X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বার্থ বিক্রি করবে, এটা হতে পারে না’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১০ অক্টোবর ২০১৯, ০২:৫৯আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৯, ০৩:০৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক নিয়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বার্থ বিক্রি করবে, এটা হতে পারে না। আমি দেশের স্বার্থের জন্য কাজ করি, দেশ ও জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করি। ভেতরের তাড়না থেকে কাজ করি। দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করি। কাজেই আমি কখনও দেশের ক্ষতি হতে দেবো না, স্বার্থহানি হতে দেবো না।’

বুধবার (৯ অক্টোবর) গণভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশেন অংশগ্রহণ ও ভারত সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার জন্য এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন সরকার প্রধান। এসময় দুই সফরের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযান, বুয়েট ছাত্র আরবার হত্যাসহ সমসাময়িক নানা ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

এক সাংবাদিকের ‘ভারতের সঙ্গে করা চুক্তিগুলোতে বাংলাদেশের স্বার্থ কতটুকু সংরক্ষিত হয়েছে’ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এলপিজি প্রাকৃতিক গ্যাস নয়। এটা আমার দেশে উৎপাদন হয় না। আমরা ত্রিপুরায় যে গ্যাস রফতানি করবো সেটা এলপিজি। আমরা আমদানি করছি বাল্কে। সেই গ্যাসই কিছু ত্রিপুরায় দিচ্ছি।’

খাবার পানি না দেওয়াটা কেমন হবে!

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফেনী নদীটি উৎপত্তিস্থল খাগড়াছড়ি থেকে মাটিরাঙ্গা হয়ে ভারতের সীমান্তবর্তী প্রায় ১১৬ কিলো মিটার চলেছে। নদীটা ফেনীর সোনাগাজী হয়ে সাগরে চলে গেছে। নদীর বড় অংশটাই হচ্ছে বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তে। এটা সীমান্তঘেঁষা নদী। সীমান্তঘেঁষা নদীতে দুইদেশেরই অধিকার থাকে। ভারতের একটা জায়গা সাবরুম, রামগড়ের সঙ্গে। ওখানকার মানুষের খাবার পানির খুব অভাব। তারা আন্ডারগ্রাউণ্ড থেকে পানি তোলে। আর আমার বর্ডারের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে যখন পানি তোলা হয় তখন কিন্তু ইফেক্ট আমার দেশেও হয়। আমার দেশের আন্ডারগ্রাউণ্ডের ভূগর্ভস্থ পানি চলে যায়। সেখান থেকে সামান্য পানি আমরা তাদের দেবো। এখানে যে চুক্তিটা ভারতের সঙ্গে হয়েছে সেটা তাদের খাবার পানির জন্য। ১.৮২ কিউসেক পানি তারা প্রত্যাহার করে নেবে। আমরা যে পানিটুকু তাদের দিচ্ছি, আসলে সেটার পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য। আসলে এত বড় একটা নদী সেখানে যে পরিমাণ পানি আসে সেটা আমরা ব্যবহার করি তারাও ব্যবহার করে। আর এটা নিয়ে হঠাৎ এত চিৎকার কিসের জন্য আমি ঠিক জানিনা। কেউ যদি পানি পান করতে চায়, আমরা যদি তার পানিটা না দেই এটা কেমন হবে। আমাদের তো আরও সীমান্ত নদী আছে সেটাও তো চিন্তা করতে হবে।’

বিএনপি পানি ও সীমানা চুক্তি করেনি কেন?

আওয়ামী লীগ সভাপতি বিএনপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাব ক্ষমতা দখল করে যখন ভারত গিয়েছিলেন, কিংবা খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে ভারত যান, তারা কী গঙ্গা পানি চুক্তি করতে পেরেছিল? যে দল গঙ্গা নদীর মতো বিশাল একটি নদীর পানির হিস্যার কথা বলতেই ভুলে যায়, সেই দল এখন আবার সামান্য ১.৮২ কিউসেক পানির জন্য এতো কথা বলে কোন মুখে!

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা যখন স্থল সীমানা চুক্তি করলেন, এখনো ওই ১৯৭৩-৭৪ সালের পত্রপত্রিকা পড়ে দেখবেন, পঁচাত্তর সালের পত্রিকা পড়ে দেখবেন- দেশ বেচে দিলো, দেশ বেচে দিলো; বেরুবাড়ী চলে গেল, বেরুবাড়ী চলে গেল; এ ধরনের অপপ্রচার করা হয়েছে।’

সরকার প্রধান আরও বলেন, ‘অঙ্গরপোতা-দহগ্রাম আমরা পেলাম। আমাদের সীমান্ত চুক্তিটা জাতির পিতা যে করে গেলেন, এবং করার পরে তিনি পার্লামেন্টে আইন পাশ করলেন। সংবিধান সংশোধন করে আমাদের সীমানাটা ঠিক করা হলো। সেটা নিয়ে কতো সমালোচনা ছিল। আমি ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পরেও শুনেছি- দেশ বেচার চুক্তি, ২৫ বছরের চুক্তি দেশ বেচার চুক্তি। আর এরপর যখন আমি দ্বিতীয়বার সরকারে এসে সীমানা নির্দিষ্ট করলাম, ভারতের পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে আইনটা পাশ হলো, আপনারা নিজেরাই বিবেচনা করে দেখেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে আবার প্রশ্ন যে, যারা এত কথা বলেছিল তারা ক্ষমতায় এসেই সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা করেনি কেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘সমুদ্রসীমা আইন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান করে গেছেন। যখন পৃথিবীতে কোনও আইন ছিল না, জাতিসংঘে কোনও আইন ছিল না, জাতিসংঘ সমুদ্র আইন করে ১৯৮২ সালে। জার্মান ও ডেনমার্কের মধ্যে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়, তখন তারা জাতির পিতার আইনটা ধরেই বিরোধ মীমাংসা করেছিলো। পঁচাত্তরের পরে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা কী করেছিল? নাকে তেল দিয়ে ঘুমুচ্ছিল সব। সমুদ্রসীমার কথা কখনও বলেছে? বলেনি। স্থল সীমানা চুক্তি করেছে? করেনি। তাহলে তারা আবার এতো কথা বলে কী করে? আবার অনেকে মিছিল আন্দোলন করে ফেললো। আমাদের কিছু আল্ট্রা বাম নেতারাও দেখি নেমে পড়েছে। আমার কথা হচ্ছে, তারা যখন বলতেন- বেরুবাড়ী গেল, বেরুবাড়ী গেল, কিন্তু আমাদের সীমনাচুক্তি সম্পন্ন হলো; এখন কী তারা বলবেন- কতটা গেছে আর কতটা পেয়েছি?

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এবং সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও জানান শেখ হাসিনা।

ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হবে না

বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যায় জড়িতদের কোনও ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে কে কোন দল সেটাও দেখা হবে না। তিনি বলেন, ‘অপরাধী অপরাধীই। খুনিরা সর্বোচ্চ শাস্তিই পাবে। এই অপরাধের জন্য যতো বড় শাস্তির বিধান আছে, সেই শাস্তিই তারা পাবে।’

ছাত্র রাজনীতি বন্ধ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, ‘বুয়েট প্রশাসন যদি চায়, তারা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে। তাবে সারা দেশে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সম্ভবনা তিনি নাকোচ করে দেন।’

তিনি বলেন, ‘একটা ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি ওঠাবে যে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ। আমি নিজেই যেহেতু ছাত্র রাজনীতি করে এসেছি। সেখানে আমি ছাত্র রাজনীতি বন্ধ বলবো কেন? আর এই দেশের প্রতিটি সংগ্রামের অগ্রণী ভূমিকা কিন্তু ছাত্ররাই দিয়েছেন। একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ  করে দিতে হবে, এটা তো মিলিটারি ডিক্টেটরদের কথা।’

দেশব্যাপী চলমান শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

জীবনী লিখবেন না

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, নিজের জীবনী লেখার ইচ্ছা নেই তার। যেসব লেখা তিনি লিখেছেন, তার প্রয়াত বন্ধু বেবী মওদুদের প্রেরণায় সেগুলো ছাপা হয়েছে। আর দেশের জন্য যা করেন, সেটা মন থেকে করেন। তাই নিজের জীবনী লেখার কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৩টায় সংবাদ সম্মেলন স্থলে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

 

/এমএইচবি/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
মৌলভীবাজারে ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা মর্মান্তিক: মানবাধিকার কমিশন
মৌলভীবাজারে ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা মর্মান্তিক: মানবাধিকার কমিশন
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
কুমিল্লা মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
কুমিল্লা মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি