তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে ফেরি করে সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্য ও খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ এবং চায়ের দোকানে ধুমপান নিষিদ্ধ করা হলে নিম্নআয়ের বিক্রেতার ওপর প্রভাব পড়বে না। কারণ দেশে ২ দশমিক ৪ শতাংশ ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে শুধু তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি হয়। আর দেশের মোট বিক্রয়কেন্দ্রের ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ কেন্দ্র অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে তামাকজাত পণ্য বিক্রি করে। কয়েকটি সংস্থার একটি যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়কারীদের প্রকৃত সংখ্যা এবং তামাক কোম্পানির মিথ্যাচার’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এ গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়। গবেষণা ও অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, এইড ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট, অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো, ডেভলপমেন্ট অ্যাকটিভিটিস অব সোসাইটি, মানস, নাটাব, প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠন, টিসিআরসি ও ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট।
গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পরিচালিত এ জরিপে ঢাকা শহরের ১৩টি ওয়ার্ডের ২ হাজার ৬১৬টি বিক্রয়কেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেখানে উঠে এসেছে, শুধু ৬৩ হাজান ৬০৩টি প্রতিষ্ঠান একমাত্র তামাকজাত পণ্য বিক্রির সঙ্গে জড়িত, যেখানে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৫৮ জন ব্যক্তি একমাত্র তামাক বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জরিপ অনুযায়ী, আনুমানিক ৪ লাখ ৯০ হাজার ২৭৩টি প্রতিষ্ঠান তামাকজাত দ্রব্যের সঙ্গে যুক্ত, যেখানে ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৬ জন ব্যক্তি অন্য পণ্যের পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যও বিক্রি করেন।
গবেষণায় ফলাফলে আরও বলা হয়, হকার ও ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের মাধ্যমে তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলে ৫৮ হাজার ৩০৩ থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৫৮ মানুষের জীবিকার ওপর প্রভাব পড়তে পারে। তবে তাদের বিকল্প লাভজনক পণ্য বিক্রির সুযোগ উচ্চ মাত্রায় বিপণন ও ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগের দক্ষতা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে এইড ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার আবু নাসের অনিকে সভাপতিত্বে গবেষণার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাকসুদ। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ছিলেন– একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ সুশান্ত সিনহা, টিসিআরসির প্রকল্প সমন্বয়কারী ফারহানা জামান লিজা, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক সাগুফতা সুলতানা, প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রামস সৈয়দা অনন্যা রহমান ও সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা সামিউল হাসান সজীব, ডাসের প্রোগ্রাম অফিসার রবিউল ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর প্রকল্প কর্মকর্তা ইব্রাহীম খলিল।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, তামাক কোম্পানি অপপ্রচার চালাচ্ছে, তামাক আইন সংশোধন ও ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের সিগারেট ও খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ করলে নিম্ন আয়ের প্রায় ১৫ লাখ খুচরা বিক্রেতাসহ তাদের পরিবারের আরও প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ গবেষণার মাধ্যমে সেটা প্রমাণ হলো।
তারা আরও বলেন, তামাক ব্যবসার সঙ্গে কর্মসংস্থানের যে অতিরঞ্জিত দাবি করা হয়, এই গবেষণা তার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। তামাক বিক্রি কমিয়ে এনে স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্প পণ্যের দিকে ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করা গেলে, কর্মসংস্থানের ওপর উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।