X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘ডাস্টবিনের শিশু’ নয়, ওর নাম আনিশা

জাকিয়া আহমেদ
২৩ মার্চ ২০১৭, ২২:০২আপডেট : ২৩ মার্চ ২০১৭, ২২:১৫

শিশু আনিশা ও এখন আর ডাস্টবিনের কুড়িয়ে পাওয়া শিশু নয়, ওর নাম আনিশা। আমরাই ভালোবেসে ওর এই নাম দিয়েছি। আনিশা নামেই এখন ওকে ডাকা হচ্ছে। সব কাগজপত্রে ‘আননোন বেবি’র জায়গায় লেখা হয়েছে আনিশা। আপনারাও ওকে নিয়ে কিছু লিখতে চাইলে ওর নাম লিখবেন আনিশা; ওকে ‘ডাস্টবিনের শিশু’ নামে ডাকবেন না। এটা কারও নাম হতে পারে না। বাংলা ট্রিবিউনকে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক।
গত ১১ মার্চ মিরপুরের নবাবেরবাগ বেড়িবাঁধ এলাকার ডাস্টবিন থেকে পলিথিনে মোড়ানো ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে শাহআলী থানা পুলিশ। পরে শিশুটিকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাকে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র রাখা হয়। এখন শিশুটি রয়েছে নবজাতক বিভাগের স্পেশাল কেয়ার বেবি ইউনিটে (স্ক্যাবু)।
শিশুটির নাম রাখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নবজাতক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মনীষা ব্যানার্জী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিশুটি ভর্তি হওয়ার সময় তার কোনও নাম ছিল না। তাকে আননোন বেবি হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয় হাসপাতালের খাতায়। কিন্তু একজন মানুষ পৃথিবীতে এসেছে, তার কোনও নাম থাকবে না— এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের খারাপ লাগত। ওর রক্তের প্রয়োজন হলে ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত আনার সময়ও নাম দরকার হয়। তখনই আমরা ওর নাম রাখি আনিশা। আমরা এখন ওকে আনিশা নামেই ডাকছি।’
এদিকে শিশুটিকে কুড়িয়ে পাওয়া মো. বিপ্লব হোসেন আগেই বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন, তিনি এই মেয়ের নাম রেখেছেন আশা সিদ্দিকী। বিপ্লব বলেন, ‘আশা নামে আমার বোন ছিল। কয়েক বছর আগে সে মারা গিয়েছে। বোনের স্মৃতিকে ধরে রাখতেই আমি শিশুটির এই নাম রেখেছি।’
বিপ্লব হোসেন বলেন, ‘আমাদের দুই সন্তানের দু’টিই ছেলে। আমার স্ত্রী লিপি আক্তার তাই শিশুটিকে দত্তক নিতে খুবই আগ্রহী। এর জন্য আমরা আদালতেও গিয়েছি।’
বিপ্লবের মতো আরও অনেকেই শিশু আনিশাকে দত্তক নিতে আবেদন করেছেন। আদালতের শরণাপন্নও হয়েছেন অনেকে। ঢামেক হাসপাতালের একটি বিশ্বস্ত সূত্রও বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, আনিশাকে দত্তক নিতে উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন মহল থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২১ মার্চ) একটি শুনানি হয়েছে, পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২৯ মার্চ।
আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আনিশাকে দত্তক নিতে আগ্রহী সবাইকে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। কারণ শিশুটিকে দত্তক দেওয়ার ক্ষমতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে নেই। তাদের দায়িত্ব আনিশাকে সুস্থ করে সমাজসেবা অধিদফতরে স্থানান্তর করা। সেখান থেকেই সরকারি নিয়ম মেনে দত্তক নিতে হবে আনিশাকে।
এ বিষয়ে মনীষা ব্যানার্জী বলেন, ‘যথাযোগ্য প্রমাণ ও নিয়ম মেনেই শিশুদের দত্তক দেওয়া হয় আদালতের মাধ্যমে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা কেবল তাকে সুস্থ করার দায়িত্বে নিয়োজিত। আনিশা আগে সুস্থ হোক। তারপর এ বিষয়ে যাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার, তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।’
এদিকে, শিশু আনিশার শারীরিক অবস্থা এখনও পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নয় বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান অধ্যাপক ডা. মনীষা ব্যানার্জী। তিনি বলেন, ‘আনিশার রক্তের প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে। এ কারণে তার জন্য রক্তের দরকার হচ্ছে। তবে আশার কথা হলো— সে এখন খাবার হজম করতে পারছে। তাকে বিকল্প পদ্ধতিতে দুধও খাওয়ানো হচ্ছে।’ প্রথম কয়েকদিন আনিশাকে অন্য মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানো হলেও শিশুটিকে স্থানান্তরের পরে মায়ের দুধ পাবে না বলে বিকল্প পদ্ধতিতে গুঁড়ো দুধ খাইয়ে অভ্যস্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অধ্যাপক মনীষা ব্যানার্জী বলেন, ‘একটি নবজাতকের স্বাভাবিক ওজন আড়াই থেকে চার কেজি হলেও আনিশার ওজন মাত্র ১ কেজি ৭শ গ্রাম।’ শিশুটির মুখে ঘা ছিল এবং জন্মের পর শিশুটি খাবার পায়নি বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন-

মিরপুরে একভবনের বহুবিধ ব্যবহার, অতঃপর অগ্নিকাণ্ড

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম গতিশীল করার নির্দেশ

/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা