X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

গণপূর্তে পছন্দের প্রকৌশলী বসাতে ১১০ কোটি টাকা ঢালেন জি কে শামীম!

দীপু সারোয়ার
০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:১৭আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:৪৪

 গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন এবং জি কে শামীম ঠিকাদারি কাজে আধিপত্য বজায় রাখতে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীসহ অন্যান্য কর্মকর্তার নিয়োগ ও বদলিতে কলকাঠি নেড়েছে যুবলীগের কথিত নেতা ও ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীমের (জি কে শামীম) নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেনকে অধিদফতরে আনতেই ১৪ সদস্যের এই সিন্ডিকেট ঢেলেছে ১১০ কোটি টাকা। এরমধ্যে ২০ কোটি টাকা দিয়েছেন সাহাদাত নিজেই, আর জি কে শামীম একাই দেন ৩০ কোটি টাকা। সিন্ডিকেটভুক্ত অন্য ঠিকাদার ও তাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ৫ কোটি টাকা করে।

জি কে শামীমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুর্নীতির মামলার তদন্তে নেমে এ তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি সূত্র এ-ও জানিয়েছে, এই ১১০ কোটি কার বা কাদের পকেটে গেছে, সে বিষয়ে এখন তদন্ত হচ্ছে।

চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি সাহাদাত হোসেন অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন।

তবে এ বিষয়ে সরাসরি কোনও কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, জি কে শামীমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত চলছে। এ পর্যায়ে এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত বলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এবং ১১০ কোটি টাকার বিনিময়ে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি অবশ্য অস্বীকার করেছেন প্রকৌশলী সাহাদাত হোসেন। তার দাবি, এরকম কোনও কিছু ঘটেনি।

এই সিন্ডিকেটের সবচেয়ে প্রভাবশালী সদস্য জি কে শামীম কারাগারে আছেন। অন্য ১২ সদস্যের কেউই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

দুদকের তথ্য বলছে, জি কে শামীমের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটভুক্ত এই ১২ জন হলেন নূরানী কন্সট্রাকশনের খন্দকার গোলাম কবির, পদ্মা পায়েল গ্রুপের মিনারুল আলম চাকলাদার, হাছান অ্যান্ড সন্সের আজিজুর রহমান বাচ্চু, দ্য ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্ট লিমিটেডের প্রকৌশলী চঞ্চল বাবু, কুশলী নির্মাতা লিমিটেডের প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, ঠিকাদার রেজোয়ান মোস্তাফিজ, জামাল অ্যান্ড কোম্পানির মো. জামাল, বঙ্গ বিল্ডার্সের মো. লিটন, প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেডের প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম, দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের মো. এমদাদ, মীর আকতার কন্সট্রাকশনের মীর আক্তার ও মেসার্স মাসুদ অ্যান্ড কোম্পানি। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর নিয়োগের জন্য এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ৫ কোটি টাকা করে চাঁদা দেন।

গত ২০ সেপ্টেম্বর নিকেতন এলাকা থেকে গ্রেফতার হন জি কে শামীম। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর সহযোগীদেরসহ তার সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ওইদিন থেকেই সংস্থার পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্ব ৫ সদস্যের অনুসন্ধান দল মাঠে নামে। ২১ অক্টোবর জি কে শামীমের বিরুদ্ধে দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন মামলা করেন। এরপর দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ অক্টোবর জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠান ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত। ৩ নভেম্বর কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ৭ নভেম্বর দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হলেও জি কে শামীমকে ৫ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
‘সাহাদাতের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ নতুন নয়’
কুমিল্লার বাসিন্দা সাহাদাত হোসেন ১৯৮২ সালে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (সিভিল) পাস করে ওই বছরই কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, ২০০৪ সালে নির্বাহী প্রকৌশলী, ২০১৩ সালে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও ২০১৭ সালে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পদোন্নতি পেয়ে হন প্রধান প্রকৌশলী।
দুদক জানায়, প্রকৌশলী সাহাদাতের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। জালিয়াতি প্রমাণ হওয়ায় সাসপেন্ড হওয়ার ঘটনাও আছে।
২০০৮-২০০৯ সালে নোয়াখালী গণপূর্ত বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন সাহাদাত। ওই সময় ঘুষের বিনিময়ে প্লট বরাদ্দের জালিয়াতি প্রমাণ হওয়ায় দুদকে তার বিরুদ্ধে মামলা হয় [স্মারক নম্বর-দুদক/বি/০৭/০৯/নোয়খালী/অনু: ও তদন্ত ২/১৬৬৪৮/১ (১১)]। পরে ২০১০ সালের ৩০ আগস্ট ওই মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সাহাদাত দুই বছরের জন্য সাসপেন্ড হয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ-৪-এ নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকার সময় ঘুষ, দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে সাহাদাতের বিরুদ্ধে। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ভবন সুরক্ষা উন্নতিকরণ প্রকল্পের আওতায় বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে প্রায় ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
দুদক সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর দফতর, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়েও প্রকৌশলী সাহাদাতের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ জমা হয়েছে। সেসব নথিপত্রও হাতে পেয়েছে দুদক।

/এইচআই/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া