বাংলাদেশের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার ‘হত্যা মামলা’র তদন্তে ভারত সরকার বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে সব ধরনের সাহায্য করবে বলে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে দিল্লিতে ভারত সরকারের মুখপাত্র এ প্রসঙ্গে একবারও ‘হত্যা’ বা ‘হত্যাকাণ্ড’ জাতীয় কোনও শব্দ ব্যবহার করেননি। তিনি শুধু এটিকে ‘কেস’ বা ‘মামলা’ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ভারত সরকার অন্তত এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলে বর্ণনা করতে চাইছে না।
এদিন (বৃহস্পতিবার) বিকালে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন।
তার কাছে ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল—‘বাংলাদেশের পার্লামেন্টারিয়ান আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতে এসে উধাও হয়ে গেছেন এবং খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার লাশও নাকি টুকরো টুকরো করে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে ছুড়ে ফেলা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার কাছে বিস্তারিত আর কোনও তথ্য কি আছে? এমনও খবর আসছে তার ব্যবসায়িক কার্যকলাপের জন্যই নাকি এই হত্যাকাণ্ড, সেটা নিয়েও কি আপনার কাছে কোনও খবর আছে? আর দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ সরকার কি বিষয়টি ইতোমধ্যে ভারতের কাছে উত্থাপন করেছে?’
জবাবে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমি এ প্রসঙ্গে যেটা বলতে পারি তা হলো—এই নির্দিষ্ট মামলাটির তদন্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করছে। তারা নিজেদের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য বা সাক্ষ্যপ্রমাণও শেয়ার করছে।’
‘আমাদের পক্ষ থেকে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পক্ষকে সব ধরনের সমর্থন ও সহযোগিতাও দেওয়া হচ্ছে’—বলেন তিনি।
মুখপাত্রের এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, তিনি খুব সচেতনভাবে ‘হত্যা’ বা ওই জাতীয় শব্দ এড়িয়ে গেছেন। বস্তুত, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের দেহাবশেষ নিশ্চিতভাবে উদ্ধার হওয়ার আগে এটিকে ভারত সরকার অন্তত হত্যাকাণ্ড বলতে চাইছে না।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মে কলকাতার উপকণ্ঠে বাগজোলা খালে দিনভর তল্লাশি চালিয়ে ডুবুরিরা বেশ অনেকটা পরিমাণ মাংস-চুল-হাড়ের অংশ উদ্ধার করেছেন। সেটা কোনও মানুষের শরীরের অংশ কিনা, তা জানতে ফরেনসিক পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
তবে ওই দেহাবশেষের অংশ কোনও মানুষের হলেও তা এমপি আনোয়ারুল আজীমের কিনা, তা নিশ্চিতভাবে জানতে ডিএনএ পরীক্ষা করার প্রয়োজন হবে। সেই জন্য এমপির কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ও তার ভাইকে কলকাতায় এসে ডিএনএ নমুনা দেওয়ার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ থেকে পর পর তিনবার এমপি নির্বাচিত হন। গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান তিনি। সেখানে বরাহনগর থানার মগুলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামের এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হলে তার আর খোঁজ মেলেনি।
এরপর গত ১৫ মে বিকালে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মহাপরিদর্শক (সিআইডি) অখিলেশ চতুর্বেদী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছি, যার ভিত্তিতে মনে করছি আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করা হয়েছে। তবে মরদেহ এখনও পাওয়া যায়নি। পূর্ব কলকাতার নিউ টাউন অঞ্চলে যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজীম উঠেছিলেন, সেটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দফতরের কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার রায়ের। সন্দীপের কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি। আখতারুজ্জামানই ওই ফ্ল্যাটে আজীমের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’