সপ্তাহ পেরোলেই মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। ঈদের আগেই সাধারণত বাজারে পণ্যের দাম থাকে ঊর্ধ্বমুখী। তবে এবার কোরবানি ঈদের আর এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও এখনও বাজারে বাড়েনি বেশির ভাগ পণ্যের দাম। বরং কমেছে বেশ কিছু সবজিসহ মুরগির মাংস ও ডিমের দাম। পাশাপাশি বাড়েনি আদা-রসুন-পেঁয়াজের মতো পণ্যের দামও। সাধারণত এই ঈদের আগে এসব পণ্যের দাম বাড়তে দেখা গেলেও এবার এখনও এরকমটা হয়নি। তবে বাজারের বিভিন্ন পণ্যের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আর কয়েক দিন গেলে হয়তো বাড়তে পারে পণ্যের দাম।
শুক্রবার (৩০ মে) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় ঈদের আগের বাজারের এই চিত্র।
কমেছে সবজির দাম
মোটামুটি দুদিন ধরেই সারা দেশসহ রাজধানীতে চলছে মুষলধারে বৃষ্টি। আবার একই সাথে রয়েছে ঈদের প্রস্তুতি। তবে এসবের মধ্যেও কয়েকটি বাদে বেশির ভাগ সবজির দামই কমেছে।
আজকের বাজারে প্রতি কেজি টক টমেটো ৮০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১২০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৬০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৭০ টাকা, শসা ৭০ (দেশি), ৫০ (হাইব্রিড) টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, করলf ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, পটল (হাইব্রিড) ৫০-(দেশি) ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৭০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৩০ টাকা, লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা করে।
দাম তুলনা করলে দেখা যায়, প্রতি কেজিতে কমেছে কাঁকরোলে ১০ টাকা, পেঁপেতে ২০ টাকা, মুলায় ১০ টাকা, ঢেঁড়সে ১০ টাকা, চিচিঙ্গায় ১০ টাকা, ধুন্দলে ১০ টাকা, কচুরমুখীতে ৪০ টাকা। আর প্রতি পিস লাউ ও চাল কুমড়ায় কমেছে ১০ টাকা করে। এছাড়া প্রতি হালিতে লেবুর দাম কমেছে ৫ টাকা।
এদিকে প্রতি কেজিতে টক টমেটোর দাম বেড়েছে ৩০ টাকা, দেশি গাজরে ১০ টাকা, হাইব্রিড ও দেশি শসায় বেড়েছে ১০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
তবে এখন কমলেও যেকোনও মুহূর্তে দাম বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিক্রেতারা। অতিরিক্ত বৃষ্টি এই দাম বৃদ্ধির কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
মো. শাহ আলম নামে এক সবজি বিক্রেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দুইদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু এখনও বাজারে সবজির দাম কমই আছে। কমেছে অনেক সবজির দাম। তবে যদি এই বৃষ্টি চলমান থাকে তাহলে সবজির দাম বেড়ে যাবে। কারণ তখন সবজির নষ্ট হয়ে যাবে। চাহিদা অনুযায়ী সাপ্লাই কমে যাবে। তাই আরও বৃষ্টি হলে দাম বাড়তে পারে সবজির।
বাজার করতে আসা হাবিবুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, সবজির দাম এখনও কমই আছে বলা যায়। তবে বৃষ্টির উছিলায় আবার বেড়ে না গেলেই হয়। ব্যবসায়ীদের তো দাম বাড়ানোর শুধু উছিলা লাগে।
অপরিবর্তিত আদা-রসুন-পেঁয়াজের দাম
কোরবানির ঈদে চাহিদা বেশি থাকায় সাধারণত আদা, রসুন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়ে থাকে ঈদের আগে থেকেই। তবে এবার এখনও বাড়েনি এসব পণ্যের দাম। অপরদিকে কমেছে আলুর দাম।
আজকে বাজারে মান ও আকারভেদে প্রতি কেজি নতুন ক্রস পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকা। এরমধ্যে ছোট আকারের পেঁয়াজ ৫৫ টাকা এবং বড় আকারের পেঁয়াজ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। এছাড়া আজকে সাদা ও লাল আলুর কেজি ২০ টাকা। বগুড়ার আলু ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আজকে দেশি রসুন ১২০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০-২০০ টাকা, চায়না আদা ১৮০-২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ১২০-১৪০ দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক্ষেত্রে দেখা যায়, আজকে প্রতি কেজিতে সব ধরনের আলুর দাম কমেছে ৫ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য সব পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
আদা, রসুন, পেঁয়াজের দাম এখনও অপরিবর্তিত আছে। ঈদের বাকি আর এক সপ্তাহ, এরমধ্যে এসব পণ্যের দাম বাড়বে কিনা জানতে চাইলে বিক্রেতা মো. শরীফ বলেন, এখন এটা বলা যাচ্ছে না। কারণ দাম আমাদের কাছ থেকে বাড়ে না। এসব পণ্য আমাদের আমদানি করা লাগে। তাই দাম বাড়ালে ইম্পোর্টাররা বাড়ায়। তারা যদি দাম বাড়ায় তাহলে দাম বাড়তেও পারে। এটার নিশ্চয়তা নাই।
আরেক বিক্রেতা বলেন, এবার মনে হয় না আর দাম বাড়বে। কারণ দাম বাড়লে আরও আগে থেকেই বাড়তে শুরু করে। এখনও যেহেতু বাড়ে নাই তাই না বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি।
কমেছে মুরগি ও ডিমের দাম, অপরিবর্তিত গরু-খাসির দাম
বাজারে ব্রয়লার, কক ও লেয়ার মুরগির দাম আজকে কমেছে। একইসাথে কমেছে ফার্মের মুরগির লাল ও সাদা ডিমের দামও। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে গরু, খাসি ও দেশি মুরগির দাম।
আজকে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া আজকে ব্রয়লার মুরগি ১৫৩-১৬০ টাকা, কক মুরগি ২২৫-২৫৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৯০-৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৬২০-৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১২০ টাকা, সাদা ডিম ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আজ ওজন অনুযায়ী প্রতি কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ৭-১০ টাকা, কক মুরগির দাম কমেছে ২৫ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম কমেছে ১০ টাকা। আর প্রতি ডজনে লাল ও সাদা ডিমের দাম কমেছে ১০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাংসের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
এসময় আল-আমিন চিকেন হাউজের বিক্রেতা বলেন, মুরগির দাম এখন কিছুটা কম আছে। তবে ঈদের আগে আবার কিছুটা বাড়বে। চাহিদা বেশি থাকায় এই দাম বাড়ে। আবার ঈদের পরে দাম কমে যাবে। কারণ তখন মাংসের চাহিদা কমে যাবে।
এদিকে আজকের বাজারে আকার, ওজন ও মান অনুযায়ী ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-৩০০০ টাকায়। এছাড়া রুই মাছ ৪০০-৫৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪৫০-৬০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৭০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৯০০-১৬০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ (চাষের) ২৫০-৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৮০০-১২০০ টাকা, শোল মাছ ৫০০-১০০০ টাকা, চিতল মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, কাজলী মাছ ১২০০-১৬০০ টাকা, বাতাসী মাছ ১২০০-১৪০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১২০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অপরিবর্তিত রয়েছে মুদি পণ্যের দামও
আজকের বাজারে মুদি পণ্যের মধ্যে শুধু মাষকলাইয়ের ডাল ছাড়া সব পণ্যের দাম রয়েছে আগের মতোই। আজকে প্রতি কেজিতে মাষকলাইয়ের ডালের দাম কমেছে ১০ টাকা করে।
আজ প্রতি কেজি ছোট মসুর ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১০ টাকা, মাষকলাইয়ের ডাল ১৮০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, কাজু বাদাম ১৭০০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২৭০০ টাকা, কাঠ বাদাম ১২২০ টাকা, কিশমিশ ৬০০-৭০০ টাকা, দারুচিনি ৫২০ টাকা, লবঙ্গ ১৪০০ টাকা, কালো গোল মরিচ ১৩০০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১৬০০ টাকা, জিরা ৬০০ টাকা, প্যাকেট পোলাও চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিকেজি প্যাকেটজাত চিনি ১১৫ টাকা, খোলা চিনি ১১০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৯ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।