X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

ড্রেনের ময়লা-গন্ধে অতিষ্ঠ পুরান ঢাকাবাসী

মহিউদ্দিন খান রিফাত
২৩ মার্চ ২০২৩, ১৮:১৩আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩, ১৮:১৩

রাজধানীর পুরান ঢাকার প্রসন্ন পোদ্দার লেনের গলি। খোলা রয়েছে ড্রেন। কেউ মুখে হাত দিয়ে পার হচ্ছেন। কেউ পাশেই দোকানে খাবার খাচ্ছেন। ঢাকনা খোলা থাকায় মশা মাছি ভনভন করছে। এছাড়া একটু বৃষ্টি হলেই এসব ড্রেন অকেজো হয়ে যায়। রাস্তা পানিতে ডুবে যায়। পয়নিঃষ্কাশনের এমনই চিত্র পুরান ঢাকার সর্বত্র। এতে সারা বছর ভোগান্তিতে থাকতে হয় এলাকাবাসীদের। বেশি সমস্যায় পড়তে হয় বৃষ্টির সময়। রাস্তা ছোট হওয়ায় ও জনসাধারণের সচেতনতার অভাবে এ সমস্যা বেশি হচ্ছে বলছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলরা।

সরেজমিন পুরান ঢাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব গলি বা লেনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। ড্রেনে ময়লা জমে আছে। ড্রেন খোলা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বৃষ্টির সময় আরও খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। পুরান ঢাকার আহসান উল্লাহ রোড, পাটুয়াটুলী রোড, ইসলামপুর, কুমারটুলী লেন, লিয়াকত এভিনিউ, নর্থব্রুক হল রোড, শাঁখারিবাজার, বংশাল, লক্ষ্মীবাজার, গোবিন্দ দত্ত লেন, রোকনপুর লেন, পাঁচ ভাই ঘাট লেন, জনসন রোড, নবদ্বীপ বসাক লেন, পাতলা খান লেন, ডালপট্টি, রূপলাল দাস লেন, ফরাশগঞ্জ লেন, প্যারীদাস রোড, রূপচান লেন, সিদ্দিক বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পয়ঃনিষ্কাশনের একই চিত্র ধরা পড়ে। অধিকাংশ গলির ড্রেনে জমে আছে ময়লা। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এছাড়া গত বুধবার (২২ মার্চ) সকালে বৃষ্টি হওয়ায় এসব এলাকায় আরও দুরবস্থা দেখা দিয়েছে। রাস্তার ওপর পানিতে মলমূত্র ও নানা বর্জ্য ভাসতে দেখা যাচ্ছে।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার নাজেহাল অবস্থা থাকলেও তা পর্যাপ্ত সংস্কার কাজ হচ্ছে না। আবার কোনও কোনও এলাকায় পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নেই। যে কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই পানিতে ডুবে যায়।

রাজধানীর ডিএনডি বাঁধ, বংশাল, আগামসি লেন ও পাকিস্তান মাঠসহ বহু এলাকায় একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমে যায়। এতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে দিনের পর দিন। হাঁটুপানিতেই চলাচল করতে হয় ওইসব এলাকার মানুষকে। নানা রাস্তায় খোড়াখুড়িতেও পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পঁচা ও দুর্গন্ধ পানিতে চলাচল করায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন নগরবাসী।

শাঁখারিবাজারের বাসিন্দা রাম চন্দ্র বলেন, ‘আমাদের এখানে যে ড্রেনগুলো রয়েছে তা বেশি কার্যকর নয়। বৃষ্টির পানিতে অনেক গলি ডুবে যায়। পানিতে ময়লা ভেসে থাকে। ঘৃণায় রাস্তা পার হতে কষ্ট হয়। শিশুরা স্কুলে যেতে আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়ে। নানা রোগ জীবানুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এগুলো দ্রুত সমাধান করা দরকার। যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নগর সুন্দর করার অনুরোধ করছি। সবখানে ড্রেনগুলোর ওপর ঢাকনা দেয়ারও দাবি জানাচ্ছি।’

ড্রেনের ময়লা-গন্ধে অতিষ্ঠ পুরান ঢাকাবাসী

পাতলা খান লেনের স্থানীয় বাসিন্দা পপি রানী বলেন, ‘রাস্তাগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। সবখানে ঢাকনা নেই। বৃষ্টির সময় পানি জমে যায়। বাইরে বের হওয়া যায় না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উচিত এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। কারণ স্মার্ট সিটি গড়তে নগরীকে আরও স্মার্ট করতে হবে।’

রাজধানীর সদরঘাট, লালকুঠি, ফরাশগঞ্জ রোডের পাশে বহু লোকের সমাগম থাকলেও পর্যাপ্ত গণ শৌচাগার নেই। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। এমনই একজন সদরঘাট এলাকার শেফালি খাতুন। তার কথায়, ‘একটা বাথরুম খুঁজে পেতে অনেক খোঁজাখুঁজি করতে হয়েছে। এখানে এতো মানুষের চলাচল। কিন্তু গণশৌচাগার তেমন নেই। যাতায়াতের সময় শিশুদের নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছি।’

শুধু পুরান ঢাকার গলি নয়, খোদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েরও ড্রেনেজ অবস্থা খুবই নাজুক। ড্রেনগুলো ছোট ছোট। ওপরের ঢাকনা নাই। ছড়ায় দুর্গন্ধ। বৃষ্টির পানিতে ড্রেন ভরে যায়। এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাইরে ড্রেন উচুঁ। পয়ঃনিষ্কাশনের সমস্যা হয়। এছাড়া ড্রেনগুলো চিকন ও অপরিকল্পিত। তবে আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘পুরান ঢাকার রাস্তাঘাট ছোট হওয়ার কারণে আমাদের পয়ঃনিষ্কাশনে সমস্যা হয়। তবে আমার ওয়ার্ডের অনেক স্থানে বর্জ্য পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ শেষ হয়েছে। অনেক স্থানে কাজ চলছে। যেমন–তাঁতিবাজার, বাধিকা মোহন বসাক লেন, কোর্ট এলাকা, রাজার দেউরীসহ অনেক স্থানের কাজ শেষ। তবে প্রসন্ন পোদ্দার লেন ও আশেক লেনের কাজ চলছে। এছাড়া কিছু কাজ হাতে নেবো।’

ড্রেনের ময়লা-গন্ধে অতিষ্ঠ পুরান ঢাকাবাসী

এ কাউন্সিলর আরও বলেন, ‘আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আধুনিক করা। বৃষ্টির পানিতে যেন ভোগান্তি না হয় সে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। আমার এলাকার জনসাধারণের কাছে জানতে চাইলে তারাই বলে দেবে আমরা কী কাজ করছি।’

পাটুয়াটুলী রোড, কুমারটুলি, বাংলাবাজার, সদরঘাট, ইসলামপুর এলাকায় হালকা বৃষ্টিতে রাস্তা পানিতে ডুবে যাওয়ার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রহমান মিয়াজী বলেন, ‘আমাদের এ ওয়ার্ড এলাকা ঢাকার সবচেয়ে নিঁচু এলাকা। আমি কমিশনার হওয়ার আগেও বৃষ্টি হলে এ এলাকার সব রাস্তা পানির নিচে থাকতো। তবে এখন সেটি অনেক কমে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুইদিন আগে ১০ মিনিটের বৃষ্টিতে অনেক এলাকার রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। সামনের বর্ষাকাল আসার আগে আমরা একেকটি রাস্তার ড্রেন ঠিক করছি। এখন পাটুয়াটুলি রোডের কাজ চলছে। সামনে যেন আর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় তার জন্য কাজ করছি।’

সদরঘাট এলাকার গণশৌচাগারের বিষয়ে কাউন্সিলর বলেন, ‘সদরঘাট এলাকায় পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট আছে। মাইকিংও করা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ সচেতন নয়।’

/আরআইজে/
সম্পর্কিত
দুর্নীতির মামলায় মেজর মান্নান কারাগারে
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ বছর, শেষ হয়নি বিচার
সর্বশেষ খবর
সীমান্তে কোনও ধরনের হত্যাকাণ্ড চায় না বাংলাদেশ
সীমান্তে কোনও ধরনের হত্যাকাণ্ড চায় না বাংলাদেশ
দুর্নীতির মামলায় মেজর মান্নান কারাগারে
দুর্নীতির মামলায় মেজর মান্নান কারাগারে
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত: সাকিব
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত: সাকিব
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি