X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সবই কি খেয়ে ফেলবো?

উদিসা ইসলাম
০৩ জানুয়ারি ২০২০, ১০:৪২আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২০, ১০:৫১

সবই কি খেয়ে ফেলবো? আইনে সুনির্দিষ্টভাবে নিষেধ, তারপরেও শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব ধরনের মানুষ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শিকার করছেন বন্য ও সামুদ্রিক প্রাণী। পরিযায়ী পাখি থেকে শুরু করে হাঙরও ইদানিংকালে বিক্রি হচ্ছে বাজারে, শিকার হচ্ছে যত্রতত্র। প্রাণপ্রকৃতিবিদরা বলছেন, এসব প্রাণী নিধন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এটি জেনেও একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এই অপরাধ ঘটিয়ে চলেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, মাত্র একটি মনিটরিং টিম থাকায় নিরবচ্ছিন্নভাবে অপরাধীদের ধরা সম্ভব হয় না।

গত ৩০ ডিসেম্বর এএফপির ব্যুরো প্রধান শফিকুল আলম রাজধানীর শাহীনবাগ থেকে বিক্রির জন্য রাখা একটি হাঙরের ছবি তোলেন। এরপর সেটি ফেসবুকে দেওয়া হয়। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শাহীনবাগ থেকে বের হওয়ার পথে তুলকানা গার্মেন্টসের এর পাশে জটলা দেখতে পাই। সেখানে এক ব্যক্তি ৮শ’ টাকা কেজি করে ডলফিন বিক্রি করতে চান। আমি তাকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, এটি ডলফিন, তিনি কাওরানবাজার থেকে নিয়ে এসেছেন। ছবি তোলার পর মিলিয়ে দেখলাম এটি আসলে একটি হাঙর। বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, সেটি কেটে ভাগে বিক্রি করা যায় কিনা সেখানে অনেক মানুষ আগ্রহ নিয়ে সে আলাপ করছে। কেবল এক-দুইজন তরুণকে বলতে শুনলাম এটি বিক্রি নিষিদ্ধ। কিন্তু কেউ তাদের কথা কানে নেয়নি।

১ জানুয়ারি সকালে এফ এম তোফাজ্জ্বল হোসেন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের প্রিন্সিপাল কামারুজ্জামান তার ফেসবুক ওয়ালে শিকার করা একটি পাখির ছবি দেন। ছবিতে এক হাতে শিকারের বন্দুক, আরেক হাতে মৃত পাখি। পোস্ট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি জানতে এই শিক্ষকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি হাসতে হাসতে বলেন, ‘ও ওটা তেমন কিছু না..এমনি।’ একথা বলে কলটি কেটে দেন। পরবর্তীতে আবারও যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘পাখিটি আমি মারিনি।’ আপনার হাতে বন্দুক, আপনি মারেননি কিন্তু নিজের ওয়ালে পোস্ট দিয়েছেন বিষয়টি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন-প্রশ্নে আবারও তিনি হাসতে হাসতে বলেন, ‘এটি নিয়ে কিছু করবেন না। ওটা আমি মারিনি, এমনি।’

সবই কি খেয়ে ফেলবো? বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা)আইন,২০১২-তে পাখি বা পরিযায়ী পাখি হত্যা, ইত্যাদির দণ্ড উল্লেখ করে বলা আছে, আইনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা কোনও পাখি বা পরিযায়ী পাখি হত্যা করলে সর্বোচ্চ ১ (এক) বছরে পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ (এক) লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ ২ (দুই) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ২ (দুই) লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। চিতা বাঘ, লাম চিতা, উল্লুক, সাম্বার হরিণ, কুমির, ঘড়িয়াল, তিমি বা ডলফিন হত্যা করলে সর্বোচ্চ ৩ (তিন) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৩ (তিন)লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হাঙড়ের স্যুপ বিদেশে খুবই জনপ্রিয় হওয়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণীটি নিধনের চেষ্টা করে। সবধরনের হাঙর ধরা নিষিদ্ধ নয় কিন্তু যেহেতু এর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমছে সেহেতু ধরতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তিনি আরও বলেন, হাঙর বাস্তুসংস্থানের অংশ এবং প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রক। ফলে যদি এটি খেয়ে ফেলেন তাহলে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে।

পরিবেশ সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট হোসেন সোহেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,আমাদের চারপাশে সবচেয়ে সংকটাপন্ন রয়েছে মাটিতে বাস করা বন্যপ্রাণী। এরপরই আছে পাখি। বনের বাইরে গ্রামীণ পরিবেশে বা ঝোপঝাড়ে বাস করা কিংবা লুকিয়ে থাকা প্রাণিরা সবচেয়ে হুমকির মুখে। কারণ আমরা তাদের দেখলেই টেনে হিঁচড়ে বের করে পিটিয়ে মেরে ফেলি, নিজেদের উদরপূর্তির চিন্তা করি। যেটা দিনকে দিন আমাদের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দিনকে দিন প্রকৃতির ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে এখন অনেক সচেতনতা বাড়ানো দরকার। আর যাই হোক নিজেদের সাথে সব প্রাণ প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে যা কিনা দিন শেষে আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে।

বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ইউনিটের ইন্সপেক্টর অসীম মল্লিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যদি আমাদের জনসংখ্যার একহাজার জনও এধরনের অপরাধে যুক্ত থাকে তাহলে এক হাজার পাখি মারা যাবে। বিশেষ পাখির ক্ষেত্রে মারা যাওয়ার সংখ্যা ভয়াবহ। তিনি বলেন,আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আমরা আজ ভৈরবে আছি। আমাদের মনিটরিং টিম একটিই। ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় জেলায় গিয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। এধরনের অপরাধের খবর পেলে চেষ্টা করি সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে। এর ফাঁকেও এই অপরাধগুলো ঘটছে। হাঙরের বিষয়টি আমি শুনেছি। কাওরানবাজার থেকে আমরা এর আগে কচ্ছপসহ আরও কিছু প্রাণী জব্দ করেছিলাম। গভীর সমুদ্রের প্রাণীর সঙ্গে আসলে কী ঘটছে তা দেখভালের লোক নেই। ফলে প্রায় নির্বিঘ্নে ঢাকায় এনে বড় মাছ হিসেবে বিক্রি করে দেয় দুর্বৃত্তরা। যদিও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২তে হাঙড়ের কয়েকটা প্রজাতি শিকার নিষিদ্ধ।

আমরা কি সবই খেয়ে ফেলবো-প্রশ্ন তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরোজ জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পরিবেশে খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট হলে ভারসাম্য নষ্ট হবে। এতে আমরা সবচেয়ে বেশি  বিপদে পড়বো। প্রাকৃতিকভাবে মশা ধ্বংস করে যে প্রাণী, সেটা আমাদের কারণে বিলুপ্ত হওয়ায় এখন ওষুধ দিয়েও মশা নিধন করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফল আমরা ভোগ করছি। তিনি আরও বলেন,অতিথি পাখিরা নানাভাবে আমাদের উপকার করে। তারা যে এলাকায় আসবে, জীবন যাপন করবে সেসব জলাশয়ে তাদের বর্জ্য ফেলবে এবং সেসব পানির উৎপাদনশীলতা বেড়ে যাবে। কিন্তু তাদের যদি আমরা মেরে ফেলি এবং তারা এই এলাকা ত্যাগ করে তাহলে আমরা প্রাকৃতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবো। বিষয়গুলো প্রচার করা খুব জরুরি। একইসঙ্গে এসব অপরাধের ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে।

/ইউআই/এমআর/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা