X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলা ট্রিবিউনকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান

আমরা জাতিগতভাবেই ‘দায়িত্ব-জ্ঞানহীন’ হয়ে পড়েছি

রশিদ আল রুহানী
০১ জুন ২০১৬, ০৩:৫৪আপডেট : ০১ জুন ২০১৬, ০৪:০১

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান দেশে আস্তে-আস্তে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও সামনে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। চ্যালেঞ্জগুলো আসার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমরা দেশের মানুষ জাতিগতভাবেই সমস্ত কাজে ‘দায়িত্ব-জ্ঞানহীন’ মনোভাবের হয়ে পড়েছি। না করলেই নয়, তাই করি, দায়সারা গোছের হয়ে পড়েছি। এভাবে চলতে থাকলে উন্নয়ন ঘটতে কিছুটা বিলম্ব হবে।
অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, গত ৪ এপ্রিল ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেছেন। এর আগে তিনি ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে যোগদানের পর তার কর্মপরিকল্পনা ও শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান হালচাল, উন্নয়ন ও নানারকম সমস্যা নিয়ে রবিবার তিনি বাংলা ট্রিবিউনের মুখোমুখি হন। 

বাংলা ট্রিবিউন: একাদশে ভর্তির আবেদনের প্রথম দিনই কিছু জটিলতার মুখে পড়ে আবেদনকারীরা। গত বছর এমন সমস্যা হওয়ার পরে এ বছর  সচেতন ছিলেন বলেই জানি। তারপরও এবারও জটিলতা ছিল কেন?

মাহবুবুর রহমান: একাদশে ভর্তির আবেদনের প্রথম দিন আমি নিজে বিভিন্ন এলাকার কম্পিউটারে ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করেছি। দেখেছিলাম সমস্যা হচ্ছে, পরে বুয়েটকে জানিয়ে ঠিক করিয়েছি। আবেদন করতে শিক্ষার্থীরা প্রথম দিন কয়েক ঘণ্টার জন্য একটু জটিলতায় পড়েছিল। পরে আর কোনও সমস্যা হয়নি। এদিকে, এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করতে গিয়েও সমস্যা হয়েছে আবেদনকারীদের। এসএমএস করলেও ফিরতি এসএমএস একটু দেরিতে আসছিল। পরে অবশ্য সেটাও ঠিক করা হয়েছিল। বর্তমানে সবই ক্লিয়ার। শিক্ষার্থীরা এখন ভালোভাবেই আবেদন করতে পারছে। এছাড়া গতবার যেহেতু এই আবেদন নিয়ে একটা তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে ফলে এবার সচেতন ছিলাম এই ভর্তির আবেদনে যেন কোনও জটিলতা না থাকে।

বাংলা ট্রিবিউন: এ বছর এইচএসসির প্রায় সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই ফেসবুকে পাওয়া গেছে। এটা নিয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিও হয়েছে। কেন প্রশ্নফাঁস হচ্ছে এবং প্রশ্নফাঁস ঠেকানো যাচ্ছে না কেন?

মাহবুবুর রহমান: এই ব্যাপারটি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও আমরা অনেক বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ছি। অন্যান্যবার এমন প্রশ্নফাঁস হয় বলে এবার অনেক নিরাপত্তা, শক্ত অবস্থান নিয়েছে সরকার। এত সাবধান থাকার পরও প্রশ্ন ফেসবুকে পাওয়া গেল। এটা আসলেই মর্মান্তিত একটা ব্যাপার। ফেসবুকে প্রশ্ন আসছে এটা জানার সঙ্গে-সঙ্গে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গোয়েন্দারা মাঠে নেমে অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু কোথাও কোনও আলামত পাইনি। ফেসবুকে প্রশ্ন এলেই বুঝতে পারছি প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর ঠিক এক ঘণ্টা আগেই ফেসবুকে প্রশ্ন চলে যাচ্ছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর অন্তত এক ঘন্টা আগেই প্রশ্ন পাঠাতে হয়। হয়ত সেখান থেকেই কিছু অসাধু লোক আগেই প্রশ্ন খুলে প্রশ্ন ফেসবুকে দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমাদের ধারণা এটা হচ্ছে। আর এটাই যদি হয় তাহলে তো ধরা অনেক কঠিন। কোন কেন্দ্র্রে এমন হচ্ছে এটা তো বোঝা অসম্ভব। কারন হাজার হাজার কেন্দ্র, সব কেন্দ্রে তল্লাশি করাও তো কঠিন। শুধু এটা না, সব ধরনের চাকরি পরীক্ষাসহ অনেক পরীক্ষার প্রশ্নই ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন বের করে কঠোর নিরাপত্তা পুলিশ সঙ্গে থাকে নিরাপত্তার মাধ্যমেই প্রশ্ন কেন্দ্রে যায়, হয়ত পুলিশ মাঝে মাঝে কাজ করে না। ফলে সুযোগ বুঝে প্রশ্ন বাইরে চলে আসছে। সরকারবিরোধী লোকজন,  স্কুলের অসাধু কমিটির সদস্য, শিক্ষক রয়েছে, তারা এই প্রশ্ন বের করে দেয়। এটা নিয়ে খুবই বিব্রত হয়ে পড়ছি। আর এমন সময় প্রশ্ন বের করে দেয় তখন এমসিকিউ প্রশ্ন পাওয়াতেই সুবিধা বেশি হয়। কারণ অল্প সময়ের মধ্যেই সেটার উত্তর বের করা সহজ। যা এমসিকিউ প্রশ্নের জন্য এতটা সহজ নয়। এটা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীও প্রকাশ্যে বলেছেন, এমনটা হয় হয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্নফাঁস ঠেকানো অসম্ভব।

বাংলা ট্রিবিউন: প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কেন্দ্রে প্রশ্ন পাঠানোর কোনও পরিকল্পনা আছে কি?

মাহবুবুর রহমান: এমন একটি পরিকল্পনার সরকারের রয়েছে বলে জানি। তবে সেটাও যে কতখানি উপকারে আসবে তা আমার জানা নেই। মাঠ পর্যায়ে গেলে বোঝা যাবে। তখনও তো এমন করে সবাই যোগসাজশ করে প্রশ্ন বাইরে দিতে পারে।

বাংলা ট্রিবিউন: ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা হয় মাঝে মাঝেই শোনা যায়। এটা তো শিক্ষার্থীদের অনেক বড় ক্ষতির কারণ।

মাহবুবুর রহমান: ভুল প্রশ্নপত্র হওয়াটা আসলেই অনেক দুঃখজনক ব্যাপার। এমনটা হওয়া একদম উচিত নয়। আমরা অনেক সচেতন থাকি তবুও মাঝে মাঝে প্রশ্নপত্রে ভুল চলে আসে। তবে পরীক্ষা হওয়া হলে পরীক্ষার্থীর পক্ষেই কাজ করে বোর্ড।

বাংলা ট্রিবিউন: কেন প্রশ্নে ভূল থাকে? আপনাদের কি তাহলে কোথাও গাফিলতি আছে?

মাহবুবুর রহমান: আমরা যখন প্রশ্ন পত্র তৈরি করতে দেই তখন তারা কাজ সঙ্গে সঙ্গে শুরু করে না। একদম শেষ সময় এসে তারা প্রশ্নপত্র তৈরি করে। আবার তাদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র পাওয়ার পরে মডারেশন হয়, সেখানেও তো ধরা পড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেখানেও ধরা পড়েনা। এটা আসলেই দুঃখজনক। আবার খাতা ভুলভাবে মূল্যায়নও হয় মাঝে মাঝে। কিছু টেকনিক্যাল কারণে এমনটা হয়। কদিন আগে একটা ছেলে একটি সাবজেক্টে ফেল করাতে সে তো আত্মহত্যা করল। পরে যদিও সেই রেজাল্ট ঠিক করে দেখা গেল, ওই ছেলের খাতা ভুলভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। একটি মাত্র ভুলে একজন শিক্ষার্থীর জীবন চলে গেল। আমরা আমাদের বোর্ডে অনেকবার চেক করি কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা। তবে আমি এখানে আসার পরে এ সব বিষয়ে খুব সতর্কভাবে কাজ করতে চাই।

বাংলা ট্রিবিউন: অভিযোগ আছে, প্রশ্নপত্রে অনেক সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য থাকে। এটা কি থাকা উচিত?

মাহবুবুর রহমান: প্রশ্নপত্র তৈরির আগে প্রশ্ন যারা করেন, তাদের জন্য আমরা নীতিমালা করে দেই, সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কথাবার্তা প্রশ্নে বলা যাবে না, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে, এমন প্রশ্ন করা যাবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা! প্রশ্নপত্রে এই সমস্যা থাকেই। এমনটা যেন আর না হয় সেদিকে নজর রাখব।

বাংলা ট্রিবিউন: দেশে পাশের হার বাড়ছে। আর এই হার বাড়ানোর জন্য পরীক্ষার খাতায় নং বেশি দেওয়ার বিষয়ে অনেকেই অভিযোগ করেন শিক্ষা বোর্ড থেকে নাকি শিক্ষকদের প্রতি নিদের্শনা দেওয়া থাকে?

মাহবুবুর রহমান: পরীক্ষার খাতায় নং বেশি দেওয়ার বিষয়ে কোনও পরামর্শ দেওয়া হয় না। এটা ভুল কথা। যে ভালো লিখবে, তাকেই ভালো নং দেবে শিক্ষকরা, যে লিখবে না তাকে নং দেওয়া হবে না। এটাই স্বাভাবিক। তবে কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: স্কুল কলেজে শিক্ষকরা বর্ধিত ফি নেওয়ার বিষয়টি অনেক সমালোচনায় আসে। এখন সর্বশেষ অবস্থা কী?

মাহবুবুর রহমান: যারাবাড়তি ফি নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা অ্যাকশন নিয়েছি। রাজশাহীতে অনেক বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এমন। তাদের সবগুলোর ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করার নির্দেশনা গিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে। সামনেও এমন যদি কেউ করে তাহলে তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না।

বাংলা ট্রিবিউন: শিক্ষা বোর্ড সামনে শিক্ষার উন্নয়নের জন্য আপনার নেতৃত্ব সামনে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে?

মাহবুবুর রহমান: আমি এখানে আসার পরে প্রথম যে বিষয়েটি আমার নজরে এসেছে তা হলো, এ বছর এসএসসিতে ৫৩টি প্রতিষ্ঠানের একজন পরীক্ষার্থীও পাস করেনি। এটা আসলেই অনেক হতাশাজনক ব্যাপার। আমি চাই এই সব প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এদের ডাকাব, সঙ্গে সঙ্গে ভালো ফল করেছে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের ডেকে সেমিনার করব। তাদের সমস্যা কী—এটা খুঁজে বের করব। এই হার কমানোর চিন্তা রয়েছে আমার।

কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পেয়েছি, যাদের শিক্ষার্থী দশ জনের নিচে। এমনকি একজন শিক্ষার্থী আছে এমন প্রতিষ্ঠানও আছে। ওই একজনই যদি পাস করে তাহলে তারা বলতে পারবে তারা শতভাগ পাস করেছে। আর ফেল মানে শতভাগ ফেল। আমরা এই হার কমাতে কাজ করতে চাই।

আর ওপড়তে পারেন: ইউপি নির্বাচন দলীয় হওয়ায় এতো প্রাণহানি

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
বাংলা ট্রিবিউনকে ওয়াসিকা আয়শা খান‘নারীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন, এর নেপথ্যে শেখ হাসিনা’
সর্বশেষ খবর
কাঁচা আম দিয়ে টক ডাল রান্না করবেন যেভাবে
কাঁচা আম দিয়ে টক ডাল রান্না করবেন যেভাবে
অবৈধ অটোরিকশা-ইজিবাইককে লাইসেন্সের আওতায় আনার দাবি
অবৈধ অটোরিকশা-ইজিবাইককে লাইসেন্সের আওতায় আনার দাবি
বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি এবং ৫টি সমঝোতা স্মারক সই
বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি এবং ৫টি সমঝোতা স্মারক সই
যুক্তরাষ্ট্র থেকে পার্সেলে তরুণদের কাছে আসছে কোটি টাকার মাদক
যুক্তরাষ্ট্র থেকে পার্সেলে তরুণদের কাছে আসছে কোটি টাকার মাদক
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা