X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার দুই সিটিতে ‘কাল্পনিক ওয়ার্ডে’ যুবলীগের কমিটি

আমানুর রহমান রনি
১১ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:৫৯আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:০৫

‘কাল্পনিক ওয়ার্ডে’ যুবলীগের কমিটি ১০০ নম্বর ওয়ার্ড বলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কোনও ওয়ার্ড নেই। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনেও এমন কোনও ওয়ার্ড ছিল না। তবে ঢাকার এই ১০০ নম্বর ওয়ার্ডটির অস্তিত্ব আছে ঢাকা মহানগর যুবলীগের কাছে। ‘কাল্পনিক’ এই ওয়ার্ডে রয়েছে তাদের সাংগঠনিক কমিটিও। রয়েছে বড় বড় বিলবোর্ডও। অথচ এলাকাটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বর্তমান ৩০ নম্বর প্রশাসনিক ওয়ার্ড এবং অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড ছিল এটি। ৩০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় অনেকেই বিলবোর্ডে ‘১০০ নম্বর ওয়ার্ড’ দেখে হচকচিত হয়ে যায়।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এরকম ১১/১২টি ‘কাল্পনিক’ ওয়ার্ড তৈরি করেছে ঢাকা মহানগর যুবলীগ। এসব ওয়ার্ড অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনেরও কখনও ছিল না। তবে যুবলীগের নেতারা বলেছেন, ‘অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে এসব ওয়ার্ড প্রস্তাবিত ছিল। তবে ওয়ার্ড হিসেবে ঘোষণা বা স্বীকৃতি হওয়ার আগেই ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্ত হয়ে যায়। তখন থেকেই যুবলীগ প্রস্তাবিত এসব ওয়ার্ডে কমিটি দিয়ে আসছে। এখনও সেভাবে চলছে। ঢাকা উত্তরে এরকম ৮টি ওয়ার্ড এবং দক্ষিণে ৪/৫টি ওয়ার্ড আছে।’     

২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) বিভক্ত হয়। জাতীয় সংসদে আইন করে আগের সিটি করপোরেশন বিলুপ্ত করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) করা হয়। তখন ঢাকা শহর ৯২টি প্রশাসনিক ওয়ার্ডে বিভক্ত ছিল। এছাড়াও নারীদের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশনে ৩০টি সংরক্ষিত কমিশনার পদ ছিল। বিভক্ত হওয়ার পর ২০১৬ সালে দুই সিটি করপোরেশনেই ওয়ার্ড বেড়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৮ জুন মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে দুই সিটিতে নতুন করে ৮টি করে মোট ১৬টি ইউনিয়ন যুক্ত করে। ফলে বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫টিতে। আর উত্তর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৪টি। এ দুই সিটি করপোরেশনের কোনোটিতেই ওয়ার্ডের নম্বর ৮০, ৮৫, ৮৮, ৯০, ৯২, ৯৮, ৯৯ বা ১০০ নেই।

যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের এলাকা আদাবর থানা। ডিএনসিসি’র এটি ৩০ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে যুবলীগের কমিটি আছে। সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক এই ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি শেখ সিদ্দিক এবং সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ আহম্মেদ। এই একই ওয়ার্ডে আবার যুবলীগ ১০০ নম্বর ওয়ার্ড হিসেবে দেখিয়ে একটি কমিটি দিয়েছে। এই কমিটির সভাপতি শাহরুখ জাহান পাপ্পু এবং সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন। ১০০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের রয়েছে আলাদা কার্যালয়ও। সেটির সামনে বড় বিলবোর্ড। বিলবোর্ডে লেখা: ‘১০০ নং ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যালয়, আদাবর থানা, ঢাকা মহানগর উত্তর।’ ‘কাল্পনিক ওয়ার্ডে’ যুবলীগের কমিটি

সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে হঠাৎ ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের বিলবোর্ড দেখে অনেকেই বুঝতে পারেন না, আসলে তারা কত নম্বর ওয়ার্ডে আছেন।

একইভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডটি অবিভক্ত ঢাকারও ৫ নম্বর ওয়ার্ড ছিল। মিরপুরে ধীরে ধীরে মানুষের বসবাস বেড়েছে।  ফলে এলাকাটিও বিস্তৃতি পেয়েছে। এই ওয়ার্ডের মধ্যেই যুবলীগ ৯২ নম্বর ওয়ার্ড হিসেবে আরও একটি ওয়ার্ড চালু করেছে। সেখানে দেওয়া আছে কমিটি। সিটি করপোরেশনের স্বীকৃত ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যেই ৯২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের এরকম ৭/৮টি ওয়ার্ড রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কোনও ধারাবাহিকতা নেই। কোথাও ১০০, কোথাও ৯২— এরকম ওয়ার্ডের মধ্যে ওয়ার্ড ঘোষণা করে কমিটি চালু রেখেছে।

একই চিত্র দেখা গেছে ডিএনসিসি’র ২২ নম্বর ওয়ার্ডে।  সেখানে আছেও যুবলীগের কমিটি। এই ওয়ার্ডের মধ্যে তারা ‘৯৮ নম্বর ওয়ার্ড’ ঘোষণা করে সেখানে আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছে।

ঢাকা মহানগর যুবলীগের উত্তরের উপদফতর সম্পাদক এইচএম কামরুজ্জামান কামরুল। ঢাকা মহানগরে এভাবে ওয়ার্ডের ভেতরে ওয়ার্ড ঘোষণা করে যুবলীগের কমিটি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যখন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন ছিল, তখন এগুলো ওয়ার্ড হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে এগুলো আর হয়নি। তবে আমাদের সাংগঠনিক ওয়ার্ড রয়ে গেছে কয়েকটি। ঢাকা মহানগর উত্তরে আমাদের ৭/৮টি এমন ওয়ার্ড রয়েছে।’

একই এলাকা একই বাসিন্দা, এর মধ্যে দুই ওয়ার্ড পরিচয় দিয়ে কমিটি দেওয়ায় কোনও ঝামেলা হয় কিনা? জানতে চাইলে তিনি  বলেন, ‘না, কমিটি নিয়ে কোনও ঝামেলা হয় না। একই এলাকা হলেও নম্বর আলাদা হওয়ায় কমিটি আলাদা পরিচিতি বহন করে।’

বিচ্ছিন্নভাবে এভাবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যেই যুবলীগের ওয়ার্ড রয়েছে। এগুলোর সিটি করপোরেশনের কোনও বৈধতা নেই। অথচ এসব কমিটির নেতা-কর্মীরা নিজেদের সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডের নেতা বা কর্মী হিসেবে পরিচয় দেয়।

ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি শাহরুখ জাহান পাপ্পু নিজেকে সিটি করপোরেশন ওয়ার্ডের সভাপতি বলেই পরিচয় দিয়ে থাকেন।

তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের মধ্যে যেহেতু, তাই এটি সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড।’ 

 

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়