X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইসিটি প্রকল্পে ৯৬ কোটি টাকা দুর্নীতির ফের তদন্ত

এস এম আববাস
০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:১২আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:১৬

শিক্ষা মন্ত্রণালয়

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের আগেই আইসিটি ফেজ-২ প্রকল্পে ৯৬ কোটি টাকা দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনা ফের তদন্ত শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে প্রথম দফায় তদন্ত করা হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মতকর্তার চাপে ওই তদন্ত প্রতিবেদনটি ফাইল চাপা পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্প পরিচালককে বাঁচাতেই নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

মাউশি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ নভেম্বর পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্যকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন— উপপরিচালক (কলেজ-২) মো. এনামুল হক হাওলাদার ও সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ-৩) মো. আনোয়ারুল আউয়াল খান।

এরইমধ্যে কমিটি তদন্ত শুরু করেছে। গত ২৫ নভেম্বর প্রকল্প পরিচালক ড. অধ্যাপক আব্দুস সবুর খানের কাছে প্রকল্পের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছেন কমিটির আহ্বায়ক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য। চিঠির বিষয়টি স্বীকার করে ড. ভট্টাচার্য্য  বলেন, ‘তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্প পরিচালকের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথম তদন্ত কমিটি প্রায় চার মাস তদন্তের পর গত নভেম্বরে মাউশির মহাপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে। তবে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়নি। মাত্র আড়াই পাতার একটি ব্রডসিট জবাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।  ‘দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

যদিও প্রথম তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান জানান, ‘সরকারি টাকা কীভাবে খরচ করতে হয়, তা না-জানার কারণে অনিয়ম হয়েছে। প্রকল্প কর্মকর্তা অনভিজ্ঞ। কিন্তু সরকারি বিধিবিধান মানা জরুরি ছিল। প্রকল্প পরিচালক নিয়ম না মেনে সরকারি অর্থ খরচ করেছেন।’

মাউশির একাধিক কর্মকর্তা না প্রকাশ না করে জানান, গত ৭ নভেম্বর প্রথম কমিটির একটি ব্রডসিট জবাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জন্য। প্রকল্প পরিচালককে বাঁচাতে এই তদন্ত প্রতিবেদন চেপে রেখে, শুধু ব্রড সিটে জবাব দেওয়া হয়েছে। আর  বিষয়টি আড়াল করার জন্য নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আইসিটি ফেজ-২ প্রকল্পের ইনহাউজ ট্রেনিং কোর্সে ৯৬ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে মাউশির পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনকে আহ্বায়ক করে প্রথমে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত চলাকালে কমিটির আহ্বায়ককে ওএসডি করা হয়। এরপর তদন্তের মাঝ পথে পরিচালক (মাধ্যমিক) ড. আবদুল মান্নানকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়।

যেসব অভিযোগ

কোটেশন ছাড়া প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল এবং সার্টিফিকেট ছাপানো, প্রশিক্ষণ উপকরণ ও পরিবহন ব্যয় সরবরাহের ক্ষেত্রে পিপিআর (পাবলিক-প্রকিওরমেন্ট-বিধিমালা) অনুসরণ করা হয়নি। প্রকল্প থেকে সরবরাহ করা উপকরণের বিল প্রশিক্ষণ ভেন্যু থেকে পরিশোধ করা হয়েছে। প্রকল্পের ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) ব্যত্যয় ঘটিয়ে পরিচালক পরিকল্পনা ও উন্নয়নের অনুমোদন ছাড়াই মহাপরিচলক অনুমোদন দিয়েছেন।

প্রকল্পের পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন খাতের টাকা প্রশিক্ষণ খাতে একিভূত করে একত্রে ছাড় করা হয়েছে পিপিআর অনুসরণ না করেই। প্রশিক্ষণ খাতে অগ্রিম অর্থ উত্তোলনে প্রকল্প পরিচালকের ক্ষমতা ৩০ লাখ টাকা, অথচ ৯৬ কোটি টাকা অগ্রিম তোলার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

বেসিক টিচার ট্রনিং (বিটিটি) ও প্রতিষ্ঠান প্রধান ট্রেনিংয়ের (এইচআইটি) একহাজার ১৮৯টি ব্যাচের ভেন্যু চার্জ, রুম চার্জ, ইন্টারনেট বিল ও বিবিধ খাতের মোট ১৯ কোটি টাকা বিল ভাউচার দেখিয়ে আত্মসাত করা হয়েছে। ইন-হাউজ ট্রেনিং কোর্সে ইন্টারনেট বিল বাবদ আত্মসাত হয়েছে এক কোটি ৭৭ লাখ ৮১ হাজার টাকা।

ইন-হাউজ ট্রেনিং কোর্সে মাত্র তিন সপ্তাহে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ২৭ কোটি ৮৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। ৬ দিনের ইন-হাউজ ট্রেনিং কোথাও ৩ দিনে, আবার কোথাও আধাবেলা করে ৪ থেকে ৬ দিনে  নাম মাত্র অনুষ্ঠিত হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলায় ৫০তম ব্যাচের টাকা ফেরত দেওয়া হলেও প্রতিবেদনে শত ভাগ ব্যয় দেখানো হয়। এভাবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে শত ভাগ ব্যয় দেখানো হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শত ভাগ প্রশিক্ষণ করানো সম্ভব হয়নি।

প্রশিক্ষণে উপস্থিত না থেকেও প্রায় এককোটি টাকা সম্মানী নিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কম্পিউটার অপারেটর ও অফিস সহায়কদের নির্ধারিত সম্মানীর অর্ধেক আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এভাবে প্রশিক্ষণের নামে ৯৬ কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। 

উল্লেখ্য, প্রকল্পটির মেয়াদ হচ্ছে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। প্রায় ৫০ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের জন্য এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

তবে এ পর্যন্ত একটি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমও স্থাপন সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন:

আইসিটি প্রকল্পে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি পর্যাপ্ত সহায়তার আহ্বান
ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি পর্যাপ্ত সহায়তার আহ্বান
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা