সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের রেশ রয়ে গেছে আজ বুধবারও। সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষ ভাঙচুর ও তাদের হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এদিকে আতঙ্কে ভোর থেকেই হল ছাড়তে দেখা গেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকেও হল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। এর প্রতিবাদে গতকাল রাতেই আন্দোলন শুরু হয় রোকেয়া হলে। হল ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেত্রীদের হল ছাড়তে বাধ্য করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে বুধবার ভোর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হলেও আন্দোলন শুরু করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান, বিজয় একাত্তর হলেও অবস্থান নিয়ে ‘আমার ভাই নিহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের ৩৪৩ ও ৩৪৫ নম্বর কক্ষে ভাঙচুর চালিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। কক্ষ দুটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও তার অনুসারীরা থাকতেন। বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা এসময় কক্ষ দুটির জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দিয়েছেন। এসময় শয়ন ও তার অনুসারীরা হলে উপস্থিত ছিলেন না। তবে সূর্যসেন হলের ফটকে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনকারীরা একপর্যায়ে তাদেরও ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেন।
এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের রুমেও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছ। সৈকত থাকতেন কবি জসীমউদ্দিন হলে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন হলকে সন্ত্রাসমুক্ত করছে। আপনারা কাজটি অব্যাহত রাখুন এবং সবাই সংঘবদ্ধ থাকুন। যদি কোথাও কোনও বাধা আসে, তাহলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা মোকাবিলা করবো। এখন থেকে হল পরিচালনা করবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।’
এদিকে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী অবস্থান করছিলেন। হলটির দুপাশের কেচিগেটসহ (কলাপসিবল) মূলগেট বন্ধ করে দিয়েছিল হল প্রশাসন। পরে সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা গেটের তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে হল থেকে বের করে দেন তারা। পরে বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে ঘুরে ছাত্রলীগের নেতাদের কক্ষে ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধরা।
নীলক্ষেত, শাহবাগ ও মলচত্বরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।
এদিকে সারা দেশে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় নিতদের স্মরণে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল করার কর্মসূচি দিয়েছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা।
রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে এই ঘোষণা দিয়ে লিখেছেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলা ও গুলিবর্ষণে শহীদ ভাইদের জন্য বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল’ অনুষ্ঠিত হবে। আপনারা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলায় জেলায় গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল পালন করুন।
অপরদিকে ছাত্রলীগের আজ কোনও ঘোষিত কর্মসূচির কথা জানা যায়নি।
এসব বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক নেতার ফোনে কল দিয়েও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।