আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দলটির বিচার নিশ্চিতসহ তিন দফা দাবিতে রাজধানীর শ্যামলীর শিশুমেলা মোড়ে ৬ ঘণ্টা সড়ক ধরে অবরোধ করে আন্দোলন করছেন ‘জুলাই আন্দোলনে’ আহতরা।
শনিবার (১০ মে) দুপুর ১টা থেকে আন্দোলনকারীরা শিশুমেলা মোড়ে সড়কের দুই পাশে ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান নেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তারা সেখানে বিক্ষোভ চালিয়ে যান, যার ফলে ওই এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়।
অবরোধের কারণে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে বসে থাকেন, কেউবা গন্তব্যে পৌঁছাতে বাধ্য হন হেঁটে চলতে।
শ্যামলী মোড় এলাকায় অপেক্ষমাণ যাত্রী সুলতানা ইয়াসমিন বলেন, ‘বাসে বসে আছি প্রায় দেড় ঘণ্টা, এক ইঞ্চিও এগোয়নি। বাচ্চাকে স্কুল থেকে আনতে পারিনি, আর অফিসে সময়মতো পৌঁছানো তো স্বপ্ন হয়ে গেছে।’
একজন বাসচালক রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এইভাবে রাস্তায় অবরোধ দিলে তো রুট বন্ধ হয়ে যায়। আমরা কোথায় যাবো? যাত্রীদের কথা বাদই দিলাম, আমাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’
আন্দোলনকারীদের একজন শরীফ হোসেন দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিক দল নয়, এটি এখন সন্ত্রাসী সংগঠনে রূপ নিয়েছে। তাদের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হওয়া উচিত।’
অন্য এক আন্দোলনকারী রুবিনা আক্তার বলেন, “আমরা ‘জুলাই আন্দোলনে’ আহত হয়েছি, বিচার পাইনি। আমাদের দাবি ন্যায়বিচার, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’
অবরোধের বিষয়ে শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা প্রথমে পুরো রাস্তা আটকে দেয়। পরে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে এক পাশ উন্মুক্ত করে কিছু যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করেছি। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে, যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৭ মে) রাতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। সেখানে উপস্থিত হন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। পরদিন শুক্রবার তারা মঞ্চ বানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি
১. আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে।
২. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে দলীয় বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে।
৩. ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ জারি করতে হবে।
ঢাকা মহানগরীতে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।