X
রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২

নিরাপত্তা জোরদারে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে শাহজালালে

ইমরান আলী 
০১ জুন ২০২৫, ১৯:০০আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ১৯:২৫

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ভেহিক্যাল, বেল্ট, হিউম্যান স্ক্যানারসহ এআই প্রযুক্তি বসানো হচ্ছে। অবৈধ পণ্য ও স্বর্ণ চোরাচালান রোধে ঢাকা কাস্টমস হাউজ বিশাল এই উদ্যোগ নিয়েছে।

তিন মাস ধরে কাস্টমস হাউজ শক্তিশালী দিক, দুর্বলতার দিক, সমস্যা এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে গবেষণা করে। গবেষণায় সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক বেস্ট প্র্যাকটিস এবং বাংলাদেশের বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে এগুলো সমাধানে এনবিআরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করা হলে শাহজালালে চোরাচালান শূন্যের কোঠায় নামবে, পাশাপাশি বর্তমানে যে নিরাপত্তা রয়েছে তার চেয়ে আরও অধিকতর হবে।

ঢাকা কাস্টমস হাউজের কমিশনার জাকির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে প্রস্তাবনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা তিন মাস ধরে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছি। আমরা বন্দরের দুর্বলতার দিকগুলো পর্যালোচনা করে সমাধানের জন্য একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশা করছি দ্রুত এই প্রস্তাবনা অনুমোদন হবে। তারপর কাজও শুরু করতে পারবো।’

সর্বমোট ১০টি হিউম্যান বডি স্ক্যানার স্থাপন করতে হবে

প্রস্তাবনায় যা বলা হয়েছে

১. এয়ারসাইডে বেল্টের শুরুতে স্ক্যানার বসানো: আন্তর্জাতিক মান অনুসরণে টার্মিনাল ১ ও ২-এ বর্তমান ল্যান্ডসাইডে বিদ্যমান স্ক্যানারের বদলে এয়ারসাইডে ব্যাগেজ বেল্টের শুরুতে স্ক্যানার বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত ডিজাইন ও প্রয়োজনীয় পর্যালোচনা করে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ-এর অনাপত্তিপত্র/ অনুমোদন গ্রহণ করা হয়েছে।

২. ডাইভার্টিং বেল্টের বিকল্প হিসেবে আরএফআইডি সিস্টেম স্থাপন: এয়ারসাইডে ব্যাগ স্ক্যানিংয়ের পর যেসব ব্যাগে সন্দেহজনক পণ্য পাওয়া যাবে তাদের ডাইভার্টিং বেল্ট দিয়ে কাস্টমস হলে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল-৩-সহ কোথাও ডাইভার্টিং বেল্টের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এটি এয়ারপোর্টের একটি বড় প্ল্যানিং ত্রুটি, যা যাত্রীসেবার মানে প্রভাব ফেলবে। বিকল্প হিসেবে আরএফআইডি সিস্টেম স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে স্ক্যানিংয়ের পর সন্দেহজনক ব্যাগগুলোতে আরএফআইডি লক লাগিয়ে দেওয়া হবে। পরে যাত্রীরা কাস্টমস হল অতিক্রম করার সময় আরএফআইডি সিস্টেম (গেট) ব্যাগেজগুলো চিহ্নিত করবে। নতুন টার্মিনাল-৩সহ বিদ্যমান টার্মিনাল ১ ও ২-এর কাস্টমস হলে আরআফআইডি গেটসহ পুরো সিস্টেম স্থাপন করতে হবে। টেন্ডারের সময় বিস্তারিত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করতে হবে।

৩. হিউম্যান বডি স্ক্যানার স্থাপন: এয়ারসাইডে স্ক্যানার বসিয়ে শতভাগ ব্যাগেজ স্ক্যান করা হলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাগেজের মাধ্যমে অবৈধ আমদানি কমে যাবে। তখন চোরাচালানিরা নিজেদের দেহ এবং হাতব্যাগ ব্যবহার করে অবৈধ পণ্য পরিবহনের চেষ্টা বাড়িয়ে দেবে। বিশেষ করে স্বর্ণসহ মূল্যবান বৈধ-অবৈধ পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারে। এ ধরনের প্রবণতা প্রতিরোধে হিউম্যান বডি স্ক্যানার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নতুন এবং বর্তমান টার্মিনালে নতুন ১০টি হিউম্যান বডি স্ক্যানার স্থাপন করতে হবে। টার্মিনাল ১ ও ২-এর গ্রিন চ্যানেল ১ ও ২-এ দুটি করে, ভিআইপি গেটে ১টিসহ মোট ৫টি স্ক্যানার লাগবে। নতুন টার্মিনাল-৩-এ সমপরিমাণ অর্থাৎ ৫টি হিউম্যান বডি স্ক্যানার লাগবে। অর্থাৎ সর্বমোট ১০টি হিউম্যান বডি স্ক্যানার স্থাপন করতে হবে।

৩. আগাম যাত্রী তথ্য পেতে এপিআই (অ্যাডভান্স প্যাসেঞ্জার ইনফরমেশন) সিস্টেম স্থাপন: ঝুঁকিভিত্তিক কাজ করলে সেবার মান বৃদ্ধি এবং সম্পদের ব্যবহার হ্রাস করা যায়। আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় অধিকাংশ দেশই যাত্রীর মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধগুলোর আগাম তথ্য এই সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে বের কর। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগাম যাত্রী তথ্য সিস্টেম বাস্তবায়নের জন্য সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ কাজ করছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে তা দ্রুত বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকতে পারে। কাস্টমস হাউজ ঢাকা থেকে বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। সিভিল এভিয়েশন এটি বাস্তবায়নে বেশি সময় নিলে এনবিআর থেকে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

ক্যাটারিং গেট ও ৮ নং গেটে একটি করে মোট ২টি ভেহিক্যাল স্ক্যানার বসাতে হবে

৪. অ্যাডভান্স এআই বেইজড ফেসিয়াল রিকোগনিশন ক্যামেরা (এফআরসি) সিসিটিভি স্থাপন: বর্তমান টার্মিনাল ১ ও ২-এ একসঙ্গে ৮টি ইনকামিং প্লেন নামতে পারে। প্রায় ৪ হাজার যাত্রী একত্রে এয়ারপোর্টে নামার সুযোগ আছে। বর্তমান অবস্থায় পিক আওয়ারে ২-৩ হাজার যাত্রী একত্রে নামে। কাস্টমস হলে ২-৩শ’ যাত্রী একত্রে প্রবেশ করতে পারে। সব যাত্রীকে চেক করা সম্ভব হয় না। বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক কোনও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সিস্টেম ব্যবহার করা হয় না বিধায় অনেক যাত্রীকে ছেড়ে দিতে হয়। তৃতীয় টার্মিনালের অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে। সেখানে ১৬টি বেল্টে একত্রে ১৬টি প্লেনে প্রায় ৮ হাজার যাত্রী নামতে পারবে। সেখানকার কাস্টমস হল আরও ছোট। ২০০ থেকে ২৫০ জন যাত্রী একত্রে প্রবেশ করানো যাবে। ফলে তৃতীয় টার্মিনালে ঝুঁকি আরও বাড়বে। একদিকে বেশি যাত্রীকে চেক করলে সেবার মান কমে যায়, অন্যদিকে চেক কম করলে চোরাচালান বাড়ে। বাধ্য হয়েই সীমিত জনবল দিয়ে সীমিত আকারে চেক করতে হয়। ফলে বিদ্যমান এয়ারপোর্ট হয়ে গেছে বাণিজ্যিক আমদানি ও চোরাচালানের পথ। টার্মিনাল-৩ চালু হলে এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাজে লাগাতে হবে। বিদ্যমান সিসিটিভি ক্যামেরা সিস্টেমের সঙ্গে এ সিস্টেম স্থাপন করা হলে নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রীসহ টার্গেটেড যাত্রীদের সহজে চিহ্নিত করা যাবে। সিসিটিভি’র আওতায় এলেই এই সিস্টেম তাকে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ম্যাসেজ পাঠাবে, যাতে চিহ্নিত ব্যক্তিকে চেক করা যায়। এটি আধুনিক সব এয়ারপোর্টে ব্যবহার করা হয়।

অতি সম্প্রতি কাস্টমস হাউজ, ঢাকার কোডে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের লক্ষ্যে কিছু বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেটি দিয়ে সীমিত আকারে স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

৫.  বিমান ক্যাটারিং গেট এবং ৮নং গেটে ভেহিক্যাল স্ক্যানার স্থাপন: বিমান ক্যাটারিং সার্ভিস এলাকায় কাস্টমসের কোনও ডিউটি থাকে না। ইতোপূর্বে এখান দিয়ে স্বর্ণের চালান পাচারের সময় আটক হওয়ার রেকর্ড আছে। তাই খাবারের গাড়ি ও খাবারের উচ্ছিষ্ট বহনের গাড়ি স্ক্যান করার জন্য ক্যাটারিং সার্ভিস ভবনের সামনে একটি ভেহিক্যাল স্ক্যানার স্থাপন জরুরি।

৮নং গেট দিয়ে সব গাড়ি বিমানবন্দরের ভেতর প্রবেশ করে ও বের হয়। এখানে কাস্টমস ডিউটি থাকে। তবে গাড়িতে ম্যানুয়াল চেকিং খুব বেশি ফলপ্রসূ হয় না। এ গেটেও একটি ভেহিক্যাল স্ক্যানার বসানো জরুরি। অর্থাৎ ক্যাটারিং গেট ও ৮নং গেটে একটি করে মোট দুটি ভেহিক্যাল স্ক্যানার বসাতে হবে।

প্রস্তাবের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, সেবাদাতা (কাস্টমস প্রশাসন) ও সেবাগ্রহীতা (যাত্রী, আমদানিকারক ও রফতানিকারক, এজেন্ট) উভয়ের জন্য সুশাসন নিশ্চিত করে সেবাধর্মী আন্তর্জাতিক মানের কাস্টমস প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা।

এদিকে এ বিষয়ে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক রাগিব সামাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি এখনও এই প্রস্তাব দেখিনি। তবে যদি তারা এটা করেন, অবশ্যই বিমানবন্দরের জন্য ভালো উদ্যোগ। উন্নত প্রযুক্তিতে সবাই এর সুফল পায়। এক্ষেত্রে আমরাও পাবো। সব মিলিয়ে এই উদ্যোগ আমার কাছে ভালোই মনে হচ্ছে।’

/আরআইজে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
শাহজালালে বোমা আতঙ্ক: র‍্যাব-সেনাবাহিনীর অভিযানে আটক ৩
বোমা থাকার হুমকিকাঠমান্ডুর উদ্দেশে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর ছেড়ে গেলো বিমানের ফ্লাইট
শাহজালালে এপিবিএনের হাতে ৮৯৬ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কারসহ দুই চোরাকারবারি গ্রেফতার
সর্বশেষ খবর
সাকিবের প্ল্যাকার্ড নিয়ে কি মাঠে ঢুকতে পারবেন দর্শকরা?
সাকিবের প্ল্যাকার্ড নিয়ে কি মাঠে ঢুকতে পারবেন দর্শকরা?
মিয়ানমারে ভারতীয় ড্রোন হামলায় উলফার ৩ নেতা নিহতের দাবি
মিয়ানমারে ভারতীয় ড্রোন হামলায় উলফার ৩ নেতা নিহতের দাবি
‘পিস টিভি বাংলা’ চালু করতে সরকারকে আইনি নোটিশ
‘পিস টিভি বাংলা’ চালু করতে সরকারকে আইনি নোটিশ
ওয়ার্ল্ডস ইউনিভার্সিটিজ উইথ রিয়েল ইমপ্যাক্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে দেশসেরা ইউল্যাব
ওয়ার্ল্ডস ইউনিভার্সিটিজ উইথ রিয়েল ইমপ্যাক্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে দেশসেরা ইউল্যাব
সর্বাধিক পঠিত
ইরানকে ‘শূন্য সমৃদ্ধকরণ’ চুক্তির পরামর্শ পুতিনের, তেহরানের প্রত্যাখ্যান
ইরানকে ‘শূন্য সমৃদ্ধকরণ’ চুক্তির পরামর্শ পুতিনের, তেহরানের প্রত্যাখ্যান
রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলা হলো প্রজন্ম চত্বরের স্থাপনা
রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলা হলো প্রজন্ম চত্বরের স্থাপনা
ভারতে গুহায় দুই মেয়েকে নিয়ে ‘ধ্যানমগ্ন’ রুশ নারী উদ্ধার
ভারতে গুহায় দুই মেয়েকে নিয়ে ‘ধ্যানমগ্ন’ রুশ নারী উদ্ধার
ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হারানোর অভিযোগ, আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার হুমকি বিদেশি গ্রুপের
ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হারানোর অভিযোগ, আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার হুমকি বিদেশি গ্রুপের
‘এনবিআরকে দুই ভাগ করায় এখন আর কর্মকর্তাদের আপত্তি নেই’
‘এনবিআরকে দুই ভাগ করায় এখন আর কর্মকর্তাদের আপত্তি নেই’