X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানে উম্মাহাতুল মুমিনিনদের আমল

মুহাম্মাদ মিযানুর রহমান
২৬ মার্চ ২০২৪, ১৫:২৪আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৪, ১৫:২৪

মাহে রমজান মুমিনদের জীবনের বসন্ত, এবাদতের মৌসুম, পুণ্যময় আবহ জেগে ওঠার মাহেন্দ্রক্ষণ। এই মাস পরকালীন পাথেয় অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ। উম্মাহাতুল মুমিনিনরা (নবীজির সা. এর স্ত্রী) হলেন মুসলিম উম্মাহর জন্য আদর্শস্বরূপ। হযরত মোহাম্মদ (সা.) তাদের মুসলিম উম্মাহর শিক্ষকরূপেই প্রস্তুত করেছিলেন। তাই রমজান মাসে রাসুলের (সা.) স্ত্রীদের আমলগুলো উম্মাহর জন্য অনুসরণীয়। 

তাহাজ্জুদ ও তারাবির নামাজ

মাহে রমজানে উম্মাহাতুল মুমিনীলরা তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজে মনোযোগী হতেন। তারা নারী সাহাবিদের নামাজ শেখাতেন। নামাজ শেখানোর জন্যে কখনও কখনও রমজানের রাতে জামাতে নামাজ আদায় করতেন। আল্লামা ইবরাহিম নাখই (রহ.) বলেন―‘উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) মাঝেমধ্যে নারী সাহাবিদের ইমামতি করতেন এবং তিনি তাদের মাঝে দাঁড়াতেন।’ (কিতাবুল আসার লি আবি হানিফা, হাদিস : ২১৭)

প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা জাফর আহমদ উসমানি (রহ.) ওই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘হজরত আয়েশার (রা.) নামাজের ইমামতি নারী সাহাবিদের নামাজ শিক্ষা দেওয়ার জন্য ছিল।’ (ইলাউস সুনান : ৩/১৩০১)

তিলাওয়াত ও জিকির

মাহে রমজানে উম্মাহাতুল মুমিনিনদের প্রিয় আমল ছিল খুব বেশি কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির করা। সিরাত গ্রন্থগুলোতে এসেছে, তারা রমজানে খুব বেশি কোরআন খতমের চেষ্টা করতেন। কেননা এটা ছিল নবীজির (সা.) প্রিয় আমল। হজরত ফাতেমা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন― প্রতি রমজানে জিবরাইলকে (আ.) একবার কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। কিন্তু মৃত্যুর বছর তিনি তাকে দুবার কোরআন শোনান। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৮৫)

দান করা

মাহে রমজানে উম্মাহাতুল মুমিনিনরা বেশি বেশি দান করতে ভালোবাসতেন। হজরত জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.) ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল। তিনি নানা ধরনের হস্তশিল্পে পারদর্শী ছিলেন। আর তা থেকে উপার্জিত অর্থ তিনি অসহায় মানুষকে দান করতেন। হজরত আয়েশার (রা.) দানশীলতাও ছিল সুপ্রসিদ্ধ। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ১০/২১০)

অধিক পরিমাণ দোয়া

মাহে রমজানে উম্মাহাতুল মুমিনিনরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে অধিক পরিমাণ দোয়া করতেন। কেননা নবীজি (সা.) রমজানে দোয়া করার প্রতি উৎসাহিত করে বলেছেন, ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। হজরত আয়েশা (রা.) নবীজিকে (সা.) জিজ্ঞাসা করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি জানতে পারি শবে কদর কোনটি, তাহলে আমি সে রাতে কী দোয়া করবো?’

নবীজি (সা.) বলেন, ‘তুমি বলবো―হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল দয়ালু, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)

সম্মিলিত ইবাদত

রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে তার পরিবার-পরিজনদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে ইবাদত করতেন। যেমন সিরাত গ্রন্থে এসেছে, ‘রমজানে নবীজি (সা.) তার স্ত্রী ও কন্যাদের একত্র করতেন এবং তাদের নিয়ে রাতের নামাজ আদায় করতেন।’ (আল আতিক, পৃষ্ঠা ২০৮) 

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (সা.) রাত জেগে ইবাদত করতেন, ‘তার পরিবারকে ডেকে দিতেন এবং লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৪

সান্নিধ্য লাভের প্রতিযোগিতা

রাসুলের (সা.) স্ত্রীরা সবসময় তার সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভের আকাঙ্ক্ষা রাখতেন। রমজানে তাদের এই আকাঙ্ক্ষা কমে যেত না, বরং তা নিয়ে স্ত্রীদের ভেতর নীরব প্রতিযোগিতা ছিল। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। আমি তার জন্য তাঁবু টানিয়ে দিই। ফজরের নামাজের পর তিনি তাতে থাকতেন।’

হাফসা (রা.) এসে আয়েশার (রা.) কাছে আরও একটি তাবু স্থাপনের অনুমতি চাইলেন। আয়েশা (রা.) অনুমতি দেন। এমনটি দেখে জয়নব বিনতে জাহশও (রা.) একটি তাবু স্থাপন করলেন। ভোরবেলা রাসুল (সা.) এতগুলো তাঁবু দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলেন। সব কিছু জেনে তিনি বললেন, এগুলো দিয়ে কি তোমরা পুণ্যের আশা করছ? অতঃপর তিনি এই মাসে আর ইতিকাফ করলেন না। পরবর্তী মাস শাওয়ালে তিনি ইতিকাফ করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯২৮)

নবীজির (সা.) সঙ্গে সাক্ষাৎ

ইতিকাফ অবস্থায় রাসুলের (সা.) স্ত্রীরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যেতেন এবং তিনিও তাদের সাক্ষাৎ দিতেন। হাসান বিন আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা সফিয়া বিন হুয়াই (রা.) রমজানের শেষ ১০ দিনে মসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় রাসুলের (সা.) সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। তিনি রাসুলের (সা.) সঙ্গে কথা বলে ফিরে যেতে উদ্যত হন। তখন রাসুলও তাকে এগিয়ে দিতে আসেন। উম্মে সালামার দরজার কাছে মসজিদের দরজা পৌঁছলে দুজন আনসারি রাসুলকে (সা.) সালাম দেন। 

তখন তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা চলতে থাকো। ইনি সফিয়্যাহ বিনতে হুআই (রা.)। তারা দুজন বলল, হে আল্লাহর রাসুল, সুবহানাল্লাহ। তাদের বিষয়টি অন্যরকম মনে হলো।’

রাসুল (সা.) বললেন, শয়তান আদম সন্তানের সঙ্গে রক্তের মতো অবস্থান করে। আমার মনে হয়েছে তোমাদের অন্তরে কোনও মন্দ কিছু এসেছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৩৫)

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া নুরুল উলুম পান্থশালা, নরসিংদী

/ইউএস/
সম্পর্কিত
ঈদুল ফিতরে করণীয়
চাঁদ দেখা যায়নি, ঈদ বৃহস্পতিবার
রমজানে নবীজির রাতের আমল
সর্বশেষ খবর
উচ্চশিক্ষার সাম্প্রতিক প্রবণতা
উচ্চশিক্ষার সাম্প্রতিক প্রবণতা
জাপানে ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত
জাপানে ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক
ঝিনাইদহ-১ আসনে উপনির্বাচনমনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক
‘ক্রিকেট বেসবলে পরিণত হচ্ছে’
‘ক্রিকেট বেসবলে পরিণত হচ্ছে’
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই