X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুলিদের কাছে জিম্মি যাত্রীরা

শফিকুল ইসলাম
০৪ জুলাই ২০১৯, ১০:০০আপডেট : ০৪ জুলাই ২০১৯, ১৩:০২

সরদঘাটের নৈরাজ্য

সদরঘাটের নৈরাজ্য বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরও এই পথের যাত্রীরা রেহাই পাচ্ছেন না। সম্প্রতি এই নৈরাজ্য চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে ‘কুলি’ বা ‘পোর্টার’দের কাছে প্রতিনিয়তই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে এই পথের যাত্রীদের। তাদের অভিযোগ, কুলি বা পোর্টারদের সঙ্গে যাত্রীদের লাগেজ-ব্যাগ, বস্তা ও মালামাল নিয়ে প্রায়ই টানাটানির ঘটনা ঘটছে। ১০ টাকার পারিশ্রমিকের জায়গায় কুলি বা পোর্টাররা যাত্রীদের কাছ থেকে ১০০ থেকে শুরু  করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে প্রায় বাক-বিতণ্ডা থেকে শুরু করে হাতাহাতি পর্যন্তও গড়ায়। সব মিলিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের যাত্রীদের কাছে সদরঘাট এখন একটি আতঙ্কের নাম। তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় কুলি-পোর্টাররা। আর কর্তৃপক্ষ বলছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যাত্রীদের মালামাল বহনে নির্ধারিত রেটের চেয়ে অনেক বেশি টাকা নেওয়া অভিযোগ আছে কুলিদের বিরুদ্ধে সরজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, গত ২১ জুন (শুক্রবার) ভোর সোয়া ৫টা। বরিশাল থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে ‘এমভি সুন্দরবন’ নামে লঞ্চটি। লঞ্চটি সদরঘাটের ৪নং পন্টুনে নোঙর করার আগেই লাফিয়ে লঞ্চে উঠে যান ৪০ থেকে ৫০ জন কুলি। তারা সরকারি খাতায় যারা ‘পোর্টার’ নামে পরিচিত। হুড়মুড় করে উঠে যান লঞ্চের কেবিন ব্লকে। খুঁজে বেড়ান যাত্রীর লাগেজ। চোখে পড়া মাত্রই এক-এক জন কুলি এক-একটি লাগেজ ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। লাগেজের মালিক লঞ্চের যাত্রী যতই বলছেন, কুলি লাগবে না, আমরা নিজেরাই নামাতে পারবো, কিন্তু কে শোনে কার কথা? কুলিদের বক্তব্য, ‘আপনার লাগেজ আমরাই নামিয়ে দেবো। অনেক টাকা ব্যয় করে এ কাজ নিয়েছি।’ অনেকে স্ত্রী-সন্তানের সামনে কুলিদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডয় জড়ালে নাজেহাল হওয়ার ভয়ে কুলিদের আবদার মেনে নেন। মেনে নেওয়াটাই শেষ নয়। মাত্র ১০ টাকার মজুরির জায়গায় যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে ১০০টাকা। কখনও কখনও এর পরিমাণ ৫০০ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। আর যারা বাক-বিতণ্ডায় জড়ান, তাদের নাজেহাল হতে হচ্ছে। সামনে দিয়ে আনসারের সদরস্যরা হেঁটে যাচ্ছেন, লঞ্চের লোকজন হেঁটে যাচ্ছেন, কেউ কিছু বলছেন না। উল্টো যাত্রী ও কুলিদের মধ্যতার বাক-বিতণ্ডা দেখার জন্য তারা উৎসুক দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। কোনও ধরনের সহায়তা না পেয়ে সেই সব কুলির আবদার মেনে নেন নদীপথের এই যাত্রীরা।

সদরঘাটে নিত্যদিনের চিত্র

জানতে চাইলে সুন্দরবন লঞ্চের যাত্রী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আকবর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুনেছি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউএ) ঘাটের ইজারা প্রথা বাতিল করেছে। তাহলে ঘাটে কুলিদের এই নৈরাজ্য কেন? আমার লাগেজ আমি নিয়ে যাবো, সিস্টেম যদি এমন হয়, তাহলে কুলিরা আমাদের এভাবে জিম্মি করার সাহস পায় কোথায়? এছাড়া, লাগেজ তথা পণ্য বহনের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক মজুরি হার নির্ধারণ করে দেওয়া আছে, সেই মজুরি হারের অতিরিক্ত মজুরি দাবি করার সাহস পায় কোথায়?’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘‘আমি ওই দায়িত্বে নেই। তারপরও বলবো, যাত্রী চাইলেই কেবল তাদের লাগেজ ‘পোর্টাররা’ লাগেজ সরকার নির্ধারিত হারের মজুরির বিনিময়ে বহন করতে পারবেন। অন্যথায় নয়। এ ক্ষেত্রে জোর করার তো প্রশ্নই ওঠে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনের জন্য বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ কুলি নিয়োগ দিয়েছে। তারা যাত্রীর লাগেজ বহন করতে পারবেন না। অন্যদিকে, যাত্রীর লাগেজ বহনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ‘পোর্টার’। তারা যাত্রী চাইলেই কেবল তার লাগেজ বহন করতে পারবেন।’’

হলুদ শার্ট পরা এই কুলিদের কাছে যাত্রীরা অনেকটাই অসহায় উল্লেখ্য, সদরঘাটে কুলির সংখ্যা আনুমানিক ২৯০ জন। আর নিয়োগপ্রাপ্ত পোর্টারের সংখ্যা ১৭০ জন। এর বাইরেও কুলি ও পোর্টার রয়েছেন। বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলকে খুশি করে তারা নিয়োগ পেয়েছেন। তবে, তাদের কোনও পরিচিতিমূলক অফিসিয়াল নম্বর নেই।

কুলিদের এই নৈরাজ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সদরঘাটের কুলি আশরাফ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সব সময় বাণিজ্যিক পণ্য থাকে না। বিশেষ করে সকালের দিকে। লঞ্চ থেকে যাত্রীরা পুরোপুরি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত ডেক থেকে বাণিজ্যিক পণ্য নামানোর সুযোগ থাকে না। লঞ্চ খালি হতে হতে আমরা ২/১টি ট্রিপ মেরে বাড়তি কিছু আয় করি। তাই সকালের দিকে কিছুটা সময় যাত্রীর লাগেজ বহন করি। সেক্ষেত্রে আমরা যাত্রীদের জোর করি, এমন অভিযোগ সঠিক নয়। যাত্রীরা তাদের লাগেজ বহন করার জন্য অনুমতি দিলেই কেবল তা বহন করি।’ 

টার্মিনাল ভবনের সামনে রাখা বাস, যাত্রী ও মালামাল নিয়ে টানাটানি হয় এখানেও অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধেও এক প্রশ্নের জবাবে আশরাফ আলী বলেন, ‘দরদাম করেই লাগেজ তুলি। এক্ষেত্রে যাত্রীদের জিম্মি করার প্রশ্নই আসে না। নিয়ম মেনে কাজ না করলে আমাদের নিয়োগ বাতিল করবে কর্তৃপক্ষ।’ এ সময় তিনি তার কোমরে বাঁধা স্টিলের একটি পাতের ওপর খোদাই করা নম্বর দেখাতে চাইলেন। ‘আপনার নম্বর কত’—এমন প্রশ্নের জবাবে নম্বর বলতে পারেননি। এরপর পাতটি দেখতে চাইলে তাতে রাজি হলেন না। চলে গেলেন দ্রুত।

প্রসঙ্গত, সদরঘাটে যাত্রী হয়রানি বন্ধে ইজারা প্রথা বাতিলের নির্দেশনা দিয়ে সরকারের গত মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সদরঘাট থেকে অসংখ্য মানুষকে হয়রানি করে প্রতিবছর ৩ কোটি টাকা ইজারা না নিয়ে ৩ কোটি মানুষকে সেবা দেওয়াই উত্তম।’

সদরঘাটে যাত্রী হয়রানি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় সদরঘাটের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নত হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে যে কোনও ঘটনা ঘটতেই পারে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এখানে অনিয়মের কোনও সুযোগ নেই বলেও তিনি দাবি করেন।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিশ্বসাহিত্যের খবর
বিশ্বসাহিত্যের খবর
দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী
দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী
স্কুল ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের