রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতুর নিচের কিছু অংশে ওয়াকওয়ে নির্মাণে ত্রুটি হয়েছে অভিযোগ করে সেই অংশ অপসারণের দাবি তোলা হয়েছে। ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এবং বছিলা এলাকাবাসীর ব্যানারে শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে বসিলা পুরাতন প্রাইমারি স্কুল সংলগ্ন ওয়াকওয়ে এলাকায় এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা থেকে এই ওয়াকওয়েকে ‘নদীর পাড়ে বসবাসকারী মানুষের ‘জীবন ও জীবিকা বিনষ্টকারী’ উল্লেখ করে অপসারণের দাবি জানানো হয়।
ধরা’র সদস্য সচির শরীফ জামিলের সভাপতিত্বে এবং নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানার সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধরা‘র উপদেষ্টা এবং নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড মুজিবুর রহমান হাওলাদার। এতে আরও অংশ নেন ইআরডিএ’র নির্বাহী পরিচালক মনির হোসেন, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, মিশন গ্রীন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান রনি প্রমুখ। এলাকাবাসীর পক্ষে বক্তব্য দেন সাগরিকা, সাইফুল ইসলাম, বসিলা মসজিদের খতিব এনামুলহক, কবির হোসেন, শহিদুল ইসলাম, ইমরানুল হক ইমন, রনজিত, হাজীনূর মোহাম্মদ ও মোহাম্মদ লাল। এছাড়াও, পরিবেশকর্মী, সাংবাদিক এবং বসিলা এলাকার বাসিন্দারা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, আজ এই নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আমি সত্যি হতাশ হয়েছি। কীভাবে একজন ইঞ্জিনিয়ারের এমন ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা মাথায় আসে। এই জায়গায় বাচ্চারা দৌঁড়াতে পারবে না, যেখানে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে। এমন নির্দেশ হাইকোর্ট কখনোই দেয়নি। হাইকোর্ট বলেছে, নদীর পাড়ে সবুজায়ন অথবা ওয়াকওয়ে এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে, যেন উদ্ধারকৃত নদীর জায়গা পুনরায় দখল করতে না পারে। এখানে এমনভাবে ওয়াকওয়ে তৈরি করা হয়েছে, যেন এটা একটা মৃত্যুফাঁদ। দ্রুত এ পরিকল্পনার পুনর্মূল্যায়ন করে মানুষের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে, নদীকেও রক্ষা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে শরীফ জামিল বলেন, ২০০৯ সালে হাইকোর্ট নদীসীমানা নির্ধারণের জন্য যে রায় দিয়েছিল, তারই প্রেক্ষাপটে রায়ের তৃতীয় ধাপে সবুজায়ন কিংবা ওয়াকওয়ে নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ সীমানায় ওয়াকওয়ে নির্মাণের কারণে বিরাট অংশের নদী ও প্লাবন অঞ্চলের জায়গা দখল বাণিজ্য হয়েছে। যেভাবে নদীর সাথে পাড় ও ঢালকে বিচ্ছিন্ন করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। তাতে নদীপাড়ের মানুষের যে শুধু জীবন, জীবিকা ও গবাদিপশুকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে তা নয়, বিপুল পরিমাণ দুর্নীতিও হয়েছে। এই দেশে অত্যাচার এবং দুর্নীতি কেবল রাজনৈতিক নেতারাই করেছেন তা নয়; প্রশাসন, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী এমনকি পরিবেশবাদী এবং স্থানীয় মানুষেরও একাংশ করেছে। সবাইকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।