X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাংসের বাজারে নতুন প্রতারণা: ব্যানারে এক ভেতরে আরেক

শফিকুল ইসলাম
১২ মে ২০১৯, ২১:৫৯আপডেট : ১৩ মে ২০১৯, ১৫:৪৮

হাতিরপুলের মাংসের দোকানে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত দাম ঝোলানো থাকলেও সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না গরুর মাংস। (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

রমজান মাসে রাজধানীর মাংসের দোকানগুলোতে শুরু হয়েছে নতুন প্রতারণা। রোজার আগে দুই সিটি করপোরেশন থেকে মাংসের দাম ৫২৫ টাকা নির্ধারণ করে হয়েছে। এই দরের ব্যানার মাংসের দোকানগুলোতে ঝুলছে ঠিকই কিন্তু, সেই দামে মাংস বিক্রি করছেন না কোনও মাংস ব্যবসায়ী। এসব দোকানে মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৬০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজি দরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোজার ছয় দিন শেষে কেবল কিছু সুপার শপেই মিলছে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত দরে মাংস।

রবিবার (১২ মে) রাজধানীর শান্তিনগর, শাজাহানপুর, খিলগাঁও, গোরান, মিরপুর, শ্যামলী, কোনাপাড়া ও সেগুনবাগিচার একাধিক দোকান ঘুরে এমন ঘটনা চোখে পড়েছে। 

কোনাপাড়া বাজারের মাংস ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেনের দোকানে ঢুকে দেখা গেছে, দোকানের গায়ে সিটি করপোরেশনের দর (দেশি গরুর মাংস সর্বোচ্চ প্রতিকেজি ৫২৫ টাকা, আদেশক্রমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন) সম্বলিত স্লিপ লাগানো রয়েছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৫৬০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজি দরে। এর কারণ জানতে চাইলে সোহরাব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘সিটি করপোরেশনের দরে গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব নয়। কারণ, আমাদের প্রতিকেজি মাংসের খরচই পড়ে ৫৩০ থেকে ৫৪০ টাকার ওপরে। এ অবস্থায় আমরা ৫২৫ টাকা দরে কীভাবে বিক্রি করবো।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘প্রশাসনের অতিরিক্ত বাড়াবাড়িতে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন। সারাদিন ব্যবসা করে লাভ হয় না ৫০০ টাকা। সেখানে যদি মোবাইল কোর্টে জরিমানা দিতে হয় ৫০ হাজার টাকা, তাহলে কে ব্যবসা করবে বলেন?’

একইচিত্র দেখা গেছে শান্তিনগর বাজারে। সেখানেও ঝোলানো আছে সিটি করপোরেশনের দর। সেখানকার মাংস ব্যবসায়ী এম এ রশিদ বলেছেন একই কথা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘দাম দিয়ে গরু কিনি। বিক্রি করে সেই দাম যদি না ওঠে তাহলে আমরা কি চুরি করে খাবো? নাকি ডাকাতি করবো? সব সময় আইন দিয়ে দেশ চলে না। বাজারের বাস্তবতা ভিন্ন।’

শাজাহানপুরের ‘হালাল মিট’ নামের দোকানের মাংস বিক্রেতা আবদুল কাদের বলেছেন, ‘গাবতলী বাজারে চলছে সরকার দলীয় ইজারাদারদের মাস্তানি। সেই মাস্তানির খেসারত দেই আমরা। ১০০ টাকার খাজনা দেই ৫ হাজার টাকা। দাম কমিয়ে বিক্রি করবো কিভাবে?’

মিরপুর শেওড়াপাড়ার মাংস ব্যবসায়ী কুদ্দুস মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন যে দর ঠিক করে দিয়েছে, সেই দরে ব্যবসা চলবে না। সিটি করপোরেশন থেকে যদি ৫২৫ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করতে বাধ্য করে তাহলে আমাদের ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। কারণ, আমরা তো জরিমানা দিতে পারবো না।’

ব্যবসায়ী কুদ্দুস মিয়া তার দোকানের এক কোণায় বয়লার মুরগির খাঁচা রেখেছেন জানিয়ে বলেন, ‘গরুর মাংসের দোকানে এখন বয়লার মুরগির খাঁচা রাখছি। সুবিধা না হলে, বেশি ঝামেলা হলে বয়লার বেচুম।’

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, সংস্থার পক্ষ থেকে বাজারে মনিটরিং চলছে। কোথাও অনিয়ম হলে জরিমানাও করা হচ্ছে। ৫২৫ টাকা সব দিক বিবেচনায় নিয়ে এবং মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেই ঠিক করা হয়েছে। এখন চিল্লাচিল্লি করলে চলবে না।    

তবে রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনও পর্যন্ত সিটি করপোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত দরের ব্যানার অনেক দোকানেই লাগানো হয়নি। তবে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম দাবি করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার দোকানগুলোয় ব্যানার লাগানো হয়েছে।

আবার তিনিও বলেছেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার দোকানে নির্ধারিত মূল্যের ব্যানার লাগানো সম্ভব হয়নি। তারা আমাদের সহায়তা করছে না।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  নির্ধারিত মাংসের দোকানগুলোতে সিটি করপোরেশনের ব্যানার বা স্লিপ ঝোলানো থাকলেও রোজার ৬ দিনই গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৫৬০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজি দরে। সুযোগ বুঝে অনেকে ৬০০ টাকা কেজি দরেও গরুর মাংস বিক্রি করেছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের দামে মাংস কিনতে চাইলে বিক্রি সম্ভব নয় বলে বিপুল সংখ্যক ক্রেতার সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয়েছে তাদের। এরপর ক্রেতাদের কেউ কেউ ফিরে গেছেন, কেউ কেউ দোকানদারের কাছে জিম্মি হয়ে তাদের দামেই মাংস কিনতে বাধ্য হয়েছেন।

তবে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি না করেও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের মাংস ব্যবসায়ী সমিতিগুলো দাবি করেছে রাজধানীর অনেক স্থানেই ৫২৫ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি হয়েছে।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের সমিতির অনেক সদস্যই ৫২৫ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করেছে। তবে সবাই তা করেননি।  

শবে বরাতের পর থেকেই অস্থির রয়েছে মাংসের বাজার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানকে কেন্দ্র করে সবাই বেশি পরিমাণে মাছ, মাংস ও নিত্যপণ্য কিনে ঘরে মজুত করছে। তাই বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের সরবরাহ অনেকটা ঝুঁকিতে রয়েছে। ১০ রমজানের পর বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

মাংস ব্যবসায়ী সমিতির নেতা রবিউল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে আরও জানিয়েছেন, রাজধানীর সব মাংস ব্যবসায়ী সিটি করপোরেশন নির্ধারিত দরে গরুর মাংস বিক্রি করেননি। অনেক মাংস ব্যবসায়ী সরকার নির্ধারিত দরের বেশি দামে গরুর মাংস বিক্রি করেছেন। আমরাও আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে রাজধানীর সব মাংসের দোকানে নির্ধারিত দামের ব্যানার লাগাতে পারিনি। তার অভিযোগ, এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ সহায়তা করলেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ আদৌ সহায়তা করছে না।

রবিউল আলম বলেন, আমরা এ বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটর করছি। আমরা আমাদের সমিতির ব্যবসায়ীদের বলেছি, আপনারা সরকার নির্ধারিত দরে গরুর মাংস বিক্রি করুন। যেকোনও সময় হয়তো ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামবে। তখন যদি কোনও ব্যবসায়ী সরকার নির্ধারিত দরে মাংস বিক্রি না করার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে কিছু বলার থাকবে না।

তিনি আবারও সরকারের উদ্দেশে বলেন, একদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করুন। অপরদিকে গাবতলী পশুর হাটের ইজারাদারের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করুন।

 

/এসআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইরাকি ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের
ইরাকি ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাহসী পদক্ষেপ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাহসী পদক্ষেপ
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
ডাগআউট থেকে রিভিউ নিতে বলায় ডেভিড, পোলার্ডের শাস্তি
ডাগআউট থেকে রিভিউ নিতে বলায় ডেভিড, পোলার্ডের শাস্তি
সর্বাধিক পঠিত
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল