বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি মনে করেন, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) যেসব কাজ করছে, তার চেয়ে আরও অনেক বেশি কাজ করার সামর্থ্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। তিনি বলেন, ‘টিসিবি’র কর্মপরিসর বাড়াতে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে।’
রবিবার (২৪ মার্চ) নিজ মন্ত্রণালয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলে বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘তার পূর্বসূরিরা যেসব কাজ করেছেন, তিনি সেগুলো এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। যেমন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত বন্ধুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক, উদার বাণিজ্যনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বাড়ানো, রফতানি বাড়ানো ইত্যাদিতে সফলতা বয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার আড়াই মাসেই বেশ কিছু পদক্ষেপও তিনি নিয়েছেন। খুব শিগগির চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি হতে যাচ্ছে। জাপানের সঙ্গে নতুন নতুন ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন। রাশিয়া থেকে প্রতিনিধিদল আসছে। সৌদি আরব থেকে ইতোমধ্যে দুই মন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল এসেছে। ব্যবসার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
১৯৬৬ সালে রংপুর কলেজে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি আওয়ামী লীগের এই অর্থ বিষয়ক সম্পাদকের। কলেজজীবন শেষে চলে আসেন ঢাকায়। তিতুমির কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এলাকায় ফিরে গিয়ে বাবার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে ঢাকার তেজগাঁও উত্তরাঞ্চলের ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। রাজনীতির বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ১৯৯৩ সালে এসে বৃহত্তর গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে হন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য। এরপরের সম্মেলনে পান অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব।
টিপু মুনশি বলেন, ‘মন্ত্রী হিসেবে তিনি সরকারের বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে চান। যে ১০০টি রফতানি প্রক্রিয়া জোন তৈরির কাজ চলছে তা সম্পন্ন করতে চান, বাজারকে সহজলভ্য এবং মানুষের নাগালে রাখতে চান। রফতানির লক্ষ্য পূরণ করতে চান, নতুন নতুন পণ্য রফতানির ওপর জোর দেবেন। বিনিয়োগ বাড়াতে পদক্ষেপ নেবেন।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আসছে রমজানে যাতে জিনিসপত্রের দাম যাতে না বাড়ে, সেদিকে সতর্ক আছে সরকার। বাজার মনিটরিং শুরু হয়েছে, পর্যায়ক্রমে আরও বাড়ানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে কী পরিমাণ পণ্য মজুদ আছে এবং আমদানির প্রয়োজন হবে কিনা, এসব নিয়ে তিনি শিগগিরই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি না দেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশটির দেওয়া সব শতই পূরণ করা হয়েছে। সর্বশেষ শ্রম আইনও যুগোপযোগী করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জিএসপি ফেরত পাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে রাজনৈতিক কারণে যদি না দেওয়া হয়, সেখানে কিছু বলার থাকবে না। তারপরও জিএসপি ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।’
পেশাগত জীবনে রাজনীতির পাশাপাশি টিপু মুনশি একজন সফল ব্যবসায়ীও। তৈরি পোশাক শিল্প রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমই-এর সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
দেশের রফতানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সাল নাগাদ রফতানি ৬০ বিলিয়ন ডলারে নিতে হলে নতুন নতুন বাজার এবং নতুন নতুন পণ্য খুঁজতে হবে।’
টিপু মুনশি বলেন, ‘এ লক্ষ্যে মূল অস্ত্র হবে গার্মেন্টস শিল্প। আর সে জন্য চীন থেকে গার্মেন্টস শিল্প সরে যাওয়ায় যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। তাহলে এই এক খাতেই ১০ বিলিয়ন ডলার রফতানি বাড়ানো সম্ভব।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন পণ্য ও বাজারের জন্য ইতোমধ্যে চারদিকে নজর দেওয়া হয়েছে। জাপান নতুন একটি বাজার হতে পারে। এ ছাড়া পণ্যের ক্ষেত্রে চামড়া ওষুধের রফতানি বাড়ানো যেতে পারে।’
রফতানি বাড়ানো সম্পর্কিত আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশের বাজার বাড়ছে। আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সরকার তা নিয়ে কাজ করবে।’
বালু রফতানিসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং বালু রফতানির ক্ষেত্রে আগ্রহী। এ বিষয়ে কয়েক বছর আগেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। একটা জায়গায় গিয়ে তা আটকে আছে। এখন আবার নতুন করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হবে।’
সীমান্ত বাজার (বর্ডার হাট) নিয়ে করা আরেক প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, ‘এরইমধ্যে যেসব বাজার চালু রয়েছে, সেগুলো যেসব জায়গায় স্থাপিত, সেসব স্থানে ভারতীয় জনবসতি অনেক কম। নতুন বাজার স্থাপনের ক্ষেত্রে যাতে দুই দিকেই সমান বসতি থাকে, সে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘বর্ডার হাট শুধু বাজার নয়, এর মাধ্যমে দুই দেশের সম্প্রীতি আরও বেড়েছে।;
টিপু মুনশি বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্ব নেওয়ার পর এরইমধ্যে বাজার বাড়ানো নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে ঢাকার ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও।’