রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মোমেনবাগ এলাকায় নিজ বাসায় পুলিশ সদস্যের বাবা-মাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পুরোনো শত্রুদের সামনে রেখে মামলার তদন্ত চালাচ্ছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নিহত শফিকুর রহমানের পুরোনো শত্রু ও জমি সংক্রান্ত বিরোধ সংশ্লিষ্টদের সন্দেহে রেখে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। এছাড়াও এ জোড়া খুনের ঘটনায় নিহত দম্পত্তির পরিবারের সদস্য ও বাড়ির ভাড়াটিয়াদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) ভোরে নিজ বাসায় শফিকুর রহমান (৬০) ও তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনকে (৫০) নৃশংসভাবে কুপিয়া হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সে দিন রাতেই নিহত দম্পতির ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন (ইমন) বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাড়ির আশপাশের একাধিক সিসিটিভি ফুটেজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে খুনিদের শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। তবে ওই এলাকায় তুলনামূলক সিসি ক্যামেরা খুবই কম। যার ফলে খুনিদের শনাক্তে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিহত শফিকুরের চাচাতো ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তার জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে পরপর চারটি মামলা করেছিল ওই পরিবার। এখনও দুটি মামলার তদন্ত চলমান। এ সংক্রান্ত বিরোধ ছাড়া শফিকুর ও তার স্ত্রীর সঙ্গে আর কারও কোনও শত্রুতা আছে কিনা সেটাও খুঁজে দেখা হচ্ছে। ফলে জমি সংক্রান্ত বিরোধকে গুরুত্ব দিয়ে খুনিদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ওই ভবনের অন্য বাসিন্দাদের সন্দেহে রেখে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ফোন কল ও অন্যান্য সব কিছু বিশ্লেষণ ও যাচাই-বাছাই চলছে।
শফিকুর দম্পত্তি হত্যাকাণ্ড একটি পরিকল্পিত হত্যা। তাই হত্যার আগে খুনিরা একাধিকবার ঘটনাস্থল রেকি করে। এছাড়া শফিকুরের বাড়িতে খুনিদের আসা যাওয়া ছিল। কেননা খুনিরা হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে বাড়ির পেছনের একটি নির্মাণাধীন ভবন ব্যবহার করেছে। তারা শফিকুরের বাড়ির খুটিনাটি বিষয় আগে থেকেই জানতো। সেহেতু সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় খুনিদের দ্রুত শনাক্ত সম্ভব বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
নিহত দম্পত্তির ছেলে ও মামলার বাদী আবদুল্লাহ আল মামুন (ইমন) বলেন, ‘খুনিরা আমাদের খুবই পরিচিত। তারা ঠাণ্ডা মাথায় ও দীর্ঘ পরিকল্পনা করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। খুনিরা আমাদের সব কিছুই জানে। তবে ঢাকায় আমার বা বাবার কোনও শত্রু নেই। এখানে আমাদের সঙ্গে কারও কোনও বিরোধ নেই। শুধুমাত্র গ্রামের বাড়িতে জমি-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আত্মীয়দের মধ্যে বিরোধ আছে। যার ফলে আমরা এখনও কাউকে নির্দিষ্ট করে সন্দেহ করতে পারছি না।’
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ‘শফিকুর দম্পত্তি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনও খুনিদের শনাক্ত করা যায়নি। আমরা নানা বিষয় সামনে রেখে মামলা তদন্ত করছি। সম্ভাব্য সবার সঙ্গে কথা হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখনই নির্দিষ্ট করে বলার মতো কিছু পাওয়া যায়নি। নিহতের পুরোনো শত্রু, পরিবারের সদস্য, আশপাশের বাসিন্দাসহ সব বিষয় সামনে রেখে আমরা তদন্ত এগোচ্ছি।’
এর আগে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) ভোর সকালে যাত্রাবাড়ী থানাধীন পশ্চিম মোমেনবাগ ১৭৫ নম্বর নিজ বাড়িতে শফিকুর রহমান ও তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে রাত নয়টায় মাতুয়াইল কবরস্থানে এ দম্পতির মরদেহ দাফন করা হয়। ঘটনার পর থেকেই নিহতের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
আরও পড়ুন-