আসবে।’

/এসটিএস/আরআইজে/ইউএস/
সম্পর্কিত
বনানীতে যাত্রীবাহী বাসে আগুন
ইট-পাথরের নগরীতে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
সর্বশেষ খবর
পড়ে থাকা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মা ও ২ শিশুসন্তানের মৃত্যু
পড়ে থাকা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মা ও ২ শিশুসন্তানের মৃত্যু
ভারত সিরিজে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির খোঁজে বাংলাদেশ
ভারত সিরিজে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির খোঁজে বাংলাদেশ
ফিতরা-জাকাতের নামেও প্রতারণা
ফিতরা-জাকাতের নামেও প্রতারণা
বোনকে নিয়ে সনু নিগমের প্রথম গান!
বোনকে নিয়ে সনু নিগমের প্রথম গান!
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই