X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলা ট্রিবিউনকে বজলুর রশীদ ফিরোজ

বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে

সালমান তারেক শাকিল
০৪ মার্চ ২০২২, ২৩:১৩আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩, ১৬:৫৩

বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের নব নির্বাচিত নতুন সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। তার ভাষ্য, আলোচনা হতে পারে। কিন্তু সম্মতি দেওয়া-না দেওয়া নীতিগত বিষয়। পাশাপাশি আলোচনার বিষষবস্তু কী হবে, তা গুরুত্বপূর্ণ ও মুখ্য বলে মনে করেন বামজোটের সাবেক এই সমন্বয়ক।

শুক্রবার (৪ মার্চ) রাতে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে বাসদের অবস্থান তুলে ধরেন সদ্য নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। এদিন বিকালেই রাজধানীর গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় প্রথম কংগ্রেসে নতুন কমিটির ঘোষণা করা হয়।

নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর বজলুর রশীদ ফিরোজ বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে প্রধান চ্যালেঞ্জ, নির্বাচনি পরিকল্পনা এবং বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির সম্ভাব্য মতবিনিময় প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

বাসদের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর এই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গতানুগতিক যেসব ধারা আছে, সেসব ধারায় আমাদের দল গড়ে ওঠেনি। বছরে একবার শিক্ষা ট্যুর হতো, সেখানে আদর্শিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হতো এবং সাংগঠনিক ও নেতৃত্বের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতো। ২০০৯ সালে আমরা কনভেনশন করেছিলাম। সেই কনভেশনের মধ্য দিয়ে আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছিল। আহ্বায়ক কমিটি থেকে সাধারণ সম্পাদক এবং সেখানে ৮ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি হয়েছিল। তারপর এই ২০২২ সালে এসে আমাদের প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হলো, এটা আমাদের দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটাকে কেন্দ্র করে দেশে ও দেশের বাইরে যারা বিভিন্ন সময়ে আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং আছেন, তাদের একটা আবেগ অনুভূতি লক্ষ্য করা গেছে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, সামনে লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের দলটাকে আরও সুশৃঙ্খল ও আরও সুগঠিত করা এবং দলকে শক্তিশালী করা। এই দেশে শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রামকে গতিশীল ও  বেগবান করা এবং এটাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া। এটাই আসলে বড় সংগ্রাম, বড় চ্যালেঞ্জ। এরপর যেটা হচ্ছে, দেশে বর্তমানে যে স্বৈরাচারী ও কতৃত্ববাদী শাসন চলছে— এই শাসনের বিরুদ্ধে একটা ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলা। এখানে বামপন্থী শক্তি, প্রগতিশীল শক্তি এবং যারা উদার গণতান্ত্রিক শক্তি, তাদেরকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সেই আন্দোলনকে সামনের দিকে অগ্রসর করে নেওয়া।’

‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে অঙ্গীকারগুলো ছিল— সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। পরবর্তীকালে  সংবিধানে যে চার মূলনীতি ছিল সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা,জাতীয়তাবাদ— সেই সমাজতন্ত্র থেকে দেশ অনেক দূরে। ৫০ বছরের প্রতিবাদী সমাজ মানুষের যে অধিকার সেগুলো প্রতিষ্ঠা করতে পারে নাই। সেখান থেকে সমাজতন্ত্রের যে সংগ্রাম এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, শোষণ-মুক্তির চেতনা, সাম্য সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে চেতনা, সেই লক্ষ্যে আমাদের এই সংগ্রামটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এটাই আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ’, বলে যোগ করেন বজলুর রশীদ ফিরোজ।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বাসদের নতুন সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচনটা আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবো, নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য আন্দোলন করবো। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবিটা আমরা করবো। নির্বাচন হলে অনেক ক্ষেত্রে সন্ত্রাস কমে যাবে, টাকার খেলাটা কমে যাবে। কারণ যে দল যে পরিমাণে ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদ সদস্য পাবে। সে ক্ষেত্রে টাকার বস্তা নিয়ে কেউ যাবে না। কেউ হাজির হবে না, ‘আমাকে ভোট দাও’। সেজন্য মার্কাকে ভোট দেবে। দলের ঘোষণাপত্র, নির্বাচনি ইশতেহার মার্কা দেখে তারা ভোট দেবে। সেক্ষেত্রে এখানে কোনও প্রার্থীর বিষয় থাকবে না। সেক্ষেত্রে নির্বাচনটা অনেক সহিংসতামুক্ত হতে পারে। সেই চ্যালেঞ্জগুলো দিয়ে আমরা অগ্রসর হবো।’

নির্বাচনি সংস্কার বা সংখ্যানুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বিএনপি বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করছে। আপনাদের সঙ্গেও কি এ ধরনের আলোচনা হয়েছে? জবাবে বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘আলোচনা তো হতেই পারে। আলোচনা করতেই পারে। তবে আমাদের দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কোনও আলোচনা হয়নি। অন্যকোনও দলের সঙ্গে হয়েছে কিনা— আমাদের বামজোটভুক্ত, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে নাকি হয়েছে। আমরা শুনেছি, তারা বলেছে। আমাদের  সঙ্গে এখনও আলোচনা হয়নি।’

বজলুর রশীদ ফিরোজ বলছিলেন, দ্বিতীয়ত, আলোচনা হতে পারে, কিন্তু আলোচনার বিষয়বস্তু কী? মূল বিষয়তো ঠিক থাকবে। একটা হলো এই সরকার ফ্যাসিবাদী সরকার, জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে, জনগণের অধিকার হরণ করেছে। কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। শ্রমিক-কৃষকদের যে ন্যায্য দাবি, সেগুলো থেকে বঞ্চিত করেছে। গুম খুন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন— এগুলোর মাধ্যমে মানুষকে হয়রানি করছে। বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে। এখন বিএনপিকেও সেটা প্রমাণ করতে হবে, বিএনপি অতীতে কী করেছে, সেগুলোর কি ভুল স্বীকার করবে তারা? বলে প্রশ্ন রাখেন ফিরোজ।

বিএনপির উদ্দেশে বাসদ নেতা বজলুর রশীদের আরও প্রশ্ন, ‘তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, সেগুলো কি বাতিল করবে? এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তিন জোটের রূপরেখার ছিল বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করবে।কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি পালাক্রমে ক্ষমতায় গেছে, তারপরেও ৩৫ বছরে সে আইন বাতিল করে নাই। তারপরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, বিশেষ নিরাপত্তা আইনের মতো কালো আইন করার জন্য  যে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে রাস্তা খুলে দিলো, সেই দ্বিতীয় সংশোধনী কিন্তু বাতিল করে নাই। কাজেই দ্বিতীয় সংশোধনী যতদিন থাকবে, এখানে সংবিধানে ততদিন পর্যন্ত এই যে কালো আইন প্রণয়নের যে রাস্তাটা, সেটা খোলা থাকবে। সেটা বাতিলের কথা কি বিএনপি বলবে? বলে নাই, যদি বলে তাহলে সেটা এক।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। বিএনপি সেটা দেবে? এখন এই যে গুম-খুন যারা করছে, তাদের ইনডেমনিটি দেওয়া আছে, সেটা বাতিল করে তাদের কি বিচার করবে? আমরা বলেছি, যারা টাকা পাচার করেছে, সেই পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনতে হবে। ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে ঋণের টাকা উদ্ধার করতে হবে। অন্যথায় তাদের যে সম্পদ তা বাতিল করতে হবে। সেগুলো কি করবে বিএনপি? এগুলো যদি করে, তাহলে তারা জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিক।’

বজলুর রশীদ ফিরোজের ভাষ্য, ‘সেগুলো নিয়ে হলে পরে আন্দোলন হতে পারে। কিন্তু সেগুলো কি করবে? সেগুলো না করে চোর তাড়িয়ে ডাকাত নিয়ে আসবো— এরকম তো ব্যাপার হতে পারে না।’

বাসদনেতা ফিরোজ বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি, তারা সরকার উচ্ছেদ করতে চায়, আমরাও চাই। তারা সরকারকে উচ্ছেদ করে একই ধরনের সরকার বসাতে চায়। কিন্তু আমরা এই ব্যবস্থা বদলাতে চাই। এই দুইটার মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। কিন্তু তারা যদি এই মুহূর্তে এই সরকারকে উচ্ছেদ করতে পারে, তাহলে আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। বরঞ্চ আমরা খুশি হবো। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সরকার উচ্ছেদের জন্য আন্দোলন করছি, তারাও তাদের জায়গা থেকে আন্দোলন করুক। কিন্তু তারা তো মাঠে নেই। আমাদের লোক কম থাকুক, পারি না পারি রাস্তায় আছি। এই যে পাটকল বন্ধ করে দিলো, তারা ক্ষমতায় গেলে কি খুলবে? চিনিকল বন্ধ করে দিলো, তারা ক্ষমতায় গেলে কি খুলবে? সেই কথাগুলো তো জনগণের সামনে বলতে হবে।’

বজলুর রশীদ ফিরোজ যোগ করেন, ‘তারপরে যে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি, তাদের যে আস্ফালন, জামায়াতে ইসলামী তো তাদের সঙ্গে আছেই। জামায়াতকে বিএনপি ছাড়লে আওয়ামী লীগ ধরে, আওয়ামী লীগ ছাড়লে বিএনপি ধরে। বা বিএনপি জামায়াতকে ধরলে আওয়ামী লীগ হেফাজতকে ধরে। এরা সবাই মৌলবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। সেজন্য আলোচনা করতে পারি, কিন্তু সম্মতি দেওয়া না দেওয়া সেটা নীতির ব্যাপার। আলোচনার বিষয়বস্তু এবং এই বিষয়টাই আসলে মুখ্য, এটাই গুরুত্বপূর্ণ। ডেমোক্রেটিক একটা ভ্যালুও থাকা দরকার। রাজনৈতিক সহনশীলতাও থাকা দরকার। আমাদের ইন্ডিয়া থেকে গেস্ট আসার কথা ছিল, কিন্তু ভিসা দিলো না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দিলো না। এগুলো তো অন্যায়। এগুলো তো মানুষের অধিকার হরণ করা। সাংবিধানিক যে অধিকার, সেগুলো হরণ করা। এর বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করবে, তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন থাকবে।’

আরও পড়ুন: বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
তিস্তাসহ ৫৪টি নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দাবিতে বাসদের তিন দিনের রোডমার্চ
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী