X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গি ইয়ামিন মিয়ার বেলজিয়াম কানেকশন!

নুরুজ্জামান লাবু
০৩ মার্চ ২০১৮, ২২:০৮আপডেট : ০৪ মার্চ ২০১৮, ০৮:৫০

ইয়ামিন মিয়া ওরফে জাভেদ বাংলাদেশি জঙ্গি ইয়ামিন মিয়া ওরফে জাভেদের সঙ্গে বেলজিয়ামে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়া তিউনিশিয়ান এক জঙ্গির যোগাযোগের তথ্য পেয়েছে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ইয়ামিন মিয়া ওরফে জাভেদকে ডেমরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের মিডিয়া শাখার ‘মাশুল’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতো ইয়ামিন। গ্রেফতারের পর ইয়ামিনকে কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে সিটিটিসির কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য জানতে পেরেছেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যার সঙ্গে ইয়ামিন  দীর্ঘ দিন ধরে যোগাযোগ করে আসছিল, তার নাম মারোয়ান-আল-ইসা। সে তিউনিশিয়ান নাগরিক। গত নভেম্বরের শেষের দিকে বেলজিয়াম পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। মারোয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইয়ামিন মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপের কোনও দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এজন্য সে পাসপোর্ট তৈরির উদ্যোগও নিয়েছিল।

সিটিটিসি ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ইয়ামিন আনসরুল্লাহ বাংলা টিমের মধ্যম সারির নেতা। সে সংগঠনের মিডিয়া শাখার দায়িত্বশীল ছিল। অনলাইনে দেশের বাইরের অনেকের সঙ্গে তার যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি।’ তারা বলছেন, ‘ইয়ামিন ও মারোয়ান দু’জন মিলে কিভাবে জঙ্গি হামলা করা যায় এবং এজন্য কী কী করা প্রয়োজন বা কিভাবে সতর্কতার সঙ্গে পথ চলতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতো। ইয়ামিনের কাছ থেকে মোবাইল ফোন জব্দ করার পর এ থেকে যোগাযোগের একাধিক সিক্রেট অ্যাপস থেকে দীর্ঘ আলাপচারিতার এসব প্রমাণ পেয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পরে বিষয়টি নিয়ে বেলজিয়ামের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে মারোয়ান-আল-ইসার বিষয়ে সিটিটিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়। বেলজিয়ামের পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, গত নভেম্বরে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে মারোয়ান আল ইসাকে গ্রেফতার করা  হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে ইয়ামিন জানিয়েছে, গত ২-৩ মাস আগে হঠাৎ করেই মারোয়ান-আল-ইসার সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক বছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছিল তার সঙ্গে। পরে তারা মোবাইল নাম্বার আদান-প্রদান করে হোয়াটসআপ  ও টেলিগ্রামে অ্যাপসে যোগাযোগ করতো।

সিটিটিসি সূত্র বলছে, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ইয়ামিন ধূর্ত। ২০১২ সালে সে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য হিসেবে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার করলেও জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তাদের ধারণা, ইয়ামিন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের মিডিয়া শাখার দায়িত্ব পালনের আগে দাওয়া ও আসকারি শাখায় কাজ করেছে। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আনসারুল্লাহ বাংলা টিম যে নির্দিষ্ট সময় পরপর একাধিক ব্লগার, লেখক, প্রকাশকসহ মুক্তমনাদের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের সঙ্গে ইয়ামিন জড়িত রয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, জঙ্গি সংগঠনগুলোয় মিডিয়া শাখাটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। দাওয়া ও আসকারি শাখায় কাজ না করলে গুরুত্বপূর্ণ এই শাখায় দায়িত্ব পাওয়া সহজ নয়। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আসকারি শাখার সদস্যরাই বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। যাদের মধ্যে আবার অপস ও ইন্টেল নামে দু’টি ভাগ রয়েছে।

২০১৫ সালের ২৫ মে পুলিশ সদর দফতরের এক সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর থেকেই আনসারুল্লাহ বাংলা টিম তাদের নাম পরিবর্তন করে আনসার আল ইসলাম নামে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে। তারা আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের শাখা আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট (একিউআইএস)-এর অনুসারী। এর আগে ২০১৩ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবাকে হত্যার পর আলোচনায় আসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। এরপর একাধিক ব্লগার হত্যাকাণ্ডের তদন্তেও তাদের নাম এসেছে।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, ইয়ামিন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ২৭টি মিডিয়ায় বিভিন্ন প্রোপাগান্ডার দায়িত্বে ছিল। ভিডিও এডিটিং থেকে শুরু করে ইংরেজি থেকে বাংলায় এবং বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদক হিসেবেও কাজ করতো। তার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা ইস্যুতেও অর্থ সংগ্রহের কিছু তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া সংগঠনের জন্যও সে অর্থ সংগ্রহ করতো। তবে দেশের বাইরে থেকে সে কোনও অর্থ এনেছিল কিনা, তা নিশ্চিত নয় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ-খবর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৪ সালে একবার ড্রোনসহ কয়েকজন যুবককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ, তারা তাদের সহযোগী হিসেবে ইয়ামিনের নামও বলেছিল। কিন্তু ওই সময় ইয়ামিনকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। ইয়ামিনের বাসা কদমতলী এলাকার ১৮৮ নম্বর বটতলায়। কিন্তু বেশ কয়েক বছর পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থাকার পর সম্প্রতি সে আবার পরিবারের কাছে ফিরে এসেছিল। এসময়ে সে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বিভিন্ন মারকাজে অবস্থান করেছে বলে ধারণার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইয়ামিনের বাবা একজন পুলিশ কনস্টেবল।  

 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা