X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

রিয়াদে অভিবাসন ট্যাক্সের মধ্যেও স্কুলে সন্তানদের নিয়ে প্রবাসীদের ভিড়

অহিদুল ইসলাম, সৌদি আরব
২০ আগস্ট ২০১৭, ০৭:০০আপডেট : ২০ আগস্ট ২০১৭, ০৭:০০
image

সৌদি আরবে বাংলাদেশি প্রবাসী

স্ত্রী-সন্তানদের ওপর আরোপিত সৌদি অভিবাসন ট্যাক্স মাথায় নিয়ে রিয়াদে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ইংরেজি শাখা স্কুলের (বিআইএসইএস) ভর্তি পরীক্ষায় প্রবাসীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ১৮ আগস্ট (শুক্রবার) স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে ১১ পর্যন্ত পরীক্ষা চলাকালীন স্কুলপ্রাঙ্গনে সন্তানদের জন্য প্রবাসীরা অপেক্ষা করছিলেন।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ইউকেজি থেকে গ্রেড-১১ পর্যন্ত বিভিন্ন সংখ্যাক্রমে ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইউকেজি’র শিশুশিক্ষার্থী। এতে রয়েছে ইউকেজি ৪৮, গ্রেড ওয়ান ১৪, গ্রেড টু ৮, গ্রেড থ্রি ৪, গ্রেড ফোর ৪, গ্রেড ফাইভ ১, গ্রেড সিক্স ১ গ্রেড সেভেন ২, গ্রেড এইট ১, গ্রেড নাইন ২ এবং গ্রেড এলেভেন ১। সর্বমোট ৮৫ জন অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয় সকাল ১১টায়।

পরীক্ষা পরিদর্শনে দূতাবাসের মিশন উপপ্রধান ড. মো. নজরুল ইসলাম, স্কুল প্রিন্সিপাল মো. বজলুর রশীদ, পর্ষদ চেয়ারম্যান ডা. আবুল বাশার মো. নুরুজ্জামান, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমান ও প্রশাসনিক সদস্য গোলাম মোস্তফা উপস্থিত ছিলেন।

পর্ষদ চেয়ারম্যান ডা. আবুল বাশার মো. নুরুজ্জামান জানিয়েছেন, এ মাসেই আরো কয়েক দফা ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা গত ঈদ এবং গ্রীষ্মের ছুটিতে দেশে গিয়েছেন এমন অনেকেই এখনো সৌদি আরবে ফিরে আসেনি। এসব পরিবারের অনেকেই ছেলেমেয়েদের ভর্তি করার জন্য বাংলাদেশ থেকে যোগাযোগ করেছেন। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য পুনরায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।

প্রিন্সিপাল মো. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, আগামী রবিবার ২০ জুন সকালে নোটিস বোর্ডে ফলাফল টাঙ্গিয়ে দেওয়া হবে এবং ভর্তিসংক্রান্ত যাবতীয় ফি পরিশোধ করে ওই দিন থেকেই ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস শুরু করতে পারবে।

মিশন উপপ্রধান ড. মো. নজরুল ইসলাম পরীক্ষা প্রদর্শনে এসে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সবকিছুই একাডেমিক নিয়মানুবর্তিতায় করা হয়েছে। দূতাবাসের গাইডলাইন এবং স্কুলের পরীক্ষণ-পদ্ধতিতে সমতা থাকার কারণে নিয়মশৃঙ্খলার কোনো ব্যত্যয় দেখা যায়নি।

এদিকে স্কুলপ্রাঙ্গনে উপস্থিত অভিভাবকদের অনেকেই স্ত্রী-সন্তানদের ওপর অভিবাসন ট্যাক্স আরোপের কারণে নিজেদের অসুবিধার কথা জানালেন। অনেকের মতে, জীবিকার জন্য এসে এতদিনের অর্থস্বাচ্ছন্দ্য থেকে এ ধরনের ট্যাক্স আরোপের ফলে সবকিছু কুলিয়ে উঠতে অনেকটা বেগ পেতে হবে। তাদের মতে, এর ফলে সৌদি প্রবাসী পরিবার থেকে দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ অন্ততঃ ৪০ শতাংশ কমে যাবে। এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, প্রতিমাসে ধার্যকৃত মাথাপিছু ১শ’ রিয়াল ট্যাক্স ব্যয় করে এমন অনেক পরিবারে ৩ থেকে ৪ জন সদস্যের এক বছরের অতিরিক্ত খরচ সামাল দেওয়া কঠিন হবে। তা ছাড়া পরবর্তী বছরগুলিতে এই ট্যাক্স মাথাপিছু ২শ’ এবং তৃতীয় বছরে ৩শ’ রিয়াল ধার্য করায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সৌদি আরবে বসবাস করা সম্ভব হবে না।

একজন অভিভাবক জাফর কোরেসী জানালেন, ছেলেকে ইউকেজিতে ভর্তির জন্য এসেছেন। এ বছর ট্যাক্স পরিশোধ করে পরিস্থিতি দেখবেন। কিন্তু আগামী বছরে এ ধরনের ট্যাক্স দিয়ে পরিবার নিয়ে তার মতো অনেকের পক্ষেই সৌদি আরব থাকা সম্ভব হবে না।

অন্য একজন বললেন, সৌদি আরব শান্তির দেশ। স্ত্রী-সন্তানদের ওপর অভিবাসী ট্যাক্সের কারণে কিছুটা অসুবিধা হলেও নিজের কাছেই রাখবেন পরিবারের সদস্যদের। তার মতে, স্ত্রী-সন্তানদের কাছে রাখার জন্য খরচের বাজেট কিছুটা কাটছাট করে সাবধানে হিসাব-নিকাশ করবেন।

একজন ব্যবসায়ী মো. সেলিম বলেন, তার তিন সন্তান পড়াশোনা করছে রিয়াদে বাংলাদেশ ইংরেজি শাখাস্কুলে। সন্তান এবং স্ত্রী’র ওপর আরোপিত এই ট্যাক্স তার জন্য ব্যয়বহুল। কিন্তু সন্তানদের পড়াশোনা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে এই মুহূর্তে দেশে ফিরে যাওয়ার চিন্তা করতে পারছেন না। তিনি বলেন, সরকারিভাবে আলোচনা করে বিষয়টি একটি সুবিধাজনক পর্যায়ে আনা গেলে রেমিট্যান্স আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশই লাভবান হবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরে সৌদি সরকার প্রবাসীদের ওপর নির্ভরশীল সদস্যদের জন্য অভিবাসী ট্যাক্স আদায়ের আইন প্রণয়ন করে। এতে চলতি বছরে প্রতি জনের মাসিক ১শ’ দ্বিতীয় বছরে ২শ’ এবং তৃতীয় বছরে ৩শ’ রিয়াল ধার্য করা হয়। এভাবে প্রতি জনের ১ম বছরে ১২শ’ (২৫,৯২০ টাকা), ২য় বছরে ২৪শ’ (৫১,৮৪০ টাকা) এবং তৃতীয় বছরে ৩৬শ’ রিয়াল (৭৭,৭৬০ টাকা) অভিবাসন ট্যাক্স ধার্য করা হয়। এ ধরনের কর আরোপের ফলে এরই মধ্যে সৌদি আরবে অবস্থানরত ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকাসহ মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশসমূহের অনেক প্রবাসী তাদের পরিবার-পরিজনদের দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করেছেন।

বাংলাদেশিরা এখনো উল্লেখযোগ্য হারে স্ত্রী-সন্তানদের দেশে ফেরত না পাঠালেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন।

/এমএইচ

সম্পর্কিত
তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ যুবকের লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা
পাচার হওয়া বোনকে নিতে এসে কলকাতায় অসহায় দশায় চট্টগ্রামের তরুণ
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
সর্বশেষ খবর
খুলনায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা
খুলনায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা
রৌমারীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর প্রতিপক্ষের হামলা
রৌমারীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর প্রতিপক্ষের হামলা
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস