X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

এফ আর টাওয়ারের অবৈধ অংশের মালিক বিএনপি নেতা তাসভির

শাহেদ শফিক
২৯ মার্চ ২০১৯, ১৯:২০আপডেট : ৩০ মার্চ ২০১৯, ১৭:২১
image

তাসভির উল ইসলাম নকশা ব্যত্যয় করে নির্মিত রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারের অবৈধ ফ্লোরগুলোর মালিক কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাসভির উল ইসলাম। পাশাপাশি তিনি কাশেম ড্রাইসেলস কোম্পানি লিমিডেট নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী কর্মকর্তা। ২০০১-২০০৬ সালের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি ওই ১৮ তলা ভবনটিকে ২৩ তলায় উন্নীত করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছে। 

রাজউক সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভবনটির ভূমি মালিক ইঞ্জিনিয়ার ফারুক ও রূপায়ন গ্রুপ যৌথভাবে নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন করে। তখন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদন দেয়। পরে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর ভবনটিকে ২৩ তলা পর্যন্ত বর্ধিত করে নির্মাণ করা হয়। ডেভেলপার কোম্পানি ভবনটির ২০ ও ২১তম তলাটি জাতীয় পার্টির প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য মাইদুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে। মাইদুল ইসলামের কাছ থেকে ফ্লোর দুটি কিনে নেন কাশেম ড্রাইসেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএনপি নেতা তাসভীর উল ইসলাম। এরপর তিনি নকশা পরিবর্তন করে ছাদের ওপর আরও দুটি ফ্লোর নির্মাণ করেন।

রাজউক সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে তৎকালীন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসের সঙ্গে তাসভিরের ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেই সুবাদে ১৮ তলার অনুমোদন নিয়ে ২৩ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করলেও রাজউক কোনও বাধা দেয়নি।

বিষয়টি সম্পর্কে কথা বলার জন্য তাসভির উল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও উত্তর দেননি। তার একজন ব্যক্তিগত সহকারী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিনি ২০ ও ২১তম ফ্লোরটি কিনে নিয়েছেন। এখানে তার কোম্পানির অফিসও রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রাজউক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এফ আর টাওয়ারের ফাইল দেখেছি। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর এই ভবনটির নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়। তাতে ১৮ তলা ভবন হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন দেখছি ভবনটি ২৩ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনটি নির্মাণের সময় নকশার আরও অনেক বিচ্যুতি ঘটানো হয়েছে। এই নির্মাণকাজের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের খোঁজা হচ্ছে।’

আবদুর রহমান আরও বলেন, ‘ভবন মালিক ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আমাদের কাছে আরও একটি নকশা পেশ করেন। আমরা খবর নিয়ে দেখি, রাজউকে যে নকশা সংরক্ষিত আছে তার সঙ্গে সেটির মিল নেই। পরে সেই ঘটনায় ২০০৭ সালের দিকে তদন্ত করে রাজউক। তদন্তে দেখা গেছে, ভবনটি মূল নকশার ব্যত্যয় ও বিচ্যুতি ঘটিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।’

এদিকে বৃহস্পতিবার আগুনের ঘটনার আগে এফ আর টাওয়ারের জমির মালিক ভবনের নিচতলায় তাসভির উল ইসলামকে অবৈধ দখলদার হিসেবে উল্লেখ করে একটি নোটিশ লাগান। ওই নোটিশে তিনি ভবনে নকশতার আশঙ্কা করেছিলেন। পাশাপাশি, এতে তিনি ভবনটি নির্মাণে নানা অনিয়মের তথ্য তুলে ধরেন।

ওই নোটিশে তিনি বলেন, ‘রাজউক থেকে সম্প্রতি পাঠানো চিঠি অনুযায়ী, রাজউকের নির্মাণসংক্রান্ত বিধিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে এফ আর টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এর ওপর অবৈধভাবে অধিক উচ্চতায় ভবন নির্মাণ করার ফলে রাজউক সম্প্রতি একটি নির্দেশনা দেয়। অবিলম্বে অবৈধ উচ্চতা সংশ্লিষ্ট অংশটি অপসারণ করে ভবনটিকে বৈধ উচ্চতায় ফিরিয়ে আনার জন্য রাজউকের নোটিশে নির্দেশনা দেওয়া হয়।’

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘রাজউকের নির্দেশনা মোতাবেক উল্লিখিত অবৈধভাবে নির্মিত উচ্চতা অপসারণ কার্যক্রমের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অতীব দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, আইনগত দখলদার এবং প্রকৃত ল্যান্ড ডোনারের অনুমতি ছাড়া ছাদে অবৈধ স্থাপনা (কথিত ব্যারাক) নির্মাণ করা হয়েছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘রাজউকের চিঠির ব্যত্যয় ঘটিয়ে জনৈক তাসভির উল ইসলাম এফ আর টাওয়ারের ২১, ২২ ও ২৩ তলাসহ অবৈধভাবে দখল করে আছেন। এজন্য তিনি একজন অবৈধ দখলদারও বটে।’

বিজ্ঞপ্তিতে রাজউকের নির্দেশনা অনুসারে ভবনের উচ্চতাসংশ্লিষ্ট অবৈধ স্থাপনা অপসারণের কাজে যাতে কোনও ধরনের বিঘ্ন না ঘটে,  সেজন্য ছাদের অবৈধ স্থাপনাসহ ভবনের ২১, ২২ ও ২৩ তলার অবৈধ দখলদার তাসভির উল ইসলামকে তার সব আসবাবপত্র ও মালামাল আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খালি করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে শঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, ‘উপরোল্লিখিত সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যেকোনও পদক্ষেপ থেকে কোনওরূপ বাধা-বিপত্তি বা কোনও প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলে, অথবা অত্র ভবনের অন্য কোনও অংশের ক্ষতিসাধন বা কোনওরূপ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধ্বংস করা হলে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে।’

রাজউক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভবনটি নির্মাণে ডেভেলপার কোম্পানি ও ভূমি মালিকের মধ্যে বিরোধ ছিল। ডেভেলপার কোম্পানি মালিকের কথা না মেনে অবৈধভাবে বাকি ফ্লোরগুলো নির্মাণ করে। এর মধ্যে কাশেম ড্রাইসেলস লিমিডেট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাসভির উল ইসলাম কোম্পানির নামে ফ্লোরগুলো দখল করে রেখেছেন। একাধিকবার তাদের নোটিশ করেও কোনও প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে ২১-তলা বনানীর এফ আর টাওয়ারের ৯ তলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট আগুন নেভানো ও হতাহতদের উদ্ধারের কাজ করে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, রেড ক্রিসেন্টসহ ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত অনেক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ৭টায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- 


এফআর টাওয়ারের অনুমোদন দেওয়া রাজউক চেয়ারম্যানকে খুঁজছেন পূর্তমন্ত্রী

এফআর টাওয়ারে আগুন: ২৫টি লাশ উদ্ধার, ২৪টি হস্তান্তর

আগেও আগুন লেগেছিল এফ আর টাওয়ারে

রাজধানীর আট হাসপাতালে ভর্তি ৫৯ 

 

 

/এসএস/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
রাব্বির ব্যাটে শাইনপুকুরকে হারালো শেখ জামাল
রাব্বির ব্যাটে শাইনপুকুরকে হারালো শেখ জামাল
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা