X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

জটিলতা কাটিয়ে ডিএনসিসির উপ-নির্বাচন সম্ভব

এমরান হোসাইন শেখ
০৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৪:০২আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৪:০৬

জটিলতা কাটিয়ে ডিএনসিসির উপ-নির্বাচন সম্ভব বিদ্যমান আইনের মধ্যেই জটিলতা কাটিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তবে, এক্ষেত্রে মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটির নতুন যুক্ত হওয়া কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা উচিত বলেও মনে করেন তারা। নতুন নির্বাচিত মেয়রের মতোই এসব কাউন্সিলর কেবল পরিষদের বাকি মেয়াদের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুজনিত কারণে শূন্য পদে নির্বাচনের পথে দু’টি বাধা সামনে এসেছে। একটি হলো ওই সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর নির্বাচন; অন্যটি একইসঙ্গে আগামী জানুয়ারিতে যুক্ত হওয়া নতুন ভোটারদের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাওয়া না পাওয়ার বিষয়। এই দুই বাধার কারণে ডিএনসিসি নির্বাচন নিয়ে সরকার বা নির্বাচন কমিশনকে আইনের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য তারা আইনি বাধা পেরোনোর পথ রয়েছে বলেও মনে করেন।

ভোটার তালিকা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে নতুন ভোটারদের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, কেউ ভোটার হলো কিন্তু ভোট দিলে পারল না, এটা তাদের অধিকার বঞ্চিত করার পর্যায়ে পড়ে।  নতুন ভোটারদের সুযোগ দিলে ইসি বা সরকারের জন্য আইনি পরিস্থিতি মোকাবিলার আশঙ্কাও কম। এ জন্য ঢাকা উত্তর সিটির তফসিল এমনভাবে ঘোষণা করতে হবে, যেন আগামী ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ থাকে।

ভোট দেওয়ার সুযোগের পক্ষে যুক্তি দিয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলেন, তফসিলে মনোনয়নপত্র, জমা, যাচাই-বাছাই ও প্রচার-প্রচারণা সব ক্ষেত্রে সময় কিছুটা কমিয়ে এনে এটা করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি—চূড়ান্ত ভোটার তালিকার প্রশ্ন আসবে ভোটের কয়েকদিন  আগে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ভোট গ্রহণের সময় নির্ধারণ করা হলে ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর যে সময় থাকবে, তাতে ভোটার তালিকা তৈরি করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। আর যদি সম্ভব নাও হয়, তাহলে বৈধ কারণ দেখিয়ে নির্বাচন কয়েক দিনের জন্য হলেও পেছানো যেতে পারে বলেও তারা মনে করেন।

এদিকে, মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের পাশাপাশি দুই সিটিরই নতুন ওয়ার্ডগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, সীমানা নির্ধারণ করে যখন গেজেট হয়েই গেছে, তখন সেখানে নির্বাচন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচন না হলে ভোটাররা জনপ্রতিনিধি নির্বাচন থেকে বঞ্চিত হবে। কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে মেয়াদের ক্ষেত্রেও কোনও হেরফের হবে না বলে মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেয়র পদে উপ-নির্বাচন করতে হলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটিরই নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর কাউন্সিলর নির্বাচন করতে হবে। কাউন্সিলরদের বাদ দিয়ে কেবল মেয়র পদে উপ-নির্বাচন করতে গেলে নির্বাচন আটকে দেওয়ার জন্য যে কেউ আদালতে যেতে পারেন।  এজন্য আন্তরিকভাবে নির্বাচন করতে চাইলে সরকার ও কমিশনকে আইনি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে এগুতে হবে।’

ভোটার জটিলতা প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা আছে বিদ্যমান ভোটার তালিকা অনুযায়ী ভোট অনুষ্ঠানের। এক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণার পর যারা ভোটার তালিকায় নতুন করে আসবেন, তাদের ভোটা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। আর কমিশনের আন্তরিকতা থাকলে এটা সম্ভব।’  

নির্বাচনটি আদৌ হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘কমিশন চাইলেই নির্বাচন হবে না, এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানাতে হবে। আর জাতীয় নির্বাচনের একবছরের কম সময়ের মধ্যে রাজধানীর মতো জায়গায় নির্বাচনের ঝুঁকি সরকার নেবে কিনা, তাও ভাবনার বিষয়।’

সাবেক নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  উপ-নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় জটিলতা হতো, যদি সীমানা নির্ধারণের গেজেট প্রকাশ না হতো। গেজেট হাওয়ায় ওই বাধা আর নেই। তবে, আইনি জটিলতা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের সঙ্গে নতুন ওয়ার্ডগুলোর কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন হওয়া উচিত। এটা না হলে বরং আইনের মুখোমুখি হওয়ার প্রশ্ন এসে যেতে পারে।’

করপোরেশনের মেয়াদের মধ্য সময় এসে কাউন্সিলর পদে সাধারণ নির্বাচন হলেও তাদের মেয়াদ ৫ বছর হওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই কমিশনার। তিনি বলেন, ‘মেয়র বা কাউন্সিলদের নিয়ে ৫ বছরের জন্য সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। ৫ বছর পর করপোরেশন বিলুপ্ত হয়ে গেলে সবার পদ আপনা-আপনি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’

জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে জটিলতার কথা উঠেছে, সেটার সমাধান সিটি করপোরেশনের বিদ্যমান আইনের মধ্যে স্পষ্ট করে বলা নেই। তবে, নতুন ওয়ার্ডগুলোর যেহেতু গেজেট প্রকাশিত হয়ে গেছে, যেহেতু ওই এলাকার জনগণকে তাদের জনপ্রতিনিধিত্ব নির্বাচন থেকে বঞ্চিত করা উচিত হবে না। এজন্য আমি মনে করি, ওই ১৮ ওয়ার্ডের ৩ পদে (মেয়র, কাউন্সিল ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর) এবং অন্য এলকায় এক (মেয়র) পদে ভোট হওয়া উচিত।’

নতুন ভোটার তালিকার মাধ্যমে ভোট গ্রহণের কথা উল্লেখ করে সাবেক এই কমিশনার বলেন, ‘৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হলে এরপর তফসিল দিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোটগ্রহণ সম্ভব হবে না।’ এ জন্য সরকার বা নির্বাচন কমিশন যৌক্তিক কারণ তুলে ধরে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কিছু দিনের জন্য পেছাতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

এর পেছনের আইনি যুক্তি তুলে ধরে ছহুল হোসাইন বলেন, ‘বর্তমানে প্যানেল মেয়র সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পালন করছেন। কাজেই এই পদটি শূন্য হওয়ার প্রশ্ন থাকছে না।’

এ বিষয়ে সাবেক কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘৩১ জানুয়ারি যেহেতু নতুন ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হবে, সেহেতু নতুন ভোটার দিয়ে ভোটগ্রহণ করা যৌক্তিক হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে দ্রুত ভোটার তালিকার সিডি তৈরি করতে হবে।’

নতুন ভোটার তালিকার মাধ্যমে ভোটগ্রহণসহ জটিলতা কাটাতে সরকার হলে নির্বাচন কিছুটা পেছানোর কথা বলে করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সরকার ভেলিড গ্রাউন্ডে নির্বাচন কিছুটা পিছিয়ে নিতে পারেন।’ এক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষাকে একটি গ্রাউন্ড হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখনও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে কোনও চিঠি পাইনি। তারা চিঠি না দিলেও তো আমরা বুঝতে পারছি না তারা কী চান। এজন্য চিঠি পাওয়ার আগে এ বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’

উল্লেখ্য, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর কারণে তার পদটি ১ ডিসেম্বর থেকে শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ফলে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেয়র পদে উপ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির। এরই মধ্যে উত্তর সিটিতে ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ছয়টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সিটিতেও সমান সংখ্যক ওয়ার্ড যুক্ত হয়েছে। সীমানা নির্ধারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সেগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসিকে চিঠিও দিয়েছে। তবে, করপোরশেনের মধ্য মেয়াদে এসে নির্বাচন হলে নতুন কাউন্সিলরদের মেয়াদ কী হবে, সেই জটিলতায় ইসি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কয়েক দফা চিঠি চালাচালিও হয়েছে।  এরই মধ্যে মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুজনিত কারণে উত্তর সিটির উপ-নির্বাচনের প্রশ্ন আসায় ওই ওয়ার্ডগুলোর নির্বাচনের বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে।

একই সঙ্গে উপ-নির্বাচনের পাশাপাশি ওয়ার্ডে সাধারণ নির্বাচন ও আগামী ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিতব্য নতুন ভোটার তালিকার ভোটারদের ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
ওপারের গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ
ওপারের গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন