কম সময়ে অনেক বৃষ্টিপাত হওয়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকা হতে পানি সরতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। এছাড়াও নগরবাসীর অসচেতনতায় যত্রতত্র বিপুল পরিমাণ পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্যের কারণে নর্দমায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছিল না বলেও বৃষ্টির পানি সরতে সময় লেগেছে বলে জানান তিনি।
শনিবার (১৩ জুলাই) বিকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাদসিকের নেওয়া সামষ্টিক কার্যক্রম এবং সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গা ও এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি নিয়ে গণমাধ্যমকে ব্রিফিংকালে ঢাদসিক প্রনিক মো. মিজানুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময়ে ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরপরও দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। এটি স্বাভাবিক মাত্রার চাইতে অনেক বেশি। যার কারণে বৃষ্টির পানি সরতে সময় লেগেছে। এছাড়া নগরবাসীর ফেলা পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্যের কারণে নর্দমাগুলোতে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হয়েছে। আমরা লোকবল দিয়ে একদিকে পরিষ্কার করছি, অন্যদিকে সেগুলো আটকে যাচ্ছে। ফলে, পানি সরতে দেরি হয়েছে। পানি সরতে বিলম্ব হলেই স্বাভাবিকভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। জলাবদ্ধতা নিরসনের সুফল পেতে নগরবাসীকে সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান এই কর্মকর্তা।
নদ-নদীর পানির স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় স্লুইস গেটগুলোও সক্ষমতা অনুযায়ী পানি নিষ্কাশন করতে না পারায় পানি সরতে বিলম্ব হয়েছে উল্লেখ করে মো. মিজানুর রহমান বলেন, পানি সরে যাওয়ার জন্য স্লুইস গেটগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে ২০২১ সালে ৫৫টি স্লইস গেট ও রেগুলেটর পেয়েছি। এরমধ্যে ৩৭টি বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এবং বাকি ১৮টি কামরাঙ্গীরচরে অবস্থিত। আমরা সব স্লুইস গেট সচল করেছি। কিন্তু সারা দেশে অতি বৃষ্টি হওয়ায় ঢাকা শহর ঘিরে চারপাশের যে নদ-নদীগুলো রয়েছে সেগুলোর পানির স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্লুইস গেট দিয়ে সক্ষমতা অনুযায়ী পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হচ্ছে না। এটিও পানি সরতে বিলম্ব হওয়ার আরেকটি প্রাকৃতিক কারণ।
ধোলাইখাল ও কমলাপুর পানির পাম্প স্টেশনের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের হিসেব তুলে ধরে ঢাদসিক প্রনিক বলেন, আমাদের কমলাপুরের টিটি পাড়া ও ধোলাইখাল পাম্প স্টেশনের ছোট-বড় ৭টি পাম্প মেশিন পানি নিষ্কাশন করছে। শুধু ধোলাইখাল ও টিটি পাড়া পাম্প স্টেশনের মাধ্যমে গতকাল সকাল সাড়ে ৬টা থেকে আজ বেলা ১২টা পর্যন্ত ১৪৩ কোটি ৫৫ লাখ লিটার পানি অপসারণ করা হয়েছে।
এ সময় তিনি নিউমার্কেট ও সংলগ্ন এলাকা এবং কলাবাগান, কাঁঠালবাগান ও গ্রীন রোড এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে জানিয়ে বলেন, নিউমার্কেট এলাকায় পানি নিষ্কাশনের আউটলেট নিরাপত্তাজনিত কারণে বিজিবি বন্ধ করে দিয়েছিল। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর আমরা পিলখানার ভেতর দিয়ে নতুন করে নর্দমা লাইন স্থাপনে অনাপত্তি পেয়েছি। সেটির দরপত্র শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। সেটি সম্পন্ন হলে নিউমার্কেট ও সংলগ্ন এলাকায় আর জলাবদ্ধতা থাকবে না। তাছাড়া গ্রীন রোড, কলাবাগানসহ সংলগ্ন এলাকার পানি হাতিরঝিল হয়ে নিষ্কাশিত হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের জন্য হাতিরঝিল দিয়ে নিষ্কাশন সক্ষমতা অনেক কমে গেছে। এভাবে সেবা সংস্থাগুলোর উন্নয়ন প্রকল্প ও কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সেসব কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতার সুরাহা সম্ভব হবে না।
প্রেস ব্রিফিংকালে অন্যদের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিম আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. খায়রুল বাকের, নির্বাহী প্রকৌশলী ড. শফিউল্লাহ সিদ্দিক ভুঁইয়া, নির্বাহী প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।