X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণের পর হত্যা: ট্রাভেল ব্যাগে লাশ গুমের চেষ্টা

শেখ জাহাঙ্গীর আলম
০৪ মার্চ ২০১৮, ০৪:৫২আপডেট : ০৪ মার্চ ২০১৮, ১১:০৫
image

লাশ

বাসায় একা পেয়ে ধর্ষণ করে গলা টিপে হত্যা করা হয় কলেজছাত্রী আখি আক্তারকে। পরে নিহতের গলার চেইন ও কানের দুল বিক্রির টাকা দিয়ে কেনা হয় বড় সাইজের একটি ট্রাভেল ব্যাগ। লাশ সেই ব্যাগে ভরে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের পাশে ফেলে আসে ঘাতক। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এমন ঘটনার পরদিনই উদ্ধার করা হয় লাশ। আসামি গ্রেফতার হয় ১ মার্চ। আসামির জবানবন্দি থেকেই জানা যায় এসব তথ্য ।

নিহত আখি আক্তার (১৫) রাজধানী মিরপুরে পল্লবী মহিলা ডিগ্রি কলেজের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন পল্লবীতে মামার বাসায়। একই বাসায় স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে থাকতেন নিহতের মামাতো ভাই ধর্ষক তরিকুল ইসলাম রায়হান (২৭)। ঘটনার দিন বাসায় আখিকে একা পেয়ে ধর্ষণ এবং হত্যা করে সে।

২৫ ফেব্রুয়ারি রাতেই ঢাকা রেলওয়ে থানায় নিহতের ফুফা মো নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। ১ মার্চ গভীর রাতে মাদারীপুর থেকে তরিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে ঢাকা রেলওয়ে থানা পুলিশ। এরপর শনিবার (৩ মার্চ) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার বর্ণনা দেয় গ্রেফতারকৃত আসামি তরিকুল। নিম্ন আদালতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতিকুল ইসলাম আসামি তরিকুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেন।

পুলিশ জানায়, আসামি তরিকুল ইসলাম রায়হান (২৭) নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানার পলাশহাটি গ্রামের মো নুরুল ইসলামের ছেলে। তরিকুল তার স্ত্রী ও সাত মাস বয়সী কন্যাসন্তান নিয়ে পল্লবীর সেকশন-১২, ব্লক-ই, ৩৩ নম্বর রোডের ৩৮ নম্বর বাসা ৬ষ্ঠ তলায় ভাড়া বাসায় তার চাচা রোকনের সঙ্গেই বসবাস করতেন। সে তেলের ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে ব্যবসা করতো।

ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধারের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নিয়ে গেলে নিহত আখিকে তার পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করেন। পরে আমরা মামলার তদন্ত শেষে মাদারীপুর থেকে আসামিকে গ্রেফতার করি। এতে সহায়তা করেছে মাদারীপুর থানা পুলিশ। আসামি তরিকুল হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে শনিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।’

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, মরদেহ বিমানবন্দরে ফেলে বাসায় ফিরে এসে সে আবার তার চাচা ও ফুফাতো ভাইকে দেখলে আরও সাতটি জিন্সের প্যান্ট নিয়ে সেগুলো ব্যাগে ভরে কালশী মোড়ে গিয়ে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ প্যান্টের দোকানদারি করে। এই সময়ের মধ্যে নিহতের কথিত প্রেমিক কালশী মোড়ে এসে আসামি তরিকুলের সঙ্গে দেখা করে এবং মোবাইল ফোন বন্ধ থাকার বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। ঠিক তখনও আখির মোবাইল ফোনটি আসামি তরিকুলের পকেটে ছিল। ততক্ষণে আখির পরিবারের সদস্যরা তাকে খোঁজাখুঁজিতে ব্যস্ত।

ঘটনার পর আখি নিখোঁজ মর্মে নাটক সাজায় তরিকুল। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিজেও খোঁজাখুঁজির নাটক করে। এরপর ঘাতক তরিকুল তার চাচা রোকানের সঙ্গে পল্লবী থানায় গিয়ে নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়রিও (জিডি) দায়ের করে।

আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি তরিকুল ইসলাম যা উল্লেখ করেন:

‘‘নিহত আখি আক্তার আমার ফুফাত বোন। আখি আমাদের বাসায় থাকতো। এই বাসায় আমার স্ত্রী, সাত বছরের কন্যাসন্তান, চাচা-চাচী, এক ফুফাত ভাই এবং আখি একই বাসার আলাদা আলাদা রুমে বসবাস করি। আমার বাবা-মা পল্লবীতেই আলাদা বাসায় থাকেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি আমার চাচি গার্মেন্টসে চাকরিতে চলে যায়, চাচা ও ফুফাত ভাই বাসার নিচতলায় তাদের লন্ড্রি দোকানে চলে যায়। আমার স্ত্রী সাত মাসের কন্যাসন্তান নিয়ে ভাসানটেক তার বাবার বাড়িতে গত ২/৩ দিন আগেই বেড়াতে যায়। এ কারণে বাসায় আমি ও ফুফাত বোন ছিলাম।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমি টিভিতে ইংলিশ এইচবিও চ্যানেলে রোমান্টিক মুভি দেখছিলাম। হঠাৎ আখিকে আমি কু-প্রস্তাব দেই। সে রাজি না হয়ে এই কথা সবাইকে বলে দেয়ার হুমকি দেয়। পরে আমি জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করি। তখন আখি কান্নাকাটি করে। ধর্ষণের ঘটনা সবাইকে বলে দেওয়ার কথা বলে। তখন আমি আখির গলায় দুই হাত দিয়ে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করি।

আখির মৃত্যু নিশ্চিত হলে তার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল খুলে নেই। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি (SYMPHONY-P7) বন্ধ করে আমার প্যান্টের বাম পকেটে রাখি। এরপর ঘরের দরজা বন্ধ করে কালশী বস্তিতে গিয়ে আকাশ নামের এক ভাসমান বাসিন্দার কাছে ওই স্বর্ণালংকার ৬ হাজার টাকায় বিক্রয় করি। সেখান থেকে মিরপুর-১১নং সোসাইটি মার্কেটে গিয়ে ৫শ’ টাকায় একটি কালো ট্রাভেল ব্যাগ ও একটি ছোট তালা কিনে সাড়ে ১১টায় বাসায় ফিরে আসি।

রান্নাঘর থেকে চটের বস্তা নিয়ে মরদেহ ভরে সেটি ট্রাভেল ব্যাগে ভর্তি করি এবং তালা লাগাই। দুপুর দেড়টার দিকে ব্যাগসহ বাসার নিচে নামি। তখন আমার চাচা রোকন খান ও দারোয়ান ছারোয়ার হোসেন আমাকে দেখে ফেলে এবং জিজ্ঞাসা করেন কোথায় যাস? তোর ব্যাগের ভিতর কি? আমি উত্তরে বলি ব্যাগের ভিতরে জিন্সের প্যান্ট আছে, পার্টির কাছে বিক্রি করিতে যাই। তখন হাতে থাকা তিনটি জিন্সের প্যান্ট দেখাই।

তারপর মরদেহের ব্যাগসহ রিকশাযোগে ইসিবি চত্বর, সেখান থেকে ৩২০ টাকা ভাড়ায় সিএনজিযোগে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের শ্রমিক লীগ অফিসের পূর্ব পাশের গেইটে নামি। সিএনজি থেকে নামতে গিয়ে ব্যাগের চেইন ছিড়ে যায় এবং আখির মৃতদেহে জড়ানো কাথার অংশ বের হয়। আমি ধরা পড়ার ভয়ে ভীত হয়ে পড়ি। তখন পাশের ফলের দোকানদারকে বলি ভাই ব্যাগটি একটু দেখেন, আমার ব্যাগটি ছিড়ে গেছে, আমি একটি ব্যাগ কিনে নিয়ে আসি। তখন দোকানদার বলে ব্যাগটি চাপিয়ে রাখেন। ব্যাগটি রাখিয়া আমি পালিয়ে মিরপুরগামী পরিস্থান বাসে কালশী মোড়ে আসি এবং সেখান থেকে পুনরায় আবার মিরপুর-১১নং সোসাইটি মার্কেট থেকে আগের মত হুবহু একটি ট্রাভেল ব্যাগ কিনে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাসয় আসি।

পুলিশ ও পরিবারের কেউ যাতে আমাকে সন্দেহ না করে সে জন্যই খুব সাবধানে ও সাধারণ আচরণ করেছি।’’

 

 

এসজেএ/এমএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৮ বিজিপি সদস্যকে
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৮ বিজিপি সদস্যকে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম